অনলাইনে ট্রেনের টিকিট-চার্জের ফাঁদে প্রতিদিন যাত্রীর গচ্চা ৩০ লাখ টাকা

0
অনলাইনে ট্রেনের টিকিট-চার্জের ফাঁদে প্রতিদিন যাত্রীর গচ্চা ৩০ লাখ টাকা

প্রেসনিউজ২৪ডটকমঃ মোঃ মাহফুজুর রহমান,গৌরীপুর(ময়মনসিংহ)সংবাদদাতা: ট্রেনের অনলাইন টিকিটে চার্জের ফাঁদে পড়ে প্রতিদিন যাত্রীদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে অন্তত ৩০ লাখ টাকা গচ্চা দিতে হচ্ছে। অথচ অনলাইন সেবার কারণে রেলের ব্যয় যেমন কমেছে, তেমনি কমেছে জনবল ব্যবহারের চাপও। বিপরীতে যেখানে অনলাইনে বেশি সুবিধা পাওয়ার কথা সাধারণ মানুষের, সেখানে নানা জটিলতায় ‘অনলাইন’ হয়ে উঠেছে বড় এক ভোগান্তির নাম। এর ওপর এবারের ঈদে শতভাগ টিকিট অনলাইনে বিক্রির ঘোষণা দিয়েছে রেল।

এতে একেবারেই সাধারণ মানুষ-যারা স্মার্টফোন বা কম্পিউটার ব্যবহার করতে পারে না তাদের মধ্যে বেড়েছে উদ্বেগ। রেলের হিসাব মতে, দেশে প্রতিদিন ১০৪টি আন্তঃনগর ট্রেনে গড়ে প্রায় ৭৩ হাজার টিকিটধারী যাত্রী চলাচল করে। যদিও বিনা টিকিটির সংখ্যা এর দ্বিগুণেরও বেশি। অনলাইনে টিকিট কাটার ক্ষেত্রে প্রতিটি টিকিটের জন্য যাত্রীদের ২০ টাকা করে ‘অনলাইন চার্জ’ অতিরিক্ত দিতে হয়। এমনকি টিকিট ফেরত দেওয়ার জন্যই প্রতি টিকিটের বিপরীতে একই হারে অতিরিক্ত টাকা কাটা হয়।

একে তো টিকিট পাওয়াই দুষ্কর, এর ওপর তা পেলে ওই টিকিট প্রিন্ট করতে প্রতি যাত্রীকে ১০ থেকে ২০ টাকা ব্যয় করতে হয়। এর ওপর ইন্টারনেট খরচ, বিদ্যুৎ খরচ বা কম্পিউটার দোকানে গেলে সেবা ফি তো রয়েছেই। যাত্রীরা বলছেন, ‘অনলাইনে ট্রেনের শতভাগ টিকিট’ ব্যবস্থা চালু হলে এসব যাত্রীর এ গচ্চার পরিমাণ দৈনিক অন্তত ৩০ লাখ টাকা হবে। রেলের কর্মকর্তারাও এ হিসাবের সঙ্গে একমত পোষণ করেছেন। এদিকে অনলাইনে কাটা টিকিটি যাত্রীরা শতকরা ৯৮ শতাংশ ক্ষেত্রেই নিজেরা প্রিন্ট নিয়ে ভ্রমণ করেন।

ফলে রেলকে এসব টিকিটের বিপরীতে কোনো প্রিন্ট দিতে হয় না। ফলে প্রিন্ট খরচসহ কয়েকটি ক্ষেত্রে ব্যয় কমে আসে রেলের। চাপ কমে জনবলেরও। এখন শতভাগ টিকিট অনলাইনে হলে ইতোমধ্যে কয়েক কোটি টাকার প্রিন্ট করা টিকিট, প্রিন্টের কালি ও কম্পিউটার যেমন অব্যবহৃত থাকবে, তেমনি বসে থাকতে হবে ‘বুকিং সহকারীদেরও’। সাধারণ মানুষের টিকিট পাওয়া নিশ্চিত করতে হবে। টিকিট কেনায় অতিরিক্ত টাকা নেওয়া যাবে না। অনলাইনে টিকিট কাটলে ৪০ টাকা মূল্যের টিকিটে ২০ টাকা অতিরিক্ত চার্জ হিসাবে কেটে নেওয়া হয়।

এটা স্মার্ট বা ডিজিটাল সেবা বলা যায় না। ঢাকার আশপাশের বিভিন্ন স্টেশনে আন্তঃনগর ট্রেনের গড় ভাড়া ৫০ থেকে ৮০ টাকা। এসব টিকিট কাটতে গেলেও ২০ টাকা সঙ্গে সঙ্গেই কেটে নেওয়া হয়। ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী জিন্নাত নাহার নূর বললেন, প্রায়ই ঢাকা যাওয়া হয়। অনলাইনে টিকিট কাটলে ২০ টাকার সঙ্গে নেট, বিদ্যুৎ বিলসহ প্রায় ৩০-৪০ টাকা খরচ হয়। আবার কাউন্টারেও টিকিট পাওয়া যায় না। টিকিট মূল্যের চেয়ে দ্বিগুণ দামে কালোবাজারিদের কাছ থেকে টিকিট কিনতে হয়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রেলওয়ে বাণিজ্যিক বিভাগের এক কর্মকর্তা জানান, বর্তমানে ৫০ শতাংশ টিকিট কাউন্টারে বিক্রি হচ্ছে অনলাইন নিবন্ধনের মাধ্যমে। ১ এপ্রিল থেকে শতভাগ টিকিট অনলাইনে বিক্রি হবে। নতুন পদ্ধতিতে কাউন্টারে ৭৭ শতাংশ টিকিট বিক্রি হচ্ছে। অবিক্রীত থেকে যাচ্ছে ২০ থেকে ২২ শতাংশ। অনলাইনে শতভাগ টিকিট বিক্রি শুরু হলে অবিক্রীত টিকিটের সংখ্যা বাড়বে। তিনি বলেন, অতিরিক্ত টাকা ব্যয় করে যাত্রীরা অনলাইনে টিকিট ক্রয় করছে। অতিরিক্ত টাকার কোনো অংশ রেল পাচ্ছে না অনলাইনভিত্তিক যারা এ সেবা দিচ্ছে, তারাই লাভবান হচ্ছে।

রেল নিরুপায়, কারণ রেলের নিজস্ব কোনো আইটি-ব্যবস্থাপনা কিংবা টিকিট বিক্রয়ের সক্ষমতা নেই। রেলওয়ে পরিবহণ দপ্তর সূত্র বলছে, বিনা টিকিটের সংখ্যা বাড়ছে। যাত্রীদের অভিযোগ, অনলাইনে টিকিট কাটতে গিয়েও চরম দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে যাত্রীদের। ঘণ্টার পর ঘণ্টা নেট চালিয়েও টিকিট কাটতে পারছেন না। নেট বিল বাড়ার সঙ্গে সময়ও নষ্ট হচ্ছে। ৮২টি স্টেশন থেকে অনলাইনের মাধ্যমে কাউন্টার থেকে টিকিট বিক্রি করছে ‘সহজ’ নামের একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান। খোদ রেলওয়ে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, সহজেই দুর্ভোগ রয়েছে।

টিকিট বিক্রয়ে এদেরও বিভিন্ন সমস্যা রয়েছে। সেবা বাড়ানোসহ অত্যাধুনিক সুযোগ-সুবিধা পাওয়া এবং স্টেশনের মানোন্নয়নের জন্য টিকিটের দামের ওপর এই অতিরিক্ত টাকা করা হয়নি। মূলত রেলকে কেন্দ্র করে তৃতীয় পক্ষ লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। এ বিষয়ে রেলওয়ে অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন) সরদার সাহাদাত আলী বলেন, শতভাগ টিকিট অনলাইনে দেওয়া হয়েছে যাত্রীদের কল্যাণেই। আমরা ঈদের পর বিষয়টি দেখি, যাত্রীদের কী কী প্রতিক্রিয়া আসে।

আমরা আশা করছি, অনলাইনে শতভাগ টিকিট কাটতে সাধারণ যাত্রীরা অভ্যস্ত হয়ে উঠবে। অনলাইনে টিকিট কাটতে টিকিটের প্রকৃত মূল্যের চেয়ে অতিরিক্ত টাকা নেওয়া হচ্ছে। এ বিষয়টি সেবা সংস্থার সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী হচ্ছে। আমাদের কিছু করার নেই। তবে আমরা সেবা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চেষ্টা চালাচ্ছি। অনলাইনে শতভাগ টিকিট যাত্রীদের কল্যাণ বয়ে আনতে-কালোবাজারি বন্ধ হবে, এমন যুক্তি মানতে চাইছেন না যাত্রীরা।

ছিদ্দিকুর রহমান নামে এক যাত্রী বলেন, ‘কাউন্টার থেকে টিকিট পাওয়াই যেখানে দুষ্কর সেখানে সবাই চায় কোনো মতে গন্তব্যে পৌঁছতে। সাধারণ মানুষ এমন নিয়ম-পদ্ধতি না বুঝলেও-প্রতিবাদ করতে পারছে না। পূবার্ঞ্চল রেলের প্রধান বাণিজিক কর্মকর্তা (সিসিএম) নাজমুল ইসলাম বলেন, অনলাইনে শতভাগ টিকিট বিক্রির সব প্রস্তুত সম্পন্ন হয়েছে।

টিকিটের বিপরীতে যে অতিরিক্ত টাকা নেওয়া হচ্ছে, সেটা রেল নিচ্ছে না। তিন মাসের মজুত প্রিন্ট করা টিকিট আমাদের স্টোরে থাকে। সব টিকিট অনলাইনে বিক্রি হলে, এসব টিকিট কাজে লাগবে না। তিনি বলেন, নতুন নিয়ম পুরোপুরি বাস্তবায়ন হলে নিশ্চয় যাত্রীসেবা কাঙ্ক্ষিত পযার্য়ে পৌঁছবে।

 

 

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here