আড়াইহাজারে অটোরিক্সা চালক শাকিল (১৮) হত্যার রহস্য উদঘাটন

0

প্রেসনিউজ২৪ডটকমঃনিজস্ব সংবাদদাতা: নারায়ণগঞ্জ জেলার আড়াইহাজারে বালিয়াপাড়া এলাকার অটোরিক্সা চালক শাকিল (১৮) হত্যাকান্ডের মূল রহস্য উদ্ঘাটন সহ ঘটনার সাথে জড়িত অজ্ঞাতনামা আসামীদের গ্রেফতার করেছে পিবিআই নারায়ণগঞ্জ জেলা। ২০ আগস্ট বেলা ১২ টায় পিবিআই নারায়ণগঞ্জ জেলা শাখা এক প্রেস ব্রিফিংয়ে গণমাধ্যমে এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।

প্রেস ব্রিফিংয়ে পিবিআই পুলিশ সুপার মনিরুল ইসলাম জানান , গত ১১/১১/২০১৮ খ্রিঃ তারিখ বিকাল সাড়ে ৫ টায় হইতে ১২/১১/২০১৮ খ্রিঃ তারিখ সকাল ১০:০০ ঘটিকা সময়ের মধ্যে যে কোন সময় অজ্ঞাতনামা আসামীরা তিন চাকা বিশিষ্ট অটো রিক্সা ছিনতাই করার লক্ষ্যে কিংবা অন্য কোন কারণে বাদীর ভাই ভিকটিম শাকিল কে মোবাইল ফোনে তার বাড়ী হইতে সু-কৌশলে বাহির করিয়া আনিয়া অপহরণ করত। তাকে হত্যা করে লাশ গুম করার জন্য সোনারগাঁ থানাধীন গজারিয়া পাড়া রাস্তার পাশে আলমগীরের বাড়ীর পাশে ফাঁকা জায়গায় ফেলে তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোন ও অটো রিক্সা নিয়ে যায়।

উক্ত ঘটনায় ভিকটিমের ভাই মোঃ সজিব বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামীদের বিরুদ্ধে সোনারগাঁ থানার মামলা নং-৩০, তারিখ- ১৩/১১/২০১৮ খ্রিঃ , ধারা- ৩০২/২০১/৩৪ পেনাল কোড রুজু করেন। সোনারগাঁ থানা পুলিশ মামলাটি গত ১৩/১২/২০১৮ খ্রিঃ তারিখ হতে ০৬/০১/২০১৯ খ্রিঃ তারিখ পর্যন্ত তদন্ত করা অবস্থায় পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স, ঢাকার নির্দেশে মামলাটির তদন্তভার পিবিআই, নারায়ণগঞ্জ জেলা এর নিকট ন্যস্ত হইলে পিবিআই মামলাটির তদন্তভার গ্রহন করে গত ১৩/০১/২০১৯ খ্রিঃ তারিখে পুলিশ পরিদর্শক (নিরস্ত্র) আলী আকবর হোসেন কে তদন্তকারি কর্মকর্তা নিয়োগ করা হয়।

পিবিআই তদন্তকালে পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মনিরুল ইসলাম (পিপিএম) এর তদারকি ও দিক নির্দেশনায় গতানুগতিক তদন্তের পাশাপাশি বিজ্ঞান ভিত্তিক ও তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় পিবিআই নারায়ণগঞ্জ জেলা, দীর্ঘ ০১ বছর ০৭ মাস পর চাঞ্চল্যকর ও নির্মম অটো রিক্সা চালক শাকিল (১৮) হত্যাকান্ডের মূল রহস্য উদ্ঘাটন সহ ঘটনার সাথে জড়িত অজ্ঞাতনামা আসামীদের গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়।

মামলাটি তদন্তকালীন সময়ে জানা যায় অজ্ঞাতনামা আসামীরা বাদীর ভাই শাকিলকে হত্যা করে তার ব্যবহৃত অটো রিক্সা ও মোবাইল নিয়ে যায়। তথ্য প্রযুক্তি ও স্থানীয় সূত্রকে কাজে লাগিয়ে মোবাইল ব্যবহারকরীর নিকট মোবাইল বিক্রেতা আসামী মোঃ আমিনুল ইসলামকে গত ১৯/০৮/২০২০ তারিখ রূপগঞ্জ থানা এলাকা হতে গ্রেফতার করা হয়।

তাকে জিজ্ঞাসাবাদে তার সংগীয় আসামী মোঃ আরিফ চৌধুরীকে একই তারিখে রূপগঞ্জ থানা এলাকা হতে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারকৃত আসামী মোঃ আমিনুল ইসলাম ও মোঃ আরিফ চৌধুরীকে জিজ্ঞাসাবাদে তাদের নিকট হতে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে ডিসিস্ট শাকিলের ব্যবহৃত অটোরিক্সাটি আসামী মোঃ আরব আলীর হেফাজত হতে উদ্ধার করা হয় এবং আসামী আরব আলীকে গ্রেফতার করা হয়।

গ্রেফতারকৃত আসামী মোঃ আমিনুল ইসলাম ও আরিফ চৌধুরীকে জিজ্ঞাসাবাদে তারা জানায়, ঘটনার ৭/৮ দিন পূর্বে সোনারগাঁ থানাধীন গাউছিয়া স্ট্যান্ডে অটোরিক্সা চালক শাকিলের সাথে পরিচয় হয় এবং শাকিলের মোবাইল নম্বর তারা সংগ্রহ করেন। শাকিলের সাথে তারা মাঝে মধ্যেই মোবাইলে কথা বলত।

আসামীরা উভয়ই যুক্তি করে যে, শাকিলের ব্যবহৃত অটোরিক্সাটি তারা চুরি করে অন্যত্র বিক্রি করে দিবে। আসামী আরিফ চৌধুরী প্রেম করে বিবাহ করায় তার পরিবারের লোকজন তাকে বাসা হতে বের করে দেয়ায় আর্থিক সংকটে পরে। এছাড়া আসামী আমিনুল ডিসিষ্ট শাকিলের অটোরিক্রাটি দেখে লোভ সামলাতে না পারায় উভয় মিলে শাকিলের ব্যবহৃত অটোরিক্সাটি যে করেই হোক ছিনিয়ে নেয়ার জন্য পরিকল্পনা করতে থাকে। একপর্যায়ে মামলার ঘটনার দিন আসামী আরিফ তার ব্যবহৃত মোবাইল নম্বর দিয়ে (ডিসিস্ট) শাকিলের ব্যবহৃত মোবাইল নম্বরে ফোন করে গাউছিয়া আসতে বলে।

শাকিল তার অটোরিক্রা নিয়ে মামলার ঘটনার দিন সন্ধ্যায় গাউছিয়া আসার পর তারা দুইজন যাত্রীবেশে শাকিলের অটোরিক্সা উঠে তাকে নিয়ে সোনারগাঁ থানাধীন তাজমহল এলাকায় যাওয়ার কথা বলে রওয়ানা করে। মামলার ঘটনাস্থলে গেলে আসামীরা পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী ডিসিস্ট শাকিলকে অটোরিক্সা থেকে নামিয়ে ডিসিস্ট শাকিলের গলায় থাকা মাফলার ধরে আসামীরা ফাঁস দিয়ে শ্বাসরোধ করে অটোরিক্সা থেকে ফেলে দিয়ে নাকে মুখে আঘাত করে তাকে হত্যা করে। হত্যা নিশ্চিত করার জন্য ডিসিস্ট শাকিলের দুই চোখে রক্তাক্ত আঘাত করে।

গ্রেপ্তারকৃত আসামী মোঃ আমিনুল ইসলাম ও আরিফ চৌধুরী ডিসিস্ট শাকিলের পকেটে থাকা টাকা, মোবাইল এবং শাকিলের ব্যবহৃত অটোরিক্সা নিয়ে দ্রুত ঘটনাস্থল হতে পালিয়ে যায়।

আসামী আমিনুল ইসলামের চাচাতো ভগ্নিপতি আসামী আরব আলী পেশাগতভাবে চোরাই অটোরিক্সা কম দামে ক্রয় করে বিক্রি করে থাকে তাই আসামী আমিনুল ও আসামী আরিফ চৌধুরী ডিসিস্ট শাকিলের ব্যবহৃত অটোরিক্সা টি বিক্রির উদ্দেশ্যে নিয়ে আসলে আসামী আরব আলীর চোরাই অটোরিক্সা জানা সত্বেও ক্রয় করে। আসামী আরব আলী ডিসিস্ট শাকিলের অটোরিক্রাটি নতুন হওয়ায় কারো কাছে বিক্রি না করে নিজেই ব্যবহার করতে থাকে।

উক্ত অটোরিক্সাটি আসামী আরব আলীর হেফাজত হতে উদ্ধার করা হয়। আসামী আমিনুল ডিসিষ্ট শাকিলের ব্যবহৃত মোবাইলটি তার পার্শ্বের রুমের ভাড়াটিয়া সানির মা সোহানার নিকট ৪০০/- টাকায় বিক্রয় করে। উক্ত মোবাইলটি উদ্ধারপূর্বক জব্দ করা হয়েছে। গ্রেফতারকৃত আসামী ১। মোঃ আমিনুল ইসলাম ২। আরিফ চৌধুরী সূত্রে বর্ণিত মামলার ডিসিস্ট শাকিলকে হত্যার বিষয়ে নিজেদের জড়িয়ে স্বেচ্ছায় এবং আসামী ৩। আরব আলী লুন্ঠিত অটোরিক্রা কম দামে ক্রয় করার বিষয়ে স্বেচ্ছায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদানের জন্য ইচ্ছা পোষন করায় তাদের জবানবন্দি বিজ্ঞ আদালতের মাধ্যমে লিপিবদ্ধের ব্যবস্থা গ্রহন করা হইবে।

এ বিষয়ে পিবিআই নারায়ণগঞ্জ জেলার পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মনিরুল ইসলাম (পিপিএম) জানান অপরাধ তদন্তে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি অবলম্বন করায় পিবিআই এখন সাফল্যের শীর্ষে অবস্থান করছে। উপরন্তু পিবিআই নারায়ণগঞ্জ জেলায় একটি ক্রাইমসিন ভ্যান যুক্ত হওয়ায় খুন, ডাকাতি, ধর্ষণ সহ চাঞ্চল্যকর মামলার রহস্য উদ্ঘাটনে নব দিগন্তের সূচনা করবে এবং পিবিআই এর সাফল্যের ধারাবাহিকতা বজায় থাকবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

এজাহার থেকে জানা যায় পিবিআই কর্তৃক মামলা গ্রহন করে ১৩/০১/১৯ খ্রিঃ। মামলার বাদী নিহতের ভাই আড়াইহাজারের বালিয়াপাড়া এলাকার মোঃ আবু বকর সিদ্দিকের ছেলে মোঃ সজিব (২৮) । এজাহার নামীয় আসামার সংখ্যা অজ্ঞাতনামা।সন্দিগ্ধ আসামীঃ মোঃ বিপ্লব (৩৮) কে সোনারগাঁ থানা পুলিশ গ্রেফতার করে। বর্তমানে জামিনে আছে।

ফৌঃ কাঃ বিঃ ১৬৪ ধারায় জবানবন্দীকৃত আসামীরা হলেন, তারাব পৌরসভার কান্দাপাড়া এলাকার হারিচ চৌধুরীর ছেলে মোঃ আরিফ চৌধুরী, সরাইল থানার বড়ইছড়া এলাকার মৃত- মুর্তুজা আলীর ছেলে মোঃ আমিনুল ইসলাম (২৫), একই থানার বৈসর এলাকার মৃত- মারুল্লা ছেলে মোঃ আরব আলী (২৩)।তাদের দুই জনের বর্তমান ঠিকানা তারাব পৌরসভার আটিপাড়া। ভিকটিমের ব্যবহৃত লুন্ঠিত মোবাইল ও অটোরিক্সা উদ্ধার করা হয়েছে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here