প্রেসনিউজ২৪ডটকমঃ মুঃ আঃ মোতালিব, তালতলী (বরগুনা) প্রতিনিধি॥ বরগুনার তালতলীতে এলজিইডি কর্তৃক একটি সড়ক নির্মাণের এক মাসের মধ্যেই খানাখন্দে পরিণত হয়েছে। হাত দিয়ে ধরলেই উঠে যাচ্ছে পিচ, বিভিন্ন অংশে দেবে গিয়ে হচ্ছে কর্দমাক্ত, কোথাও কোথাও গর্তের সৃষ্টি হয়ে জমে যাচ্ছে বৃষ্টির পানি। স্থানীয়দের অভিযোগ, নিম্মমানের কাজে নির্মাণ করা হয়েছে সড়কটি।
চলতি বৃষ্টির মৌসুম যেতে না যেতেই সড়কটি চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পরবে। প্রশাসন বলছেন এলজিইডি কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে। আর এলজিইডি কর্তৃপক্ষের আশ্বাস, সরেজমিন পরিদর্শণ শেষে নেওয়া হবে ব্যবস্থা।বরগুনার তালতলী উপজেলার পচাঁকোড়ালিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হাট ভায়া পচাঁকোড়ালিয়া সুইজগেট বাজার জিপিএস ৫ কিলোমিটার সড়ক ২০২১ সালের ২২ ফেব্রুয়ারী নির্মাণ কাজ শুরু হয়ে এক বছরের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা ছিল।
কিন্তু সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার মেসার্স দেলোয়ার হোসেন-মোমিনুল হক (জেভি) নির্মাণ কাজ পুরোপুরি না করেই ফেলে রেখে যান (কার্পেটিং বাকী ছিল)। এরপর বাকি কাজ সম্পন্ন করার জন্য এলজিইডি কর্তৃপক্ষ পুনরায় দরপত্র আহবান করলে কাজটি পান মেসার্স ইলমা এন্টারপ্রাইজ নামে বরগুনার একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। কার্যাদেশ অনুযায়ী এ বছরের পহেলা মে থেকে ৩০ জুনের মধ্যে রাস্তার কার্পেটিং কাজ সম্পন্ন করে ওই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। সড়কটি নির্মাণে দুই ধাপে ব্যয় ধরা হয়েছে ৩ কোটি ৪৪ লাখ ৩৯ হাজার ২৪ টাকা।
কিন্তু কার্পেটিং শেষ করার (নির্মাণের) এক মাস যেতে না যেতেই খানাখন্দে পরিণত হয়েছে সড়কটি। হাত দিয়ে ধরলেই উঠে যাচ্ছে পিচ। বিভিন্ন অংশে দেবে গিয়ে হচ্ছে কর্দমাক্ত, কোথাও কোথাও গর্তের সৃষ্টি হয়ে জমে আছে বৃষ্টির পানি। স্থানীয়রা বলছেন, একদম নিম্মমানের মালামাল ব্যবহার করে কোন ভাবে রাস্তার কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে। একাধিক স্থানে পিচ উঠে গিয়ে খোয়া এবং মাটি বের হয়ে গেছে। যে কারনে বৃষ্টির মৌসুম যেতে না যেতেই এ সড়কটি চলাচল অনুপযোগী হয়ে যাবে।
পচাঁকোড়ালিয়া গ্রামের নাসির উদ্দিন পাটোয়ারী বলেন, এ সড়কটি নির্মাণে এলজিইডি কর্তৃপক্ষ এবং ঠিকাদার উভয়ের গাফেলতি ছিল। না হয় এক মাস যেতে না যেতেই রাস্তার এ অবস্থা হওয়ার কথা না। তিনি আরও বলেন, যারা দুর্নীতির মাধ্যমে সরকারের কোটি কোটি টাকা এভাবে অপচয় করেছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া উচিৎ। স্থানীয় আনিসুজ্জামান নসা মাস্টার বলেন, উপজেলা এলজিইডি কর্মকর্তাদের গাফেলতির কারনে ঠিকাদার দুর্ণীতির মাধ্যমে এই ভাবে রাস্তা নির্মাণের সাহস পেয়েছে।
তাই সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার এবং দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের শাস্তির আওতায় আনার দাবি জানান তিনি। এছাড়াও স্থানীয় একাধিক ব্যক্তি সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার এবং দায়িত্বপ্রাপ্ত এলজিইডি কর্মকর্তাদের শাস্তির আওতায় আনার পাশাপাশি ঠিকাদারি লাইসেন্স বাতিলের দাবি জানান।সংশ্লিষ্ট ১নং পচাঁকোড়ালিয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মোঃ আব্দুর রাজ্জাক হাওলাদার বলেন, সড়কটি নির্মাণকালে কাজের মান নিয়ে ঠিকাদার এবং এলজিইডি কর্তৃপক্ষের সাথে একাধিকবার কথা বললেও তারা কোন গুরুত্ব দেয়নি। তাই এ ব্যাপারে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ দাবি করেন তিনি।
এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স ইলমা এন্টারপ্রাইজের স্বত্ত্বাধিকারী মহিবুল ইসলাম তনু বলেন, সড়কটির কাজ আমি করিনি, আমার লাইসেন্সে মোঃ ফরহাদ জোমাদ্দার নামে অন্য এক ঠিকাদার কাজ করেছে। রাস্তার বর্তমান অবস্থা সম্পর্কেও তিনি অবগত নন বলে জানান। আর এ বিষয়ে কথা বলতে ফরহাদ জোমাদ্দারের মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
এলজিইডি’র তালতলী উপজেলা প্রকৌশলী মোঃ ইমতিয়াজ হোসাইন রাসেল বলেন, আগামী সপ্তাহে নির্বাহী প্রকৌশলী মহোদয় ওই রাস্তাটি সরেজমিনে পরিদর্শন করবেন। তারপর পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তালতলী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সিফাত আনোয়ার তুমপা এ বিষয়ে বলেন, ওই রাস্তার বিষয়ে আমার কাছেও অভিযোগ এসেছে। তাই এ বিষয়ে বরগুনা এলজিইডি’র নির্বাহী প্রকৌশলীকে জানানো হবে।
এ বিষয়ে কথা বলতে বরগুনার এলজিইডি’র নির্বাহী প্রকৌশলীর মোবাইল ফোনে একাধিকবার চেষ্টা করা হলেও তাকে ফোনে পাওয়া যায়নি।