প্রেসনিউজ২৪ডটকমঃ মোঃমাহফুজুররহমান,গৌরীপুর (ময়মনসিংহ)প্রতিনিধিঃ ভাল বেতনে বিল্ডিং কনস্ট্রাকশনের কাজের কথা বলে মনিরুল ইসলাম নামে স্থানীয় এক দালাল ৮ লাখ টাকার বিনিময়ে প্রতিবেশী জাকিরুল ইসলাম (১৮) ও তুষার মিয়া (২৫) কে চলতি বছর এপ্রিল মাসে মধ্যপ্রাচ্যের ওমানে পাঠান।
কিন্তু সেখানে বিল্ডিং কনস্ট্রাকশনের কাজের পরিবর্তে তাদেরকে দেয়া হয় টয়লেট ও রাস্তা পরিস্কারের কাজ। এতে অপরাগতা প্রকাশ করায় শারীরিক নিযার্তনের মাধ্যমে তাদেরকে এ কাজ করতে বাধ্য করান মনিরুল ইসলামের ভাই ওমান প্রবাসী আদম ব্যবসায়ী আব্দুর রহমান। মাস শেষে তাদের বেতনের টাকা জোরপূর্বক হাতিয়েও নিতেন তিনি।
বেতনের টাকা না দিলে ওই দুই যুবককে মারধরের পাশাপাশি কোন খাবার না দিয়ে অমানষিক নিযার্তনের করা হতো। নিযার্তনের সহ্য করতে না পেরে জুলাই মাসের শেষের দিকে তারা দেশে নিজ বাড়িতে ফিরে আসেন। নিযার্তনের শিকার জাকিরুল ইসলাম ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলার বোকাইনগর ইউনিয়নের বৃ-বড়ভাগ গ্রামের মৃত আসাদ মিয়ার ছেলে ও তুষার মিয়া মৃত মিলন মিয়ার ছেলে। অপরদিকে মনিরুল ইসলাম ও ওমান প্রবাসী আব্দুর রহমান একই গ্রামের মোঃ আজিজুলের ছেলে।
এদিকে জমি বিক্রি ও ধারদেনা করে ওমানে গিয়ে আদম ব্যবসায়ীর খপ্পরে প্রতারণার শিকার হয়ে সর্বশান্ত হয়ে পড়েছে ওই দুই যুবকের পরিবার। দেশে এসে মনিরুল ইসলামের কাছে হাতিয়ে নেয়া টাকা ফেরত চাইলে তাদেরকে মিথ্যা মামলা দিয়ে ফাঁসিয়ে দেয়ার হুমকী দিচ্ছেন। এ নিযার্তনের ও প্রতারণার ঘটনায় জড়িতদের বিচার দাবি করে রবিবার বিকেলে এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল করেন ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যরা ও স্থানীয় লোকজন।
জাকিরুল ও তুষার তাদের শরীরে নিযার্তনের স্মৃতি চিহ্ন দেখিয়ে সাংবাদিকদের জানান- আদম ব্যবসায়ী আব্দুর রহমান ও তার ভাড়াটে লোকজন ওমানে প্রতিনিয়ত তাদেরকে শারীরিক করতো। দুই/তিন দিনে তাদেরকে মাত্র একবেলা খাবার দিত। ধারালো চাকু হাতে নিয়ে মৃত্যুর হুমকী দিয়ে মারধর করে জোরপূর্বক সাদা কাগজ ও ষ্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নিয়ে তাদের বেতনের টাকা হাতিয়ে নেয়া হতো।
এসব অমানবিক নিযার্তনের ভিডিও ইন্টারনেটে গোপনে দেশে তাদের পরিবারের কাছে পাঠায় তারা। এরপর পরিবারের সদস্যরা টাকা পাঠিয়ে তাদেরকে দেশে ফেরত আনেন। নিযার্তনের শিকার দুই যুবকের মা স্বামীহারা শাহনাজ বেগম ও মোছাঃ নাজমা জানান- জমি বিক্রি ও ধারদেনা করে স্থানীয় দালাল মনিরুল ইসলামের মাধ্যমে মোট মোট ৮ লাখ টাকায় দুই ছেলেকে এপ্রিল মাসে ওমান পাঠান। সেখানে মনিরুল ইসলামের ভাই আব্দুর রহমান তাদেরকে অমানবিক নির্যাতন করেন।
নিযার্তনের খবর পেয়ে বাড়ি থেকে টাকা পাঠিয়ে তিন মাস পর তাদেরকে দেশে ফিরিয়ে আনেন। এদিকে দালালের খপ্পরে পড়ে সহায়-সম্বল হারিয়ে কষ্টে জীবন-যাপন করছেন তারা। এ ঘটনায় এলাকায় সালিশ-দরবার হলেও হাতিয়ে নেয়া টাকা ফেরত দিতে অপরগতা জানান মনিরুল ইসলাম। বর্তমানে টাকা ফেরত না দিয়ে উল্টো মিথ্যা মামলা দিয়ে তাদেরকে হয়রানীর হুমকী দিচ্ছেন মনিরুল ইসলাম।
দুই যুবককে ওমানে নতন ও জোরপূর্বক বেতন হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ মিথ্যা ও বানোয়াট উল্লেখ করে মনিরুল ইসলাম জানান- জাকিরুল ও তুষারকে বৈধভাবে ওমানে পাঠিয়েছেন তিনি। সেখানে কাজ ভাল না লাগায় তিন মাস পর তারা স্বেচ্ছায় দেশে ফিরে আসেন। বাড়িতে আসার পর টাকা ফেরত দেয়ার জন্য তাকে নানা হুমকী প্রদান করেন তারা। এ হুমকী প্রদানের ঘটনায় তিনি গৌরীপুর থানায় অভিযোগ করেছেন।
স্থানীয় মোঃ রাসেলসহ আরও কয়েকজন জানান- প্রতারণা ও নিযার্তনের ঘটনায় এলাকায় স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের উপস্থিতিতে দেন-দরবার হয়েছে। সেই দেন-দরবারের সিদ্ধান্ত অমান্য করে মনিরুল ইসলাম প্রতারণার মাধ্যমে হাতিয়ে নেয়া টাকা ফেরত দিতে অস্বীকৃতি জানান। এতে এলাকায় লোকজনের মাঝে ক্ষুব্দ প্রতিক্রিয়া বিরাজ করছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে গৌরীপুর থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ মাহমুদুল হাসান জানান-মনিরুল ইসলামের অভিযোগের প্রেক্ষিতে পুলিশ রবিবার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। দুই যুবককে ওমানে নিযার্তনের বিষয়ে থানায় কোন অভিযোগ আসেনি।অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে বলে তিনি জানান।