পাওনা টাকা চাওয়ায় তালতলীতে গৃহবধূকে মারধর,গরম রডের ছ্যাকা, হাসপাতালে ভর্তি

0
পাওনা টাকা চাওয়ায় তালতলীতে গৃহবধূকে মারধর,গরম রডের ছ্যাকা, হাসপাতালে ভর্তি

প্রেসনিউজ২৪ডটকমঃতালতলী (বরগুনা) প্রতিনিধি  বরগুনার তালতলী উপজেলার সোনাকাটা ইউনিয়নের লালুপাড়া গ্রামে শুক্রবার রাতে পাওনা টাকা চাওয়ার অপরাধে জাহানারা (৪০) নামে এক গৃহবধূকে ঘরে আটকে গরম লোহার রড দিয়ে ছ্যাকা দেওয়া ও মারধরের অভিযোগ পাওয়া গেছে শ্বাশুরী, জ্যা, ভাসুর ও ননদের বিরুদ্ধে।

আহত ওই গৃহবধূকে গুরুতর অবস্থায় উদ্ধার করে স্বজনরা শনিবার সকালে আমতলী হাসপাতালে ভর্তি করেছে। জানা গেছে, বরগুনার তালতলী উপজেলার সোনাকাটা ইউনিয়নের লালুপাড়া গ্রামের মৃত অব্দুল খালেক হাওলাদারের ৪ ছেলের মধ্যে বাবুল হাওলাদার বাদে ৩ ছেলে মালয়েশিয়া থাকে। প্রবাসী আনোয়ার হোসেন হাওলাদারের স্ত্রী রাজিয়া বেগম তার জ্যা জাহানারা বেগমের মাধ্যমে জাহানারার ভাই হাবিব চৌকিদারের ছেলে শাহিনকে বিদেশ পাঠানোর কথা বলে ২০২১ সালের ১৬ জুলাই ৩ লক্ষ টাকা আনেন। টাকা নেওয়ার পর তারা শাহিনকে বিদেশে না পাঠিয়ে ঘুরাতে থাকেন।

এ নিয়ে পারিবারিক ভাবে তাদের মধ্যে ব্যাপক দ্বন্দ্ব দেখা দেয়। বাবুল হাওলাদার এবং তার স্ত্রী বাদে পরিবারের সবাই এক পক্ষ হয়ে যাতে তাদের নেওয়া ৩ লক্ষ টাকা ফেরৎ দিতে না হয় সে জন্য বাবুল এবং তার স্ত্রী জাহানারা বেগকে বিভিন্ন ভাবে হয়রানি করতে থাকে। বাবুলের মা এক পর্যায়ে বাবুলের বিরুদ্ধে আদালতে ঘর চুরি মামলা করেন। মামলায় বাবুল গত বৃহস্পতিবার জেলহাজতে যায়। পরের দিন শুক্রবার রাতে জাহানারা বেগম তার জ্যা রাজিয়া বেগমের নিকট টাকা চাইতে গেলে রাজিয়া বেগম, তার শ্বাশুরী সেতারা বেগম, ননদ জেসমিন বেগম ও ভাশুর আবুল হোসেন জাহানারা বেগমকে ঘরে আটকে মেহগনি গাছের ডাল দিয়ে ব্যাপক মারধর করে।

এক পর্যায়ে চুলায় রড পুরিয়ে গরম করে মধ্যযুগীয় কায়দায় জাহানারা বেগমের ডান গালে, পিঠে, দুই হাতে বাম পায়ে ছ্যাকা দিয়ে গুরুতর জখম করে। রডের ছ্যাকায় জাহানারা বেগমের গাল, হাতপায়ে এবং পিঠের বিভিন্ন জায়গায় ফোসকা পরে কালো দাগ হয়ে ফুলে উঠে। গুরুতর এই নির্যাতনের সময় জাহানারা বেগম ডাক চিৎকার দিলেও ভয়ে কেউ এগিয়ে আসেনি। স্থানীয়দের মাধ্যমে খবর পেয়ে রাত ১১ টার সময় জাহানারা বেগমের ভাই নিশানবাড়িয়া ইউনিয়নের মেনিপাড়া গ্রামের বাসিন্দা হাবিব চৌকিদার তার বোনকে উদ্ধার করে বাড়ি নিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা দেন। পরের দিন শনিবার সকালে মুমুর্ষ অবস্থায় তাকে আমতলী হাসপাতালে এনে ভর্তি করেন।

আমতলী হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে কান্না জড়িত কন্ঠে জাহানারা বেগম বলেন, মোর ভাইর ছেলেকে বিদেশে পাঠানের লইগ্যা ৩ লক্ষ টাহা আইন্যা মোর জ্যা রাজিয়া বেগমেড্ডে দেই। ২ বছর অইয়া গ্যাছে বিদেশে পাডায় নাই। এই টাহা চাওয়ায় মোর শ্বশুরী সেতারা বেগম, জ্যা রাজিয়া বেগম, ননদ জেসমিন বেগম, ভাসুর আবুল হোসেন এক অইয়া মোর ব্যামালা নির্যাতন করে। লাডি দিয়া মাইর ধইর করে। হেইয়ার পর মোরে ঘরে আটকাইয়া লোয়ার রড পুইর‌্যা গরম কইর‌্যা মোর হারা গায়ে পুইর‌্যা দেয়। তিনি আরো বলেন, মোর ভাইর টাহা না দেওয়ার লইগ্যা সবাই এক অইয়া মোর স্বামীরে মিথ্যা মামলা দিয়া জেলে পাডায়। মুই এইয়ার বিচার চাই।

জাহানারা বেগমের ভাই হাবিব চৌকিদার অভিযোগ করে বলেন, মালয়েশিয়া প্রবাসী আনোয়ার হোসেনের স্ত্রী রাজিয়া বেগম আমার নিকট থেকে আমার ছেলেকে মালয়েশিয়া পাঠানোর জন্য আমার বোন জাহানারা বেগমের মাধ্যমে ৩ লক্ষ টাকা নেয়। ২ বছর অতিবাহিত হলেও আমার ছেলেকে বিদেশেও পাঠায়নি টাকাও ফেরৎ দেয়নি। টাকা চাওয়ার অপরাধে আমার বোন জাহানারাকে বেদম মারধর করে শরীরে রড পুরে ছ্যাকা দিয়ে গুরুতর আহত করেছে। আমি এঘটনার বিচার চাই।  অভিযুক্ত সেতারা বেগম, রিজিয়া বেগম এর পক্ষে ভাশুর আনোয়ার হোসেন হাওলাদার মারধরের অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমাদের কাছে কোন টাকা পয়সা পাবে না।

এছাড়া জাহানারা বেগমকে আমরা কোন মারধর করিনি। আমাদেরকে হয়রানি করার জন্য এসব মিথ্যা অভিযোগ করছে।  আমতলী হাসপাতালের জরুরী বিভাগের চিকিৎসক ডা. লুনা বিনতে হক বলেন, জাহানারা বেগমের শরীরে আগুনে পুরে ফোসকা পড়ার অনেক দাগ রয়েছে। তালতলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কাজী শাখাওয়াত হোসেন তপু বলেন, এ বিষয়ে এখনো কোন অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পাওয়া গেলে তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।#
 

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here