মহেশপুরে ডাঃ আতিবুর রহমানের দূর্নীতি প্রাণী সম্পদ প্রদর্শণী মেলার দেড় লাখ টাকা কোথায় গেলো

0
মহেশপুরে ডাঃ আতিবুর রহমানের দূর্নীতি প্রাণী সম্পদ প্রদর্শণী মেলার দেড় লাখ টাকা কোথায় গেলো

প্রেসনিউজ২৪ডটকমঃ  জিয়াউর রহমান জিয়া,(মহেশপুর)ঝিনাইদহঃ হাতে গোনা কয়েকটি প্রাণী নিয়ে শুরু হয় ঝিনাইদহের মহেশপুরে দায়সারা ভাবে (এলডিডিপি) প্রকল্পের আওতায় প্রাণী সম্পদ প্রদর্শণী মেলা। সরকারী ভাবে প্রাণী সম্পদ প্রদর্শণী মেলা নামে ১২ টি খাতে আড়াই লাখ টাকার বাজেট দেওয়া হয়। সেই প্রাণী সম্পদ প্রদর্শণী মেলার সিংহভাগ টাকা কোথায় গেলো।

প্রাণী সম্পদ প্রদর্শণী মেলার বাজেটকে তোয়াক্কা না করে উপজেলা প্রানী সম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ আতিবুর রহমান নিজের ইচ্ছামত এ মেলার আয়োজন ও সমাপ্তি করেন। দায়সারা ভাবে মেলার আয়োজনে ফিতাকেটে ও মেলা প্রাঙ্গন ঘুরে আলোচনা সভা উপস্থিত না থেকে মেলা প্রাঙ্গন ত্যাগ করেন মেলার প্রধান অতিথি এমপি শফিকুল আজম খান চঞ্চল ও মেলার সভাপতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নয়ন কুমার রাজবংশী।  নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক উপজেলা প্রানী সম্পদ অধিদপ্তরের কয়েকজন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন,প্রানী সম্পদ কর্মকর্তা কোনো বিষয়ে তিনি এ অফিসের কারো সাথে শিয়ার করেন না। এমনকি এ অধিদপ্তরের অনেককে বলাই হয়নি মেলার বিষয়টি।

তিনি যেটা বোঝেন তার ইচ্ছামতই করে থাকেন। এ বছর (এলডিডিপি) প্রকল্পের আওতায় প্রাণী সম্পদ প্রদর্শণী মেলার জন্য বাজেট ধরা হয়েছে ২ লাখ ৪৯ হাজার টাকা। বাজেটে ১২টি খাতে (১) ২টি ব্যানার বাবদ ধরা হয়েছে ৩ হাজার টাকা, (২) প্যান্ডেল, স্টেস,চেয়ার, ত্রিপল,ফ্যান, সাইন্ড,ডেকোরেশন ও ৫০টি চেয়ার বাবদ ধরা হয়েছে ৬৯ হাজারটাকা, (৩) দাওয়াতী চিঠি বাবদ ৫ হাজার টাকা,(৪) চিপ গেস্ট সম্মানী ৯ হাজার টাকা, (৫) ভিআইপি খাবার ৪ শ’ টাকা করে ৫০ জনের জন্য ২০ হাজার টাকা,(৬) সাধারন খাবার ২০০ টাকা করে ৩শ’ জনের জন্য ৬০ হাজার টাকা,(৭) ২০০ টাকা করে ৫০টি পশু খাবারের জন্য ১০ হাজার টাকা,(৮) ২০০ টাকা করে ৫০টি পশুর জন্য ঔষধ ৫ হাজার টাকা, (৯) ২৫০ টাকা করে ৫০টি পশুর জন্য খাদ্য পাত্র বাবদ ১২ হাজার ৫ শ’ টাকা, (১০) ৩টি পুরস্কার বাবদ ১০ হাজার টাকা করে ৩০ হাজার টাকা, (১১) পুশু পরিবহন ও যাতায়াত বাবদ ২০ হাজার টাকা ও (১২) মেলায় আসা সাধারন জনগনের আপ্পায়নের জন্য ধরা হয়েছে ৫ হাজার টাকা।

বাজেটের একমাত্র চিপ গেস্ট সম্মানী ছাড়া সব ক্ষেত্রেই ভুয়া বিল ভাউচার দেখিয়ে দূর্নীতির মাধ্যমে বাজেটের সিংহভাগ অর্থ নিজেই আত্নসাৎ করেছেন প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ আতিবুর রহমান। বিভিন্ন সুত্রে জানাগেছে, মেলার ডেকোরেশন বাবদ ৬৯ হাজার টাকার বরাদ্দ থাকলেও তিনি মাত্র ১৬ হাজার টাকায় কন্ট্রাক করেন খান ডেকোরেটরের মাধ্যমে ডেকোরেশন করা হয়। ৫০ জনের জন্য ভিআইপি ও ৩০০ জনের জন্য সাধারন খাবার বাবদ ৮০ হাজার টাকা বরাদ্দ থাকলেও তিনি ক্যাফে মদিনা নামক বিরানী হাউজ থেকে ১৩০ টাকা দরে ১৬৪ পেকেট সাধারন খাবার ক্রয় করেন।

ক্যাফে মদিনা বিরানী হাউজের সত্তাধীকারী রিপন এ প্রতিবেদককে জানান,গত শনিবার (২৫ ফেব্রুয়ারী) পশু হাসপাতালে ১৩০ টাকা দরে ১৬৪ পেকেট খাবার দেওয়া হয়েছে। ভাউচারের মাধ্যমে বিল করা হয়েছে কিনা জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন,কোন ভাউসার কর হয়নি,ওনারা বিলাংক ভাউচার নিয়ে গেছেন।  পুশু খাবার,পরিবহন,ওষুধ,পশু খাদ্য পাত্র ও মেলায় আসা সাধারন জনগনের আপ্পায়নের বরাদ্দ থাকলেও তিনি ব্যায় না করে সম্পুর্ন অর্থ নিজেই আত্নসাৎ করেছেন। মেলায় ৩ জনকে পুরস্কারের জন্য ৩০ হাজার টাকা বরাদ্দ থাকলেও প্রথম পুরস্কার বাবদ ৪ হাজার টাকা,দ্বীতিয় পুরস্কার বাবদ সাড়ে ৩ হাজার ও তৃতীয় পুরস্কার বাবদ দেড় হাজার টাকা করে দেওয়া হয়েছে।

দ্বীতিয় পুরস্কার প্রাপ্ত শাহীন জানান, ১৫শ’ টাকা গাড়ি ভাড়া দিয়ে গরু নিয়ে মেলায় অংশগ্রহন করেছিলাম। মেলা শেষ হওয়ার ২ দিন পর পশু হাসপাতাল থেকে আমাকে জানানো হয় আপনি দ্বীতিয় হয়েছেন। আপনি এসে পুরস্কার নিয়ে যান। তিনি আরো জানান,পুশু খাবার ও পরিবহনের জন্য কিছুই দেওয়া হয়নি, ২৭ ফেব্রুয়ারী আমাকে ১টা হলুদ খাম দিয়ে কাগজে সই করতে বলেন। খাম খুলে দেখি খামের ভেতর ৬টি ৫০০ ও ৫টি ১০০ টাকার নোট মোট ৩৫শ’ টাকা পুরস্কার হিসেবে আমাকে দেওয়া হয়। তৃতীয় পুরস্কার হিসেবে দেড় হাজার টাকা দেওয়ার কথা স্বীকার করলেও রাজনৈতিক কারন দেখিয়ে এ বিষয়ে কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি তৃতীয় পুরস্কার প্রাপ্ত ব্যাক্তি।

মেলা শেষ হওয়ার ৩দিন পর প্রাণী সম্পদ অফিসে সাংবাদিকদের উপস্থিতি দেখে হাসপাতালের পাশে বসবাসকারী আছিয়া খাতুন জানান, মেলায় ৪/৫টি ছাগল নিয়ে এসেছিলাম। আমাকে কিছুই দেওয়া হয়নি। আমার ছাগল গুলো সারাদিন না খেয়ে অসুস্থ্য হয়ে গেছে। পরের দিন আবার হাসপাতালে নিয়ে এসে চিকিৎসা দিয়ে নিয়ে গেছি। তিনি আরো জানান,আমি নিজে অসুস্থ্য মেলায় আসবোনা,আমাকে ফোন দিয়ে নিয়ে আসা হয়েছে। তার পরও খাবারতো দূরের কথা ১টা টাকাও আমাকে দেয়নি।

সাংবাদিকদের কাছে প্রশ্ন করে বলেন আমি পাইনে এ গুলো ? উপজেলা প্রানিসম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ আতিবুর রহমানের নিকট মেলার বাজেট সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে তিনি এ প্রতিবেদককে জানন,উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এখানকার সভাপতি,ওনার দিক নির্দেশনা মোতাবেক সব ঠিকমত করা হয়েছে। ওনার সাথে কথা বলতে পারেন। মেলায় কত টাকার বাজেট এসেছে তিনি জানেন। বক্তব্য নেওয়ার জন্য অনুষ্ঠানের সভাপতি মহেশপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নয়ন কুমার রাজবংশীর মুঠো ফোনে (০১৭৩৩-০৭৪৬৩৮) একাধিকবার ফোন করলেও তিনি ফোন রিসিফ করেননি। জেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) ডাঃ মনোজিৎ কুমার জানান, মেলা করার জন্য বরাদ্ধ দেওয়া হয়েছে।

সে টাকা যদি কেউ মেরে খায় তাহলে উদ্ধর্তন কর্মকর্তারা দেখবেন। খুলনা বিভাগীয় পরিচালক ডাঃ লুৎফর রহমান জানান, প্রাণী সম্পদ প্রদর্শণী মেলার টাকা যদি কেউ আত্নসাৎ করে থাকে তাহলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তার পরও বিষয়টি আমি নিজে দেখবো। তার পর ব্যবস্থা।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here