প্রেসনিউজ২৪ডটকমঃ মুন্সীগঞ্জ প্রতিনিধিঃ বহুল আলোচিত স্কুলছাত্রী জেসিকা মাহমুদ(১৬) ওরফে জেসি হত্যার রহস্য উদঘাটন করেছে র্যাব। মামলার প্রধান আসামী বিজয় রহমানকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব।রবিবার(৫ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র্যাবের মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে আইন ও গণমাধ্যম শাখার প্রধান কমান্ডার খন্দকার আল-মঈন এসব তথ্য জানান।তিনি বলেন, শনিবার (৪ ফেব্রুয়ারি) রাতে র্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখা ও র্যাব-৩ এর একটি আভিযানিক দল ওয়ারী এলাকা থেকে বিজয় রহমানকে গ্রেপ্তার করা হয়।
বিজয় ২০১৯ সালে একই স্কুলে পড়ুয়া অন্য আসামী আদিবা আক্তারের সাথে প্রেমের সম্পর্কে জড়ায়। আদিবা আক্তারের সাথে সম্পর্ক চলাকালীন বিজয় ২০২২ সালের জানুয়ারি মাসে জেসিকার সাথেও প্রেমের সম্পর্কে জড়ায়। বিজয় উভয়ের সাথে প্রেমের সম্পর্ক বজায় রেখে ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে অন্য আসামী আদিবার সাথে গোপনে বিয়ে করে। পরবর্তীতে বিজয় এবং অন্য আসামী আদিবার গোপনে বিয়ের বিষয়টি জেসিকা জানতে পারে এবং বিজয়ের সাথে তার বিভিন্ন কথোপকথনের স্ক্রিনশর্ট আদিবার মেসেঞ্জারে পাঠায়।
বিষয়টি নিয়ে বিজয় ও আদিবার মাঝে বিভিন্ন সময় কথা কাটাকাটি হলে তাদের মধ্যে সম্পর্কের অবনতি শুরু হয়। সংবাদ সম্মেলনে তিনি আরও বলেন, ২০২২ সালের ডিসেম্বর মাসের শেষের দিকে সে আদিবার সাথে আলোচনা করে এবং চলতি বছরের ১ জানুয়ারি উভয়ে মিলে জেসিকাকে বিজয়ের বাসার ছাদে ডেকে উচিত শিক্ষা দেওয়ার পরিকল্পনা করে। পূর্ব-পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ঘটনার দিন বিকেলে আদিবা জেসির সাথে দেখা করলে বিজয়ের সাথে জেসিকার বিভিন্ন সময়ের কথোপকথোনের স্ক্রিনশট দেখায় এবং এ সমস্যা মীমাংসা করার জন্য আদিবা জেসিকে বিজয়ের বাসার ছাদে নিয়ে আসে।
পরবর্তীতে আদিবা ফোন করে বিজয়কে ছাদে আসতে বলে। অতঃপর সেখানে তাদের মধ্যে বাগবিতন্ডা ও হাতাহাতির একপর্যায়ে বিজয় ও আদিবা জেসির গলাটিপে ধরলে শ্বাসরোধে অজ্ঞান হয়ে পড়ে। পরবর্তীতে নিজেদের নির্দোষ প্রমাণ করার জন্য জেসিকাকে ছাদ থেকে লাফিয়ে পড়ার নাটক সাজানোর উদ্দেশ্যে বিজয় ও আদিবা মিলে জেসিকে অজ্ঞান অবস্থায় ছাদ থেকে নামিয়ে এনে রাস্তার পাশে ফেলে রেখে বাসার ভেতর চলে আসে। পরবর্তীতে পাশের বাসায় থাকা বিজয়ের চাচা জেসিকাকে রাস্তার পাশে পড়ে থাকতে দেখে চিৎকার শুরু করলে বিজয় এবং তার পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা বাসা থেকে নেমে আসে।
একপর্যায়ে বিজয় এবং তার বাবাসহ স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় তাকে মুন্সীগঞ্জ সদর হাসপাতালে নিয়ে যায়। পরবর্তীতে বিজয় জেসির ভাইকে জেসির অসুস্থতার কথা বলে মুন্সীগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে জরুরি ভিত্তিতে আসতে বলে। জেসির ভাই হাসপাতালে এসে পৌঁছলে কর্তব্যরত চিকিৎসক জানান জেসি মৃত্যুবরণ করেছে। মৃত্যুর ঘটনা শুনে বিজয় এবং আদিবা কৌশলে সেখান থেকে পালিয়ে যায়। জেসির লাশ ময়নাতদন্ত শেষে জেসির ভাই জানতে পারে তাকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছে। পরবর্তীতে জেসির ভাই মুন্সীগঞ্জ জেলার সদর থানায় বিজয় ও আদিবাসহ আরও ১-২ জন অজ্ঞাতনামা আসামী করে একটি হত্যা মামলা করে।
র্যাবের সংবাদ সম্মেলনে র্যাব জানায়, জেসিকা মাহমুদ জেসি মুন্সীগঞ্জের একটি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে দশম শ্রেণিতে পড়তো। ৩ জানুয়ারি আনুমানিক বিকেল ৪টার দিকে আদিবা জেসিকার বাসায় গিয়ে জেসিকাকে বিজয়ের বাসার ছাদে নিয়ে যায়। বিজয় মুন্সীগঞ্জের একটি কলেজ থেকে ২০২২ সালে এইচএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে। সে জেসি হত্যার পর থেকে মুন্সীগঞ্জ জেলার সিরাজদিখান এলাকায় তার বন্ধুর বাড়িতে ৪ দিন আত্মগোপনে থাকে।
সেখানে সে নিজেকে নিরাপদ মনে না করে পরবর্তীতে ফরিদপুরের একটি মাজারে ছদ্মবেশে ২২দিন আত্মগোপনে থাকে। একপর্যায়ে তার সন্দেহ হয়, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাকে গ্রেপ্তারের লক্ষে এখানে অভিযান চালাতে পারে। সেই আশংকা থেকে সে ১ ফেব্রুয়ারি ওয়ারী এলাকায় তার এক ঘনিষ্ঠ বন্ধুর বাসায় এসে আত্মগোপনে থাকে।