ফতুল্লায় প্রতিশোধ নিতে শিশুকে অপহরণের পর হত্যা, গ্রেপ্তার ২

0
ফতুল্লায় প্রতিশোধ নিতে শিশুকে অপহরণের পর হত্যা, গ্রেপ্তার ২

প্রেসনিউজ২৪ডটকমঃ নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় বাবার ওপর প্রতিশোধ নিতে তার সাত বছরের শিশু পুত্র মুস্তাকিনকে অপহরণ করে হত্যা ও লাশ গুমের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় দুই আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। বুধবার (১৯ মার্চ) জেলা ও ফতুল্লা মডেল থানা পুলিশ সূত্রে এ তথ্য জানা যায়।

গ্রেপ্তারকৃত আসামিরা হলেন- ফতুল্লা থানার লামাপাড়া দরগাহ বাড়ি মসজিদ সংলগ্ন সালাম মিয়ার ভাড়াটিয়া ওবায়েদউল্লাহ বাবুর ছেলে তানজিল (২৪) এবং একই বাড়ির ভাড়াটিয়া মৃত ফরজুল ইসলামের ছেলে নুর মোহাম্মদ ওরফে শাহ আলম (২০)। পুলিশ জানায়, গ্রেপ্তারকৃত আসামিরা ও নিহত শিশুর পরিবার পাশাপাশি ভাড়া বাসায় বসবাস করতো। একটি মোবাইল নিয়ে তানজিলের সঙ্গে নিহত শিশুর বাবা হাশিম মিয়ার ঝগড়া হয়।

এতে তানজিল ক্ষিপ্ত হয়ে তার সহকারী নুর মোহাম্মদ ওরফে শাহ আলমকে সঙ্গে নিয়ে শিশুটিকে অপহরণ ও হত্যার পরিকল্পনা করে। পরিকল্পনা অনুযায়ী, গত ৫ জানুয়ারি সন্ধ্যায় ফতুল্লা ডিআইটি মাঠ থেকে ৪৫০ টাকা দিয়ে একটি সুইচ গিয়ার কেনে তারা। এরপর তানজিল প্রথমে মুস্তাকিনকে ২০ টাকা দেয় এবং চিপস কিনে দিয়ে অটোরিকশায় করে ফতুল্লা গুদারাঘাট হয়ে কেরানীগঞ্জের কাওটাইল এলাকায় নিয়ে যায়।

সেখানে বাইতুল জান্নাত জামে মসজিদের পেছনে ঝোপের মধ্যে নিয়ে গিয়ে শিশুটির মুখে কস্টটেপ পেঁচিয়ে মাটিতে শুইয়ে দেয় নুর মোহাম্মদ। এরপর তানজিল তার সঙ্গে থাকা সুইচ গিয়ার দিয়ে শিশুটিকে একাধিকবার ছুরিকাঘাত করে মৃত্যু নিশ্চিত করে ঘটনাস্থলেই ফেলে রেখে লামাপাড়ায় নিজ বাসায় ফিরে যায়। শিশুটিকে না পেয়ে তার পরিবার নিখোঁজের বিষয়ে এলাকায় মাইকিং করে। ওই সময় আসামিরাও নিজেদের সন্দেহ এড়াতে মাইকিংয়ে অংশ নেয়। এরপর দু’তিন দিন পর আসামিরা তাদের নিজ গ্রামের বাড়ি ময়মনসিংহে চলে যায়।

ঘটনার ১৩ দিন পর ১৮ জানুয়ারি দুপুরে লোকমুখে জানতে পেরে কেরানীগঞ্জ থানা পুলিশ লাশটি উদ্ধার করে। পরিচয় না পাওয়ায় শিশুটির লাশ অজ্ঞাতনামা হিসেবে দাফন করা হয়। পরবর্তীতে ২০ জানুয়ারি কেরানীগঞ্জ থানায় পুলিশ বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলা দায়ের করে। অন্যদিকে শিশুটির বাবা ৬ জানুয়ারি ফতুল্লা মডেল থানায় নিখোঁজ ডায়েরি করেন। পরে সন্তানের সন্ধান না পেয়ে ১৪ ফেব্রুয়ারি তিনি ফতুল্লা মডেল থানায় একটি অপহরণ মামলা দায়ের করেন।

ওই মামলার তদন্তে নেমে পুলিশ তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় হত্যাকাণ্ডের ৭২ দিন পর ১৮ মার্চ সকাল ৯টার দিকে ময়মনসিংহ জেলার নান্দাইল থানার সামনে থেকে নুর মোহাম্মদ ওরফে শাহ আলমকে গ্রেপ্তার করে। পরে দুপুর ১২টার দিকে একই জেলার ফুলবাড়িয়া থানার কাচিজোড়া এলাকা থেকে তানজিলকে গ্রেপ্তার করা হয়। এরপর তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে রাত ৮টার দিকে ফতুল্লা থানার লামাপাড়ায় তানজিলের বাসা থেকে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত সুইচ গিয়ারটি উদ্ধার করে পুলিশ।

এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক সার্কেল) হাসিনুজ্জামান জানান, শিশুটির বাবার ওপর প্রতিশোধ নিতেই তাকে অপহরণ করে নদীর ওপারে কেরানীগঞ্জ থানার কাওটাইল এলাকায় নিয়ে হত্যা করা হয়। পরে সেখানকার পুলিশ লাশ উদ্ধার করলেও পরিচয় না পাওয়ায় অজ্ঞাতনামা হিসেবে দাফন করে এবং পুলিশ বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলা দায়ের করে।
তিনি আরও জানান, ফতুল্লা থানায় প্রথমে শিশুটির বাবা নিখোঁজ ডায়েরি করেন।

পরবর্তীতে অপহরণ মামলা দায়ের করা হয়। তদন্তের মাধ্যমে পুলিশ নিশ্চিত হয়ে ময়মনসিংহ থেকে তানজিল ও নুর মোহাম্মদ ওরফে শাহ আলমকে গ্রেপ্তার করে। পরে তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে কেরানীগঞ্জ থানার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে নিহত শিশুর পরিবার থানায় গিয়ে পুলিশের কাছে থাকা জামা-কাপড় দেখে নিহত মুস্তাকিনের পরিচয় নিশ্চিত করেন। গ্রেপ্তারকৃত আসামিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের প্রক্রিয়া চলছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

 

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here