ভাতের কষ্টে রিকসা লইয়া রাস্তায় নামছি,সম্মানের সাথে পরিশ্রম কইরা বাঁচতে চাই

0
ভাতের কষ্টে রিকসা লইয়া রাস্তায় নামছি,সম্মানের সাথে পরিশ্রম কইরা বাঁচতে চাই

প্রেসনিউজ২৪ডটকমঃ ‌মোঃ আন‌িছুর রহমান র‌লিন মুন্সীগঞ্জ প্রতি‌নি‌ধিঃ জন্মের পর থেইকা কষ্ট করতাছি।এক বেলা খাইলে আরেক বেলা নাই খাইয়া রইছি।খিদার জ্বালায় মাঝে মাঝে মইরা যাইতে মনচাইত। বিভিন্ন জায়গায় সম্মান নিয়া কাজ করতে চাইছি।নিয়মিত কোন কাজ পাই নাই। শেষ পর্যন্ত ভাতের কষ্টে রিকসা লইয়া রাস্তায় নামছি।এহন সম্মানের সাথে পরিশ্রম কইরা বাঁচতে চাই। গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় কথা গুলো বলছিলেন মুন্সিগঞ্জ সদর উপজেলার বজ্রযোগনী ইউনিয়নের আদর্শ গুচ্ছগ্রামের বাসিন্দা সাহিদা বেগম(৩৮)।

তিনি সদর উপজেলার গজারিয়াকান্দি এলাকার প্রয়াত নুর হোসেনের মেয়ে। তিনি বর্তমানে পেশায় একজন নারী ব্যাটারিচালিত রিকসার চালক।সাহিদা সঙ্গে কথা বলে জানাযায়, তার জ্ঞান হওয়ার আগেই তাকে ও বেলাল নামে তাঁর ছোট এক ভাইকে রেখে তাদের বাবা মারা যান।তাদের তিন পেটের খাবার যোগাতে সাহিদার মা মানুষের বাসায় কাজ করতেন।এতে তাদের তিন বেলা খাবার জুটত না। ৯ থেকে ১০ বছর বয়সে তিনিও মানুষের বাসায় গৃহপরিচারিকার কাজ শুরু করেন।

কোন রকমে খেয়ে পড়ে জীবন চলছিল তাদের।তাদের নিজেদের কোন বাড়িঘর ছিল না। অন্য মানুষের বাড়িতে থাকতেন তারা। ২০০০ সালে দিকে মাত্র ১৩-১৪ বছর বয়সে সদর উপজেলার রামপাল ইউনিয়নে কামরুল ইসলাম ওরফে বাবু নামে এক ব্যক্তির সঙ্গে বিয়ে হয় তার সাহিদা বলেন,ভাবছিলাম বিয়ার পর কষ্টের দিন দিন শেষ হইয়া যাইবো।বিয়ার পাচঁবছ পর একটি মাইয়া হইলো। স্বামী মাদক খাওয়া শুরু করলো।ঠিকমত কাজ করতনা।প্রতিদিন কারনে-অকারনে মারত।মাইয়ার বয়স যখন দুইবছর স্বামী দ্বিতীয় বিয়া কইরা আমাগো ছাইড়া চইলা যায়।

আবারো ছোট মাইয়াডারে নিয়ে শুরু অয় দুর্বিষহ জীবন। মায়ের সংসারে গিয়ে উঠলাম।এর মধ্যে ছোট ভাই বিয়া কইরা আমাগো ছাইড়া চইলা যায়। সরকার বজ্রযোগনী গুচ্ছগ্রামে জায়গা দেয়।সেখানে ঘর বানাই। আমার মা ও আমি মানুষের বাড়িতে জি এর কাজ শুরু করলাম। মানুষের বাড়িতে কাজে গেলে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করত। এই দামের বাজারে সংসার চলত না।উল্টা বিভিন্ন ধরনের সমস্যায় পড়তে হইতো। সংসারে অভাবের কারণে মেয়েরে এইট পর্যন্ত পড়াইয়া এক বছর আগে বিয়া দিয়া দিছি। এরপরও সংসারে অভাব কমে নাই এরপর প্যাডেলের রিকসা ভাড়া নিয়েছিলাম। দুই সপ্তাহ কোনরকম চালাই।

প্যাডেলের রিকসা চালানোর শক্তি শরীরে না থাকায় সে সময় রিকসা চালানো ছাড়তে বাধ্য হই।এরপর একটি ফ্যাক্টরিতে কাজ লই, সেখানেও কাজ বন্ধ হইয়া যায়।বেকার হইয়া যাই। মা মানুষের কাছ থেকে সাহাইয্য আনতো।ওইডা দিয়া এক বেলা খাইলে আরেক বেলা না খাইয়া থাকতাম।কত কিছু করলাম।শুধু মাত্র ভাতের অভাবে শেষ পর্যন্ত ভাড়ায় চালিত ব্যাটারি রিকসা লইয়া রাস্তায় নামলাম। এদিন সন্ধ্যা সাতটার দিকে বজ্রযোগিনী ইউনিয়ন কার্যালের সামনের রাস্তায় বসে ছিলেন সাহিদার মা রানু বেগম(৭০)। রানু বেগম বলেন,রাস্তায় মাইয়া মানুষের কত ধরনে বিপদ থাকে।এর পরেও অভাবের কারনে মেয়ে রিকসা চালায়। না খাইয়া থাকমু,তাই বাঁধা দেই না।

মেয়ের জন্য মনডা কান্দে।দুঃশ্চিন্তাও হয়।এ জন্য প্রতিদিন সন্ধ্যার পর থেকে মাইয়ার বাড়ি ফিরার অপেক্ষায় রাস্তায় বইসা থাকি। সাহিদা আসলে এক সাথে মা-মেয়ে বাড়ি ফিরি।এর আগে এদিন দুপুরে সাহিদা বেগমের খোঁজে তার বাড়ির পথ ধরে হাটতে থাকে এ প্রতিবেদক।সাহিদার বাড়ির কথা জিঙ্গেস করতেই কয়েকজন নারী ভাঙা দোচালা একটি তালা বদ্ধ টিনের ঘর দেখিয়ে দেন।এ সময় সাহিদার প্রতিবেশী রাবেয়া বেগম বলেন,সাহিদা রিকসা চালাতে বের হয়েছে।তার মা রাস্তায় বসে আছে।বাড়িতে কেউ না থাকায় ঘরে তালা ঝুলছে।ডলি বেগম নামে আরেক প্রতিবেশি বলেন,সাহিদার পুরোটা জীবন কষ্টের।কোন দিক দিয়া একটুও সুখ নাই অর।

সামাজিক পরিবেশে একজন নারীর পক্ষে রিকসা চালানো কতটা লজ্জার বিষয়,এটা একজন নারীই ভালো জানে।গুচ্ছগ্রামের বাসিন্দা ও গ্রাম পুলিশ তাসলিমা আক্তার বলেন, সাহিদা খুব কষ্টে জীবন যাপন করছিল। আমি তাকে রিকসা চালানোর জন্য উৎসাহ দেই। কাজ করা সম্মানের এটা বুঝাই।আমার এক চাচার সঙ্গে কথা বলে তাকে একটি রিকসার ব্যবস্থা করে দিয়েছি। সম্মানের সাথে সে কাজ করছে।রিকসা চালক কামাল সৈয়াল বলেন, রিকসা চালানো খুব কষ্টের কাজ।রোদে পুড়তে হয়, বৃষ্টিতে ভিজতে হয়।লোকলজ্জাতো আছে।এর পর রাত-বিরাতে ডাকাতের ভয়তো থাকেই। এসব কিছু পেছনে ফেলে একজন নারী হয়ে সাহিদা রিকসা চালাচ্ছে।

হালাল উপার্জনে সংসারের হাল ধরেছে।এটা অনেক সাহসের কাজ।আমি তাকে সালাম জানাই।তবে কেউ যদি সাহিদার জন্য একটা নিরাপদ কাজের ব্যবস্থা করতো সেটা বেশি ভালো হত।সাহিদা বেগম আরো বলেন, প্রতিদিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত রিকসা চালিয়ে ছয় থেকে সাতশ টাকা রোজগার হয় তার। এর মধ্যে ৪০০ টাকা রিকসার ভাড়া বাবদ তাকে জমা দিতে হয়। যে টাকা থাকে, সে টাকা দিয়ে তিনি সংসারের যাবতীয় খরচ চালান। এতে প্রতিদিন কিছু টাকা ধার করতে হয় তাকে।তার নিজের রিকসা থাকলে সংসার চালিয়েও আয় থাকতো তার। তবে সাহিদার চাওয়া,সে সম্মানের সাথে কাজ করে বাঁচতে চান।

 

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here