প্রেসনিউজ২৪ডটকমঃ মনিরুল ইসলাম মনির: নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় আলোচিত সুরুজ মিয়া হত্যাকাণ্ডের মূল আসামিসহ এজহারনামীর চার আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব। গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- প্রধান আসামি কাশিপুরের মো. সফর আলি মাঝির ছেলে আলাউদ্দিন ওরফে হীরা (৩৫), পশ্চিম ভোলাইলের আওলাদ হোসেনের ছেলে মো. আলআমিন(২২), একই এলাকার মো. জাফরের ছেলে মো. রাসেল (২০) ও মো. সেলিমের ছেলে মো. সানি।
রবিবার (৩০ জুন) সকালে সিদ্ধিরগঞ্জের আদমজীনগরে র্যাব-১১ সদর দপরে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এই তথ্য জানান সিইও লেফটেন্যান্ট কর্নেল তানভীর মাহমুদ পাশা। র্যাব জানায়, র্যাব-১১ এর একটি আভিযানিক দল শনিবার (২৯ জুন) নারায়ণগঞ্জ সদরের সৈয়দপুর থেকে সুরুজ মিয়া হত্যাকাণ্ডের প্রধান আসামি আলাউদ্দিন ওরফে হীরাকে গ্রেপ্তার করে। পরবর্তীতে তার দেওয়া তথ্যমতে অপর তিন আসামিকে গাজীপুরের কালিয়াকৈর থানার রতনপুর এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে।
ভিকটিম সুরুজ মিয়ার সাথে প্রধান আসামী আলাউদ্দিন ওরফে হীরা এবং তার ভাই সালাউদ্দিন ওরফে সালুর আগে থেকেই থেকেই বিরোধ ছিল। ঘটনার ১০-১৫ দিন আগে গ্রেপ্তারকৃত আসামী হীরা ও তার ভাই সালু এলাকার একটি নির্মাণাধীন ভবনে গিয়ে ভবনের মালিকের নিকট চাঁদা দাবি করে। ওই ভবনের মালিক এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তি হিসেবে ভিকটিম সুরুজ মিয়ার কাছে বিচার দেন।
ভিকটিম আসামী হীরা ও সালুর বাবাকে বিষয়টি অবহিত করেন এবং হীরা ও সালুকে চাঁদাবাজী থেকে বিরত থাকতে বলেন। এতে ক্ষিপ্ত হন হীরা ও সালু। পরবর্তীতে গত ২৭ জুন দুপুরে সুরুজ মিয়া আলী পাড়া জামে মসজিদে থাকাকালীন আলাউদ্দিন ওরফে হীরার নেতৃত্বে অজ্ঞাতনামা ২০-২৫ জন প্রথমে ভিকটিমের বড় ছেলে রাজু (৪৩) এবং ছোট ছেলে জনি (৪১)-এর পথরোধ করে অতর্কিতভাবে আক্রমণ করে। হামলাকারীদের প্রত্যেকের হাতে রামদা, বগিদা, ছোরা,লোহার রড ছিল।
একপর্যায়ে গ্রেপ্তারকৃত আসামি হীরা হাতে থাকা রামদা দিয়ে রাজুর মাথায় কোপ দিতে গেলে রাজু হাত দিয়ে ঠেকাতে গেলে তার হাতের কনুয়ের উপর আঘাত লেগে গুরুতর রক্তাক্ত জখম হন। অন্যান্য আসামিরাও রাজু ও জনিকে এলোপাতাড়িভাবে আঘাত করতে থাকে। নামায শেষে সুরুজ মিয়া ঘটনার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে এলে তার উপরেও হামলা চালায় সন্ত্রাসীরা।
আত্মরক্ষার্থে সুরুজ মিয়া হামলাকারীদের একজনের হাত থেকে রামদা ছিনিয়ে নিলেও সন্ত্রাসীরা তার মাথা, হাতসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে জখম করে। পরবর্তীতে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
গ্রেপ্তারকৃত আসামি আলাউদ্দিন ওরফে হীরার বিরুদ্ধে ফতুল্লা থানায় হত্যাচেষ্টা, গুরুতর জখম, ডাকাতি, চুরিসহ কমপক্ষে দশটি মামলা ও বেশ কয়েকটি অভিযোগ রয়েছে। অপর দুই আসামি মো. আলআমিন ও মো. রাসেলের বিরুদ্ধেও একই থানায় মাদক, নারী ও শিশু নির্যাতনের দায়ে একাধিক মামলা ও জিডি রয়েছে। গ্রেপ্তারকৃতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন বলে জানায় র্যাব।
এছাড়া অন্যান্য আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত থাকবে বলেও জানানো হয়।প্রসঙ্গত, মামলার অপর দুই এজাহারনামীয় আসামী বাপ্পী ও জামালকে শনিবার (২৯ জুন) দুপুরে গ্রেপ্তার করে ফতুল্লা থানা পুলিশ। এই নিয়ে চাঞ্চল্যকর এই হত্যাকাণ্ডে গ্রেপ্তারের সংখ্যা দাঁড়ালো ছয়ে। এর আগে শুক্রবার (২৮ জুন) দিবাগত রাতে নিহতের ছেলে মুন্না বাদী হয়ে সন্ত্রাসী আলাউদ্দিন ওরফে হীরা, সালু, তমাল, সফর আলিসহ ২১ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আরো ১০-১২ জনকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
নিহত সুরুজ মিয়া ফতুল্লার কাশিপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের অর্থ সম্পাদক। এ ছাড়া তিনি আলীপাড়া জামে মসজিদ কমিটির সভাপতি ছিলেন।