বিদ্যুৎগতিতে ছড়িয়ে পড়ছে আলুতে নাভীদশা ॥ লেইট ব্লাইটে নি:স্ব গৌরীপুরের ১হাজার ৩শ কৃষক !

0
বিদ্যুৎগতিতে ছড়িয়ে পড়ছে আলুতে নাভীদশা ॥ লেইট ব্লাইটে নি:স্ব গৌরীপুরের ১হাজার ৩শ কৃষক !

প্রেসনিউজ২৪ডটকমঃ মো: মাহফুজুর রহমান ( গৌরীপুর) ময়মনসিংহ প্রতিনিধি : সন্ধ্যায় সবুজ, রাত পেরোলেই হলুদাভ, কালচে রং ধারণ করে মরছে আলু গাছ। এ যেন বিদ্যুৎগতিকেও হার মানাচ্ছে লেইট ব্লাইট। যা স্থানীয় কৃষকের নিকট ‘নাভীদশা’ রোগ নামে পরিচিত। এ রোগে ‘চল্লিশা ও বার্মিজ’ জাতের আলু খেত আক্রান্ত হওয়ায় ১হাজার ৩শ কৃষক নি:স্ব হয়ে পড়েছেন। পুঁজি হারিয়েছেন অর্ধশত ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী।

অসহায় মানুষের স্বপ্ন ভেঙ্গে দু:স্বপ্নে পরিণত হয়েছে আলু খেত ও ফসল হারিয়ে আহাজারী চলছে ময়মনসিংহের গৌরীপুরে। বৃহস্পতিবার সরজমিনে গিয়ে কলতাপাড়া আলু আড়তে দেখা হয় ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সাইফুল ইসলামের। তিনি উপজেলার চুড়ালি গ্রামের জসিম উদ্দিনের পুত্র। তিনি জানান, ১১লাখ টাকা মাঠে বিনিয়োগ করে ছিলেন। সাত একর জমির আলু খেতের আলু কৃষকের নিকট থেকে কিনেন তিনি। খেতে যে আলু আছে, তা উত্তোলন খরচও উঠবে না। তাই আলু উত্তোলনের আশা ছেড়ে দিয়েছেন। আরেক ক্ষুদে ব্যবসায়ী মাহাবুব আলম

তিনি আজিম উদ্দিনের পুত্র। তিনি জানান, নিজে ৭০শতাংশ জমিতে আলু চাষ করেছিলেন। ১৫৫শতাংশ জমির আলু কিনে ছিলেন। এসব জমির মালিককে আরও ২মাস আগেই প্রতি ১০শতাংশের আলুর জন্য ১২হাজার থেকে ১৫হাজার টাকা পর্যন্ত দিয়েছেন। এখন এসব ক্ষেতে মাত্র ৭-৮মন আলু পাওয়া যাচ্ছে। পূর্বে ১০শতাংশে ১৫মন থেকে ২২-২৫মন পর্যন্ত আলু পাওয়া গেছে। উত্তোলন খরচ প্রতি ১০শতাংশে ২হাজার ৫শ টাকা। প্রতি শতাংশে ৭ থেকে ৮হাজার টাকা এখন লোকশান যাচ্ছে।

কিছু মানবিক কৃষক প্রতি ১০শতাংশে ২-৩হাজার টাকা ফেরত দিচ্ছেন, আবার অনেকে দিচ্ছেন না। এদিকে চুড়ালী গ্রামের কৃষক আব্দুল মোতালেব জানান, প্রতি কাঠা (১০শতাংশ) জমির উত্তোলন খরচ ৩হাজার টাকা। ওষুধ গিয়ে দেড় থেকে ২হাজার টাকা। রোপন ও আলুর খরচ ৮হাজার টাকা। আলু বিক্রি হচ্ছে ৭ থেকে ৯হাজার টাকা। লোকশান গুনতে হচ্ছে ৩ থেকে ৫হাজার টাকা। অনুরূপভাবে কৃষক মারফত আলী ৩০শতাংশ, আব্দুল সালাম ৮৫শতাংশ, রবিকুল ইসলাম ৫৫শতাংশ, মতি মিয়া ৬০শতাংশ, আব্দুর রশিদ ১৪০শতাংশ, মোমেন মিয়া ৫৭শতাংশ, আবুল কাসেম ৬০শতাংশ, হেলাল উদ্দিন ২০শতাংশ, আজিজুল হক মুনশী ১৩৫শতাংশ জমিতে আলু রোপন করে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন।

কৃষক মোমেন মিয়ার স্ত্রী আসমা আক্তার জানায়, সন্ধ্যায় আলু গাছগুলো তরতাজা দেখে গেছি। সকালে এসে দেখি কয়েকটা গাছের পাতায় সাদা সাদা পাউডার, কিছুক্ষণ পরেই পাতাগুলো দূসর রঙের হয়ে যায়। মুর্হূতের মধ্যেই পুরো খেতের সবুজ পাতা মরে যায়। কতো ওষুধ দিলাম, মরণ ফিরে না! এদিকে নন্দীগ্রামের নবী হোসেনের পুত্র শামছু মিয়া জানান, ৯০শতাংশ জমিতে আলু রোপন করে ছিলেন। শুধু রোপনে আলু বীজ কিনেছেন ৪০হাজার টাকার। সার ও কীটনাশক দিয়েছেন ১৬হাজার টাকার। রোপনে ব্যয় হয়েছে সাড়ে ৭হাজার টাকা। এখন বিক্রি করে পেয়েছেন মাত্র ৫০হাজার টাকা।

দরুন লালমা গ্রামের শামছুল ইসলাম জানান, তিনি ১৩০শতাংশ জমিনে আলু চাষ করে অর্ধলাখ টাকা গচ্ছা গেছে। কলতাপাড়া গ্রামের আহাম্মদ হোসেন জানান, আলু রোপনের একমাসের মধ্যে স্থানীয় ও বিভিন্ন এলাকা থেকে আগত ফরিয়ারা (সিন্ডিকেট ব্যবসায়ী) কৃষকদের নিকট থেকে আলু খেত নিয়ে নেয়। এরপরে কৃষক আর এসব খেতে পরিচর্যা করেন না। ফরিয়ারাও একেক জন শত কৃষকের জমির আলু কিনেন। ফলে তারাও নিয়মিত পরিচর্যা করতে ব্যর্থ হওয়ায় ক্ষতির পরিমাণ বেড়েছে।

এ প্রসঙ্গে উপসহকারী কৃষি অফিসার সুমন সরকার জানান, প্রায় একমাস আগে এ রোগের প্রার্দুভাব দেখা দেয়। হঠাৎ বৃষ্টি ও অতিরিক্ত ঠান্ডার কারণে লেইট ব্লাইটে আক্রান্ত হয়েছে। কলতাপাড়া ব্লকে ২শ হেক্টর জমিনের মধ্যে ৭০ হেক্টর জমি আক্রান্ত হয়। এতে প্রায় ৬০জন কৃষক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন। উপজেলা কৃষি অফিসার নিলুফার ইয়াসমিন জলি জানান, উপজেলার ডৌহাখলা, রামগোপালপুর, বোকাইনগর, সহনাটী ও অচিন্তপুর ইউনিয়নে সবচেয়ে বেশি আলু চাষ হয়।

এ বছর ৪৫০ হেক্টর (প্রতি হেক্টর ৩৩শতাংশ) জমিতে আলু চাষ হয়েছে। এখন পর্যন্ত প্রায় ১৫০ হেক্টর জমির আলু নাভীদশা রোগে আক্রান্ত হয়েছে। এতে প্রায় ১৩শ কৃষক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন। তিনি আরও জানান, কৃষি বিভাগ থেকে নিয়মিত কৃষকদের পরামর্শ দেয়া হয়েছে। প্রতিকূল প্রকৃতিতে রোগটি দ্রুত ছড়ায়। কৃষককেও আগাম পদ্ধতি গ্রহণের পরামর্শ দিলেও গ্রহণ করেন না। আক্রান্ত হয়ে গেলে তখন রক্ষা করা খুবই কঠিন হয়ে পড়ে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here