ফতুল্লায় স্ত্রীর পরকীয়ার জেরে সুমন হত্যা: স্ত্রীসহ ছয়জন গ্রেপ্তার

0
ফতুল্লায় স্ত্রীর পরকীয়ার জেরে সুমন হত্যা: স্ত্রীসহ ছয়জন গ্রেপ্তার

প্রেসনিউজ২৪ডটকমঃ নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় সুমন খলিফা নামে ৩৫ বছর বয়সী যুবককে কুপিয়ে খুনের ঘটনায় ছয়জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। পুলিশ বলছে, স্ত্রীর পরকিয়া প্রেমের জেরে হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন ওই যুবক। এ ঘটনায় পুলিশ নিহতের স্ত্রী বাউল শিল্পী সোনিয়া আক্তারকেও (২২) গ্রেপ্তার করেছে।

বুধবার (৩ ডিসেম্বর) বিকেলে নিজ কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এই তথ্য জানান জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মিজানুর রহমান মুন্সী। গ্রেপ্তার অপর ব্যক্তিরা হলেন: ফতুল্লার কাশীপুর ইউনিয়নের উত্তর নরসিংহপুর এলাকার আবুল কাশেম মাস্টারের ছেলে মেহেদী হাসান ওরফে ইউসুফ (৪২), তার শ্যালক চর কাশীপুরের আব্দুর রাজ্জাকোর ছেলে আব্দুর রহমান (২৮), সহযোগী উত্তর নরসিংহপুরের প্রয়াত বাদশার ছেলে বিল্লাল হোসেন (৫৮), সিদ্ধিরগঞ্জের জালকুড়ির আব্দুল হাই হাওলাদারের ছেলে আলমগীর হাওলাদার (৪৫) ও একই এলাকার দিদার বক্সের ছেলে নান্নু মিয়া (৫৫)।

মঙ্গলবার রাতে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। এ ঘটনায় মো. মামুন নামে আরও একজন আসামি পলাতক রয়েছে বলেও জানিয়েছে পুলিশ। গত ১ ডিসেম্বর সকালে মধ্য নরসিংহপুর এলাকার সড়কের উপর থেকে সুমনের রক্তাক্ত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। তার শরীরে একাধিক ধারালো অস্ত্রের আঘাতের চিহ্ন ছিল। নিহত সুমন বরিশালের আগৈলঝড়ার আন্দারমানিক গ্রামের মন্টু খলিফার ছেলে। স্ত্রী সোনিয়া আক্তারকে নিয়ে তিনি সাইনবোর্ড এলাকায় ভাড়া বাসায় থাকতেন। ঘটনার দিন রাতেই ফতুল্লা মডেল থানায় অজ্ঞাত আসামিদের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন নিহতের বাবা মন্টু খলিফা।

এসপি মিজানুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, পুলিশ তদন্তে নিহতের স্ত্রী ও তার পরকিয়া প্রেমিকের জড়িতহওয়ার প্রমাণ পেয়ে তাদের গ্রেপ্তার করে। পরে তাদের দেওয়া তথ্যমতে অপর আসামিদেরও গ্রেপ্তার করা হয়। এটি একটি পরিকল্পিত হত্যকাণ্ড। পুলিশ আসামিদের দেখানো তথ্য অনুযায়ী ঘটনাস্থল থেকে একটি চাপাতি ও একটি সুইচ গিয়ার চাকুও উদ্ধার করেছে বলেও জানান তিনি। এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জেলা পুলিশ সুপার জানান, নিহত সুমন খলিফা বেকার ছিলেন। তার স্ত্রী সোনিয়া আক্তার বিভিন্ন অনুষ্ঠানে গান গেয়ে জীবিকা নির্বাহ করতেন।

গত ৩০ নভেম্বর রাতে সুমন ও সোনিয়া বাসা থেকে বেরিয়ে পঞ্চবটি এলাকায় একটি গানের অনুষ্ঠানে যান। রাত আনুমানিক ১১টার দিকে স্ত্রীকে অনুষ্ঠানে রেখে বেরিয়ে যান। “দুইমাস আগে এক গানের অনুষ্ঠানে পরিচয়ের সূত্র ধরে সোনিয়ার সঙ্গে গ্রেপ্তার মেহেদী হাসানের প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। বিভিন্ন সময় সোনিয়া মেহেদীর কাছ থেকে টাকা ধারও নিতেন এবং নিয়মিত মোবাইলে কথা বলতেন দু’জন। তাদের প্রেমের সম্পর্কের বিষয়টি নিহত সুমন জেনে যাওয়ায় সংসারে কলহের সৃষ্টি হয়। পরে সুমনকে হত্যার পরিকল্পনা করেন আসামিরা”, সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়।

মামলাটির তদন্তকারী কর্মকর্তা ফতুল্লা মডেল থানার উপপরিদর্শক (এসআই) ইয়াসিন আরাফাত বলেন, “এটি একটি ক্লু-লেস হত্যা মামলা ছিল। তথ্য ও প্রযুক্তির সহায়তায় হত্যা রহস্য উদঘাটন ও আসামিদের শনাক্ত করতে সক্ষম হই। পরে হত্যার পরিকল্পনাকারী ও মূল আসামি মেহেদী হাসানসহ ছয়জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। মেহেদী এই হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনার সঙ্গে সোনিয়ার জড়িত থাকার বিষয়ে স্বীকারোক্তি দেন বলে তাকেও গ্রেপ্তার করা হয়।

ঘটনার রাতে টাকা ধার দেওয়ার কথা বলে পঞ্চবটি এলাকা থেকে সুমনকে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় তুলে নেন মেহেদী হাসান। পরে তাকে মধ্য নরসিংহপুর এলাকার একটি পরিত্যক্ত জায়গায় নিয়ে ধারালো অস্ত্রের আঘাতে সুমনকে খুন করা হয় বলে জানান এ পুলিশ কর্মকর্তা। এদিকে, বুধবার দুপুরে আদালতে মেহেদী ও তার শ্যালক আব্দুর রহমান আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন বলেও জানান এসআই ইয়াসিন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here