লৌহজং সরকারি হাসপাতালে ত্রুটি যুক্ত এক্সরে যন্ত্র স্থাপন,তিন বছর ধরে সেবা থেকে বঞ্চিত রোগীরা

0
লৌহজং সরকারি হাসপাতালে ত্রুটি যুক্ত এক্সরে যন্ত্র স্থাপন,তিন বছর ধরে সেবা থেকে বঞ্চিত রোগীরা

প্রেসনিউজ২৪ডটকমঃ মুন্সীগঞ্জ প্রতিনিধি: লৌহজং উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ২০২০ সালের ১২ নভেম্বর কোটিটাকা মূল্যের আধুনিক একটি এক্সরে যন্ত্র স্থাপন করা হয় লৌহজং উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে।স্থাপনের পরই যন্ত্রে দেখা দেয় ত্রুটি। করা যাচ্ছিলো না এক্সরে। যন্ত্রটি মেরামত অথবা নতুন করে স্থাপনের জন্য নেওয়া হয়নি কোন উদ্যােগ।এর মধ্যে পেরিয়েগেছে তিনটি বছর।এর ফলে এক্সরে সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন রোগীরা।

হাসপাতালে খোঁজ নিয়ে জানাযায়,২০০৭ সালের ১৫ জুলাই হাসপাতালে নতুন এক্সরে মেশিন স্থাপন করা হয়।সে মেশিনটি ত্রুটি যুক্ত ছিল।স্থাপনের পর কোন রকমে এক্সের কাজ চলছিল। পরিপূর্ণ সেবা দেওয়া যাচ্ছিলো না রোগীদের।২০২০ সালের নভেম্বরে সেন্ট্রাল ওষুধাগার তেজগাঁও ঢাকা থেকে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের লোকজন এসে দ্বিতীয় দফায় প্রায় কোটিটাকা ব্যয়ে নতুন আরো একটি এক্সরে যন্ত্র স্থাপন করে যায়।স্থাপনের পরই যন্ত্রে ত্রুটি দেখা দেয়।

এতে গত তিন বছর ধরেই সম্পূর্ণভাবে বন্ধ রয়েছে এক্সরে সেবা।হাসপাতাল সুত্রে জানাযায়, প্রতিদিন এ হাসপাতালের বর্হিবিভাগে অন্তত সাড়ে তিন থেকে চারশ রোগী সেবা নিতে আসেন।যাদের মধ্যে বিভিন্ন কারনে কম করে হলেও ২০-২৫ জন রোগীকে এক্সরে পরিক্ষা দেন চিকিৎসক। এক্সরে যন্ত্রটি নষ্ট হওয়ায়।বাহিরের ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার থেকে এক্সরে করছেন রোগীরা।গত সোমবার বেলা ১১ টার দিকে হাসপাতালে গিয়ে দেখাযায়,হাসপাতালটির এক্সরে কক্ষে বড় একটি তালা ঝোলানাে। চিকিৎসকের প্রতিটি কক্ষে রোগীদের ভিড়। এসব কক্ষ থেকে বেড়িয়ে রোগীরা কেউ ছুটছিলেন হাসপাতালের ওষুদের ফার্মেসিতে,কেউ যাচ্ছিলেন প্যাথলজি বিভাগে।

এদের মধ্যে যাদের এক্সরে প্রয়োজন তারা হাসপাতালের বাহিরের ক্লিনিক ও ডায়গোনেস্টিক সেন্টারের দিকে যাচ্ছিলেন।এ সময় কথা হয় আব্দুল হক নামে এক ব্যাক্তির সঙ্গে।তাঁর বাড়ী উপজেলার মাওয়া এলাকায়। তার স্কুল পড়ুয়া এক মেয়েকে নিয়ে হাসপাতালে এসেছিলেন।আব্দুল হক বলেন,রোববার বাড়ির পাশে বাচ্চাদের সঙ্গে খেলা করতে গিয়ে হাতে মারাত্মক ব্যথা পায় তার মেয়ে।মেয়ের হাত ফুলেগেছে।ব্যথায় কান্নাকাটি করছে।সোমবার হাসপাতালে আনার পর চিকিৎসক জানালেন এক্সরে করতে হবে।

শুনলাম হাসপাতালের এক্সরে হয় না।তাই বাহিরে নিয়ে এক্সরে করান তিনি।শুধু আব্দুল হকের মেয়ে নয়,দিন রাত যখনই কাশি, বুকে, হাতে, পায়ে,কোমড়ে ব্যথা নিয়ে হাসপাতালে রোগীরা আসছেন।প্রয়োজন অনুযায়ী তাদের এক্সরে পরিক্ষা দিচ্ছেন চিকিৎসকরা।ভেতরের যন্ত্রে সমস্যা থাকায় এক্সরে করতে বাধ্য হয়ে বাহিরে ছুটে যেতে হচ্ছে রোগী ও তার স্বজনদের।এদিন হাসপাতালের জরুরী বিভাগে এক বৃদ্ধ মায়ের হাতে প্লাস্টার করছিলেন চিকিৎসক ও তার সহকারীরা।ওই রোগীর নাম যমুনা বিবি(১০২)।তিনি উপজেলার মালির অংক এলাকার বাসিন্দা।তিনি কিছুদিন দিন আগে গোসল করার সময় পা পিছলে পড়ে গেলে তার হাতের কবজি ভেঙে যায়।

সোমবার হাসপাতালে যসুনা বিবির হাত প্লাস্টার করতে নিয়ে এসেছিলেন মেঝো ছেলের বউ মাসুদা বেগম। মাসুদা বেগম বলেন,বৃহস্পতিবার দুপুরে তার শাশুড়ি হাত ভাঙ্গে। শাশুরির চিৎকারে বাড়িতে কান্নাকাটি লেগে যায়।সেদিন বাড়ির সবাই দৌড়াদৌড়ি করে তাকে হাসপাতালে নিয়ে আসি। চিকিৎসক কোন সেবা না দিয়ে আগে এক্সরে করাতে বলেন। হাসপাতালের এক্স-রে ছিলনা।বাইরের একটি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে নিয়ে এক্সরে করাই।

আবার তাকে নিয়ে হাসপাতালে আসি।পরে জানতে পারি শাশুড়ীর হাত ভেঙেছে। তিনি বলেন, এক্সরে করাতে ৫০০ টাকা খরচ হয়েছে।তার চেয়ে বেশি কষ্ট হচ্ছে অনেক দৌড়াদৌড়ি করতে হয়েছে।যদি হাসপাতালের এক্সরেটা ঠিকথাকতো আমাদের টাকা বেঁচে যেত,ভোগান্তিও হত না।রোগী ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা হলে তারা জানান,সরকারি হাসপাতালে যারা চিকিৎসা সেবা নিতে আসেন তাদের অধিকাংশই দরিদ্র ও নিম্ন মধ্যবিত্ত শ্রেণীর মানুষ।বিনামূল্যে ওষুদ,পরিক্ষা নিরিক্ষা পাওয়ার জন্য তারা উপজেলা হাসপাতাল গুলোতে আসেন।

তাই প্রতিটি হাসপাতালে অন্য সেবার সঙ্গে এক্সরে সেবা থাকাটা শতভাগ জরুরী।অথচ লৌহজংয়ের মত গুরুত্বপূর্ণ একটি উপজেলায় বছরের পর বছর ধরে এ সেবাটি নেই।এতে ভোগান্তির পাশাপাশি আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন এ উপজেলার মানুষ। তাই দ্রুত এক্সরে চালুর দাবি জানান রোগী ও স্থানীয়রা।হাসপাতালের এক্সরে সমস্যাটির কথা তুলতেই উপজেলা স্বাস্থ কর্মকর্তা নাজমুস সালেহীন বলেন,যতদুর শুনেছি এক্সরে যন্ত্র স্থাপনের ত্রুটি ধরা পরে।

এতে একবারের জন্যও এক্সরে করা যায়নি।এক্সরে না থাকায় রোগীদের ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে।দুই বছর হলো এ হাসপাতালে এসেছি।যন্ত্রটি মেরামতের জন্য ন্যাশনাল ইলেকট্রো মেডিক্যাল ইকুইপমেন্ট মেইনট্যান্স ওয়ার্কসপ এন্ড ট্রেনিং সেন্টারকে(নিউ এন্ড টিসি) ৬-৭ বার চিঠি লিখেছি।এর পরেও এ সমস্যাটির কোন সমাধান হচ্ছেনা।চিকিৎসক ও জনবল সংকট ২০০০ সালে টিনের কক্ষের মাধ্যমে হাসপাতালটির ৩১ শয্যার কার্যক্রম শুরু হয়।

২০০৫ সালো তিন তলা নতুন ভবন হয়।তখন এটি ৩১ থেকে ৫০ শয্যায় উন্নিত করা হয়। প্রতিদিন গড়ে সাড়ে তিনশ থেকে ৪০০ রোগী উপজেলার এ গুরুত্বপূর্ণ হাসপাতালটিতে চিকিৎসা নিতে আসেন।তবে চিকিৎসক ও তৃতীয়, চতুর্থ শ্রেণির জনবলের তীব্র সংকট থাকায় কাঙ্খিত সেবা পাচ্ছেনা রোগীরা।হাসপাতালের নথিপত্র থেকে জানাযায়,৫০ শয্যার বিপরীতে হাসপাতালে চিকিৎসক দরকার ২২ জন।সেখানে কাগজে কলমে আছেন ১৩ জন।

এই ১৩ জনের মধ্য থেকে রাজধানী ঢাকাসহ অন্য হাসপাতালে প্রেষণে আছেন ৬ জন। ৭ জন দিয়ে কোন রকমে চলছে চিকিৎসা কার্যক্রম।হাসপাতালে নাক,কান,গলা,মেডিসিন,সার্জারি,চক্ষু, চর্ম ও যৌন বিশেষজ্ঞ নেই।হাসপাতালে পরিসংখ্যান বিদের পদটি ফাঁকা। ৫ টি পরিচ্ছন্ন কর্মীর,৩ টি ওয়ার্ডবয়, ৩ টি পাঁচক,দুটি আয়ার পদ থাকলেও সবকটি পদই ফাঁকা।নেই এম্বুলেন্স চালকও। ৫ টি অফিস সহায়ক পদের মধ্যে আছে মাত্র দুজন,সিনিয় স্ট্যাফ নার্সের দুটি পদও শূন্য। এর মধ্যে কোন রকমে কেউ চিকিৎসা সেবা।

উপজেলা স্বাস্থ কর্মকর্তা নাজমুস সালেহীন বলেন, রোগীদের দুর্ভোগ বিহীন ভালো সেবা দেওয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছি।চিকিৎসক যারা আছেন তারা সবাই আন্তরিক।তবে চিকিৎসক,তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির জনবল সংকটের জন্য কাঙ্খিত সেবা দিতে পারছিনা।সেবার মান বাড়াতে হলে,শূন্য পদে নিয়োগ।এখানে পোস্টিং নিয়ে যারা বাহিরে প্রেষণে আছেন,হয় তাদের ফিরিয়ে আনা নয়ত তাদের পদে নতুন কাউকে নিয়োগ দেওয়া দরকার।

এ বিষয়ে মুন্সিগঞ্জ সিভিল সার্জন মঞ্জুরুল আলম দৈনিক বাংলাদেশ সমাচার কে বলেন,আমার জানামতে সব কটি উপজেলার এক্সরে যন্ত্র সচল রয়েছে।এ বিষয়ে কেউ জানায়নি। চিকিৎসক ও জনবল লোকবল সংকটের বিষয়ে তিনি বলেন, সব হাসপাতালেই লোকবল সংকট আছে।আমরা মন্ত্রণালয়ে চিঠি লিখছি। নিয়োগ হলেই সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here