মতলবের বেলতলীতে শুরু হয়েছে ৭ দিনব্যাপী হযরত শাহ্ সোলেমান লেংটা বাবার বাৎসরিক ওরশ

0
মতলবের বেলতলীতে শুরু হয়েছে ৭ দিনব্যাপী হযরত শাহ্ সোলেমান লেংটা বাবার বাৎসরিক ওরশ

প্রেসনিউজ২৪ডটকমঃ  খান মোহাম্মদ কামাল ঃ প্রতি বছরের ন্যায় আজ শুক্রবার (৩১ মার্চ) ১৭ চৈত্র থেকে পরবর্তী ৭ দিন ব্যাপি শুরু হচ্ছে চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার সাদুল্যাপুর ইউনিয়নের বেলতলীতে উপমাহাদেশের প্রখ্যাত সাধক সিদ্ধ পুরুষ অলিয়ে কামেল হযরত শাহ্ সুফি গাউছেপাক সোলেমান (রঃ) লেংটা বাবার ওফাত দিবস উপলক্ষে ৭ দিন ব্যাপি মহাপবিত্র ওরশ মোবারক ও লেংটার মেলা।

আজ শুক্রবার শুরু হয়ে তা আগামী ৫ এপ্রিল বুধবার পর্যন্ত চলবে। এবার পালিত হচ্ছে শাহ্ সোলেমান লেংটার ১০৪তম ওরশ শরীফ। এদিকে লেংটা বাবার ৭ দিন ব্যাপি মহাপবিত্র ওরশ মোবারক আগামীকাল শুরু হওয়ার কথা থাকলেও আজ বৃহস্পতিবার থেকে ওরশ মোবারকের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার সকাল ৯ টা থেকে ১০ পর্যন্ত পবিত্র কোরআন তিলাওয়াত,এবং সকাল ১১টার সময় মিলাদ, যিকির আজকার,ধর্মীয় বিচারগান ও দোয়া খায়ের এবং জাতি ধর্ম নির্বিশেষে তবারক বিতরণ করা হয়।

বৃহস্পতিবার আমাদের প্রতিবেতক উক্ত লেংটার মেলা পরিদর্শন করে দেখতে পান,ইতিমধ্যে মেলার চারপাশে কয়েক কিলোমিটার এলাকা জুড়ে বসেছে বিভিন্ন রকমারি দোকান। তারা বিভিন্ন পসরা সাজিয়ে বসে রয়েছেন। বেচাবিক্রি শুরু হয়েছে। তকে পুরোদমে বিক্রি এখনও জমে উঠেনি। এছাড়া দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসতে শুরু করেছে রেংটা বাবার আশেকান ভক্তবৃন্দরা। তারা বিভিন্ন স্থানে বসিয়েছে আস্তানা। এই ওরশ মূলত সাধারন মানুষের কাছে সোলেমান লেংটার মেলা নামেই পরিচিত।

প্রতি বছর চৈত্র মাসের ১৭ তারিখে তার মৃত্যু বার্ষিকী উপলক্ষ্যে ৭দিন ব্যাপী ওরশ অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। ওরশকে কেন্দ্র করে কয়েক কিলোমিটার জুড়ে মেলায় বসেছে বিভিন্ন রকমারি দোকান। মেলায় বিভিন্ন প্রকার পণ্য ক্রয়-বিক্রয় হয়। ওরশ শুরু হওয়ার কয়েক দিন আগে ও পর পর্যন্ত এ মেলা স্থায়ী হয়। মেলায় প্রায় কয়েক লক্ষাধিক লোকের সমাগম হয়ে থাকে। এছাড়া প্রতি বছর ভাদ্র মাসে ও সপ্তাহের বৃহস্পতিবার মাজারে ভক্তদের আগমন ঘটে। তবে এ বছর উপজেলা প্রশাসন থেকে পবিত্র মাহে রমজানের পবিত্র রক্ষার্থে শুধুমাত্র হযরত শাহ্ সুফি গাউসেপাক সোলেমান (রঃ) লেংটা বাবার ওফাত দিবস উপলক্ষে দুই দিন ওরশ মোবারকের অনুমতি দেওয়া হয়েছেবলে জানাগেছে। স্থানীয়দের মতে,সোলেমান লেংটা উপমহাদেশের একজন খ্যাতিমান আউলিয়ার দাবিদার। বেলতলীর বদরপুর গ্রামে সোলেমান শাহ্ নামে এক ফকিরের মাজার আছে। এই মাজারই লেংটা ফকিরের মাজার হিসেবে পরিচিত।

বাংলা ১২৩০ সালে কুমিল্লা জেলার মেঘনা উপজেলার গোবিনাদপুর ইউনিয়নের আলীপুর গ্রামে এক দরিদ্র পরিবারে শাহ্ সূফী সোলেমান লেংটা জন্ম গ্রহণ করেন। তার বাবার নাম আলা বঙ্গ ভূঁইয়া। জীবনের অধিকাংশ সময়ই কাটিয়েছেন মতলবের বিভিন্ন অঞ্চলে। সোলেমান লেংটা কখনও পোশাক পরিধান করতেন না। তাই তার মাজারটি লেংটার মাজার হিসেবেই পরিচিত। লেংটা ১৮ ফকির বছর বয়সে প্রথম বিয়ে করেন। সোলেমান শাহ নারায়ণগঞ্জের বকতগুলোর রাধানগরে এক নারীর সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন।

শাহ্ সূফী সোলেমান লেংটা ফকিরি লাভ সম্পর্কে জানা যায়, ইমাম উদ্দিন মিয়ারা ছিল তিন ভাই। তিন ভাই নৌকা করে ভাদ্রমাসের এক অমাবস্যা রাতে সোনারগাঁয়ে তাদের পীরের সঙ্গে দেখা করতে যাচ্ছিলেন। নৌকার মাঝি ছিলেন সোলেমান শাহ্। পথিমধ্যে বৃষ্টি হয়, তিন ভাই আরাম করে নৌকার ভেতর। সোলেমান শাহ ভিজে ভিজে নৌকা চালায় এবং গন্তব্যে হাজির হয়ে যায়। নির্দিষ্ট সময় পীর আসেন এবং এ দৃশ্য দেখে রাগ হয়। পীর তখন তিন ভাইকে উলঙ্গ হয়ে আসতে বলে। তিন ভাই চিন্তায় পড়ে যায়।

আপন মায়ের পেটের তিন ভাই কীভাবে উলঙ্গ হবে একে অপরের সামনে। পীর সাহেব মাঝি সোলেমানকে উদ্দেশ্য করে কাছে আসতে বলে। সোলেমান কাছে যায়। পীর তাকে হা করতে বলেন এবং মুখে ফুঁক দেয়। সেখান থেকেই সোলেমান লেংটা হয়ে বাড়ি ফিরে। সোলেমান লেংটার অনেক অলৌকিক ঘটনা রয়েছে। তার মধ্যে সোলেমান লেংটা কালিপুর রমিজ উদ্দিন প্রধানীয়ার বাড়িতে যান। দেখেন নারীরা নদী থেকে ঘট পুরিয়ে ঘর, উঠান লেপছে।

তিনি তাদের পানি আনার কষ্ট দেখে তাদের চোখ বন্ধ করতে বলেন। তারা চোখ বন্ধ করলে লেংটা তার নফস টেনে প্রায় ২-৩ হাত লম্বা করে পুরো উঠান পানিতে ভিজিয়ে দেয়। এ ঘটনা তিনি বিভিন্ন গ্রামে করেছেন। এক সময় মানুষ হজে যেত জাহাজে কিংবা পায়ে হেঁটে। অনেক দিন লাগতো, হজে যাওয়ার সময় অনেকেই লেংটাকে বদরপুর দেখে গেছে, হজ পালন করার সময় অনেকেই তাকে কাবা শরিফে দেখেছেন নামাজ আদায় করতে। এমন অসংখ্য অলৌকিক ঘটনা রয়েছে বলে জানা যায়।

বাংলা ১৩২৫ সালের ১৭ চৈত্র সোলেমান শাহ বেলতর্লী বদরপুর তার বোনের বাড়ীতে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। ১৮ চৈত্র তাকে বদপুরের এই বেলতলীতে (যেখানে মাজার) দাফন করা হয় বলে মাজার পরিচালনায় দায়িত্বে থাকা খাদেম মোঃ লাল মিয়া মোল্লা জানান। তারপর ভক্তরা তার বোনের বাড়ীতে মাজার প্রতিষ্ঠা করেন। তারপর থেকেই শুরু হয়ে যায় সপ্তাহ ব্যাপী লেংটা পাগলের মেলা।

যদিও তার মৃত্যু তারিখের দু’একদিন আগে পড়ে এখানেই ৭ দিন ব্যাপী ওরশ হতো। দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে লঞ্চ, ট্রলার, বাস, মিনি বাস, ট্রাক, মেক্সী, প্রাইভেটকার, সিএনজি, অটোবাইক যোগে ওরশে আসে প্রায় ১০ লাখ মানুষ। তাঁরা নিয়ে আসেন গরু, মহিষ, ছাগল, মোরগ, ডিম, ডাল,চাউল, নগদ অর্থসহ বিভিন্ন মানতি জিনিসপত্র। দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ভক্তরা লেংটা বাবার দরবারে পূন্য, রোগমুক্তিসহ বিভিন্ন কামনা- বাসনা নিয়ে আসেন।

এছাড়াও ঢোল-কারার মাধ্যমে বাবার উদ্দেশ্যে ধর্মীয় গান ও মজমা বসায় পূন্যের আশায়।  এছাড়া অসংখ্য ভক্ত রয়েছেন তারা ল্যাংটা বাবার মাজার জেয়ারত করছেন এবং জিকির আসকার করে ঢোল বাদ্য,বাজনা বাজিয়ে মাজার ত্যাগ করছেন।কারণ তাদের মতে, ল্যাংটা ফকির ছিলেন একজন ভালো লোক। মেলাকে ঘিরে গতকাল বৃহস্পতিবার থেকেই অসংখ্য পাগল ও ভক্তবৃন্দদের ভিড়ে মুখরিত হয়ে উঠেছে মতলবের বেলতলী। দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ভক্তরা লেংটা বাবার দরবারে পূন্য, রোগমুক্তিসহ বিভিন্ন কামনা-বাসনা নিয়ে আসেন।

এছাড়াও ঢোল-কারার মাধ্যমে বাবার উদ্দেশ্যে ধর্মীয় গান ও মজমা বসায় পূন্যের আশায়। আর এই মেলাকে ঘিরে ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা পকেটমার, ছিনতাই, মলমপার্টি, হিজরা, প্রতারকদের তৎপরতা বেড়ে যায়।  দীর্ঘ ৪১ বছর যাবত মাজারের খাদেম হিসেবে দায়িত্ব পালন করা খাদেম লাল মিয়া জানান, আজ শুক্রবার থেকে হযরত শাহ্ সুফি সোলেমান (রঃ) লেংটা বাবার ওফাত দিবস উপলক্ষে ৭ দিন ব্যাপি মহাপবিত্র ওরশ মোবারক শুরু হচ্ছে। এ বছর পবিত্র মাহে রমজানের পবিত্রতা রক্ষার জন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে।

আমরা মাজার কমিটিও সে ব্যপারে আন্তরিক ও সর্তক রয়েছি। যাতে রমজানের পবিত্রতা নষ্ট না হয়। তাই রমজানের কারণে ওরশ একটু সংক্ষিপ্ত করা হয়েছে। ওরশ শরীফ সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্নভাবে সম্পন্ন করতে সকল প্রস্তÍুতি নেওয়া হয়েছে। লক্ষ লক্ষ লোকের মিলন মেলায় আল্লাহর অশেস মেহেরবানী আছে বিধায় প্রতিবছর শান্তিপূর্নভাবে সম্পন্ন হয়। নতুবা যে লোকের সমাগম তা প্রশাসনের একার পক্ষে সম্ভব হতোনা।

তিনি আরও জানান,মাজারের পবিত্র রক্ষা করার জন্য আমরা চাঁদপুর ও মতলব উত্তর উপজেলা প্রশাসন ও থানা প্রশাসনের কাছ থেকে সহযোগিতা চেয়েছি। তারা আমাদেরকে এই লক্ষ লক্ষ আশেকাকান ভক্তবৃন্দের সমাগম লেংটার মেলা যাতে শান্তিপূর্নভাবে সম্পন্ন হয় সেজন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।

মতলব উত্তর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোঃ মহিউদ্দিন বলেন, পবিত্র মাহে রমজানের পবিত্রতা রক্ষার্থে ওফাত দিবস উপলক্ষে শুধুমাত্র পবিত্র কোরআন তিলাওয়াত,যিকির আজকার,মিলাদ ও দোয়ার জন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে দু’দিন অনুষ্ঠানের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। বেলতলীতে মেলায় সকল প্রকার অপ্রীতিকর ঘটনা এড়ানোর জন্য পর্যাপ্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here