দেড় বছর ধরে বন্ধ রয়েছে তালতলী ফকির হাটের সংযুক্ত সেতু’টি,ভোগান্তিতে ভ্রমনপিষুরা

0
দেড় বছর ধরে বন্ধ রয়েছে তালতলী ফকির হাটের সংযুক্ত সেতু’টি,ভোগান্তিতে ভ্রমনপিষুরা

প্রেসনিউজ২৪ডটকমঃ  মুঃ আঃ মোতালিব, তালতলী (বরগুনা) প্রতিনিধি॥ বরগুনার তালতলীর ফকির হাট খালের উপর নির্মিত সোনাকাটা টেংরাগিরি ইকোপার্কের প্রবেশদ্বারে সংযুক্ত সেতুর নির্মান কাজ উচ্চতা সংক্রান্ত জটিলতলার কারনে প্রায় দেড় বছর ধরে বন্ধ রয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে সেতুর নির্মান কাজ বন্ধ থাকায় সোনাকাটা
ইকোপার্কে ঘুরতে আসা পর্যটকরা পরছে ভোগান্তিতে।

ঠিকমত প্রবেশ করে ঘুরতে না পারার কারনে দিন দিন পর্যটক হারাচ্ছে টেংরাগিরি ইকোপার্ক। তালতলী উপজেলা প্রকৌশলী এলজিইডি কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০২০-২১ অর্থ বছরে ফকির হাট খালের উপর সোনাকাটা ইকোপার্কের সাথে সংযোগ স্থাপনের জন্য ৭ কোটি টাকা ব্যায়ে ৭২ মিটার দৈর্ঘ্য ও সাড়ে ৭ মিটার প্রস্তের ১টি গার্ডার সেতু নির্মানের জন্য দরপত্র আহবান করে। কাজ পায় বরিশালের আমির ইঞ্জিনিয়ারিং কর্পোরেশন নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।

সেতুটির উচ্চতা ধরা হয়েছে পানির স্বাভাবিক লেভেল থেকে ১০ ফুট উচু। কাজ পাওয়ার পর ২০২১ সালে কাজ শুরু করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি। গত ২ বছরে প্রতিষ্ঠানটি সেতুর দুই পারের ৪৮মিটার এ্যাবাটমেন্ট কাজ শেষ করে। মাঝখানের ২৪ মিটার দৈর্ঘের ১টি স্প্যান বাকী থাকা অবস্থায় ২০২২ সালের প্রথম দিকে উচ্চতা কম হওয়ায় প্লানিং কমিশন ও স্থানীয় জেলেদের আপত্তির কারনে মাঝখানের ২৪ মিটার স্প্যান নির্মানের কাজ প্রায় দেড় বছর ধরে বন্ধ রয়েছে।

এই সেতুর দক্ষিন পারেই বঙোপসাগরের কোল ঘেষে ওঠা বিশাল এক বনভূমি জুড়ে সোনাকাটা ইকোপার্ক। পার্কের ভিতরে পর্যটকদের প্রবেশের জন্য একটি পুরাতন লোহার সেতু ছিল। নতুন করে গার্ডার সেতু নির্মানের কারনে পুরাতন লোহার সেতুটি ভেঙ্গে ফেলা হয়। নতুন সেতু নির্মান শেষ না হওয়ায় যোগাযোগ ব্যবস্থায় ভোগান্তির কারনে সোনাকাটা ইকোপার্কে পর্যটক শূন্য হয়ে পরেছে। কিছু পর্যটক আসলেও তারা জীবনের ঝুঁকি
নিয়ে অনেক কষ্ট করে একটি নৌকার সাহায্যে পারাপার হচ্ছে।

সোনাকাটা ইকোপার্কে বেড়াতে আসা শিক্ষার্থী সাদিয়া বেগম, আরিফ ও তানিয়া নামের পর্যটকরা জানান, সেতুর কাজ বন্ধ। তাই খেয়া নৌকা পার হয়ে ইকোপার্কের ভিতরে যেতে হয়। এতে ভোগান্তি আর বিড়ম্বনার শেষ নেই। এভাবে সেতু নির্মান কাজ বন্ধ থাকলে এই বনে কেউ আর ঘুরতে আসবে না।  ছকিনা বিটের বন প্রহরী (ফরেস্টার) মো. মোশারেফ হোসেন জানান, সেতু না থাকায় চলাচলের অসুবিধার কারনে সোনাকাটা ইকোপার্ক প্রায় পর্যটক শূন্য হয়ে পরেছে।

ফকির হাটের মায়ের দোয়া হোটেলের মালিক মো. বাবুল হোসেন হাওলাদার জানান, সেতু না থাকায় পারাপারে ভোগান্তি হওয়ায় ইকোপার্কে পর্যটক কমে গেছে। এ কারনে আমাদের ব্যবসা বানিজ্যে ধস নেমেছে। স্থানীয় জেলে রিপন মল্লিক ও আলতাফ হোসেন জানান, এই এলাকায় রয়েছে শত শত জেলে ট্রলার। তারা প্রতিনিয়ত সাগরে মাছ ধরতে যায়। বন্যা ও জলোচ্ছাসের মত দুর্যোগের সময় তারা গভীর সাগর থেকে ফিরে নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য এই ফকির হাট খালের ভিতর প্রবেশ করে আশ্রয় নেয়। সেতুটির উচ্চতা কম ধরা হয়েছে।

এই ভাবে কম উচ্চতার সেতু নির্মান হলে দুর্যোগের সময় খালের পানির উচ্চতা বেড়ে যাওয়ার কারনে জেলেদের ট্রলার নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য এই সেতুর নীচ দিয়ে চলাচল করতে পারবে না। স্থানীয় সাবেক ইউপি সদস্য মো. আব্দুস ছালাম হাওলাদার বলেন, সেতুর উচ্চতা কম হওয়ায় আমরা গ্রামবাসী আপত্তি জানিয়েছি।কারন সাগর এবং খালের পানি বেড়ে যাওয়ার সময় এই সেতুর নীচ দিয়ে কোন ট্রলার কিংবা নৌযান চলাচল করতে পারবেনা।

ট্রলার মালিক জেলেদের দাবী মাঝখানের স্প্যানটি আরো ১০ ফুট উচু করে নির্মান করা হলে জেলে ট্রলার এবং নৌচলাচল স্বাভাবিক হবে। অন্যথায় তাদের চলাচল ব্যহত হবে। সেতু নির্মান কারি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান আমির ইঞ্জিনিয়ারিং করপোরেশনের মালিক মো. আমির হোসেন জানান, এলজিইডির নকশা অনুযায়ী আমি কাজ শুরু করি। মাঝখানের স্প্যানটি নীচু হওয়ার কারনে স্থানীয় এবং পরিকল্পনা মন্ত্রনালয়ের আপত্তির কারনে কাজ স্থগিত
করে দেওয়ায় আমি সেতু নির্মান কাজ বন্ধ রেখেছি।

তালতলী উপজেলা প্রকৌশলী (এলজিইডি) ইমতিয়াজ হোসেন রাসেল জানান, নৌচলাচল স্বাভাবিক রাখতে সেতুর মাঝখানের স্প্যান বসানোর নির্মান কাজ বন্ধ রাখা হয়েছে। নৌচলাচল স্বাভাবিক রাখতে স্টিলের স্ট্রাকচার করে এটির উচ্চতা আরো ৮-১০ ফিট বাড়াতে হবে। এটি নির্মানের জন্য নতুন নকশা এবং সেনাবাহিনীর টিম প্রয়োজন। ইতোমধ্যে সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ারিং কোরের একটি দল সরেজমিন পরিদর্শন করে গেছেন। মন্ত্রনালয়ের অনুমোদন পাওয়া গেলে কাজ পুনঃরায় শুরু করা হবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here