না’গঞ্জে শ্মশানের মাটি পূর্ব পুরুষের কবরে উপর ফেলায় শামীম ওসমানের তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ

0

প্রেসনিউজ২৪ডটকমঃ নারায়ণগঞ্জের দুটি সংসদীয় আসনের দুই সংসদ সদস্য একেএম শামীম ওসমানের পরিবারের পূর্বপুরুষ ও বিভিন্ন মুক্তিযোদ্ধা ও সাধারণ কবরে কবরস্থানের পাশের শ্মশান থেকে মরদেহ পোড়ানা মাটি এনে কবর ঢেকে দেয়া হয়েছে। এছাড়া কবরের উপর দিয়ে কবরস্থানে চলাচলের রাস্তা তৈরী করেছে কবরস্থানের দায়িত্বে থাকা নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন।

সোমবার বাদ জোহর মাসদাইর কবরস্থান পূর্ব পুরুষদের কবর জিয়ারত করতে যান এমপি শামীম ওসমান। ওই সময় কবরগুলো এ অবস্থা দেখে শিশুদের মত কেঁদে উঠেন তিনি।  শামীম ওসমান কবরস্থানে কেঁদে মুষড়ে পড়েছেন ওই খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে যান গণমাধ্যম কর্মীরা।

সে সময় শামীম ওসমান কান্নজড়ির কণ্ঠে গণমাধ্যম কর্মীদের বলেন, আল্লাহর কসম লাগে ভাই আমার আর ধৈর্য্য পরীক্ষা নিয়েন না। আপনারা কি সহ্য করবেন যে  আপনাদের মা  বাবা কবরে শ্মশানের  মরদেহ পোড়া কয়লা মাটি দিয়ে কেউ ঢেকে দিলে আপাদের কেমন লাগবে। ওই সময় শামীম ওসমান বলতে থাকেন আমি আমার বাবার ব্যর্থ সন্তান । নাহলে এ দৃশ্য আমার দেখতে হত না। এক পর্যায়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে তিনি এ ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

তিনি কবরগুলো পূর্বের অবস্থায় ফিরিতে আনতে সেখানে দায়িত্বরতদের ৪৮ ঘন্টা সময় দেন। এসময় শামীম ওসমান উপস্থিত সাধারণ মানুষের প্রতি জানতে চান একইভাবে তাদের পরিবারের প্রয়াতদের কবরে যদি শ্মশানের পোড়া মাটি দেয়া হয় তাহলে সেটা তারা মানবেন কিনা, উত্তরে সকলেই ‘না’ জানিয়ে কাজটি সঠিক হয়নি বলেন।

সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়,শ্মশানের মরদেহ পোড়া মিশ্রিত মাটি দেয়া হয়েছে শামীম ওসমানের দাদা খান সাহেব এম. ওসমান আলী, দাদী জামিলা ওসমান, বাবা আবুল খায়ের মোহাম্মদ সামসুদ্দোহা, মা নাগিনা জোহা ও বড় ভাই একেএম নাসিম ওসমানসহ ওসমান, একাধিক মুক্তিযোদ্ধাসহ অনেকগুলো সাধারণ কবরে। অনেক কবরের অস্তিত্বই হারিয়ে গেছে এই পোড়া মাটিতে চাপা পড়ে। কিছু কবরের চিহ্ন রয়েছে।

শামীম ওসমান উপস্থিত সাংবাদিকদের আরো বলেন, আল্লাহর কাছে দোয়া করি আল্লাহ যেন আমাকে ও আমার পরিবারকে ধৈর্য্য ধরার শক্তি দেন। আমি গত ২৭ জুলাই মেয়র আইভীর মা ও আলী আহমদ চুনকা সাহেবের স্ত্রীর কবর জিয়ারত করতে এখানে আসি। তখন দেখেছিলম শ্মশানের সংস্কার কাজ চলছে এবং এখানে মাটি পড়ে আছে। তখনও আমার বাবা মা দাদা দাদী ও মুক্তিযোদ্ধাদের কবর ঠিকঠাক ছিল। এখন এই জায়গা তিনফুট উচু।

আজকে আমার মনে হচ্ছে আমি একজন ব্যর্থ সন্তান। আমি সিটি করপোরেশনকে দায়ী করবো না। আমি মনে করি এটা কোন মানুষের কাজ না, এটা ইবলিশের কাজ। ‘যারা এ কাজটা করেছেন বা করিয়েছেন তাদের কাছে আমার একটাই জিজ্ঞাসা, কী লাভ হল এটা করে। আমারা বাবা মা ভাই মারা যাওয়ার পর আমার যেমন কষ্ট হয়েছিল আজকে তার চেয়ে কোন অংশে কম কষ্ট হচ্ছে না।

তিনি বলেন, এখানে আমার পূর্ব পুরুষের কবর। আমরা এর সংস্কার করি ঠিক করি। সবাই যার যার পরিবারেরটা করে। তাহলে কেন এই মাটিটা এত উঁচু করা হল। আমি ঠিকাদারকে জিজ্ঞেস করেছি এটা তার কার্যাদেশে ছিল কিনা। সে বলেছে ছিল না। তাহলে এ কাজটা করল কে। একজন আরেকজনের দোষ দিচ্ছে। শামীম ওসমান বলেন, হিন্দু ধর্মের যারা মৃত্যুবরন করতেন তাদের মরাদেহ দাহের পরে এই পানিতে ফেলা হত। সেই শ্মশানের মাটি দিয়ে কবরগুলো ভরা হয়েছে। কেন, মাটির এতই অভাব ছিল। আমার বাপ দাদার কবর আমার পারমিশন ছাড়া আপনি সংস্কার করবেন কেন।

তিনি আরো বলেন, যারা এই কাজটি করেছেন, আল্লাহরওয়াস্তে বলছি আপনাদের। আমার ধৈর্যের আর পরীক্ষা নিবেন না। আপনারা নিজেরাও আযাবের হাত থেকে বাঁচার জন্য কবরগুলোকে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে নিয়ে আসুন। নয়তো আল্লাহ আপনাদের মাফ করবেন না৷ না করলে আমি ঠিক করবো। এই মাটি রাস্তার পাশেও রাখা যেত। এখানে কেন রাখা হল। এখানে জাতির বীর সন্তান মুক্তিযোদ্ধারা শোয়া। ওই সময় শামীম ওসমানন হঠাৎ নিজ গাড়ীতে উঠে পড়েন। গণমাধ্যম কর্মী  ও সাধার মানুষ তার পিছু নিলে তিনি সবাইকে থামিয়ে দিয়ে বলেন , ভাই আমাকে একটা মত মন কাঁদতে দিন। খুব কান্না পাচ্ছে। গাড়ীর ভেতর প্রবেশ প্রায় ১০ মিনিট গাড়ীর জানারা কাঁচ লাগিয়ে দেন।

বের হয়ে শামীম ওসমান বলেন আমি গাড়িতে একা একা বসেছিলাম। আমার নিশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে। আমি সরকারকে বলতে চাই, নারায়ণগঞ্জবাসীকে বলতে চাই, দয়া করে আমার ধৈর্যের পরীক্ষা নিবেন না। আমি জানি জনগনের সাথে আমার সম্পৃক্ততা কতটুকু। এই অমানবিক কাজের ফলেই আল্লাহ আযাব দিচ্ছেন। যারা এই কাজ করেছে কর্তৃপক্ষ তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিবেন এটাই আমার প্রত্যাশা।

এটা টেস্ট কেস। তারা চেষ্টা করছে আমার মাথা গরম করে দেয়ার জন্য। আমি তাদের বলতে চাই আমার মাথা গরম হবে না। আমি শুধু আল্লাহর উপর ভরসা করি। এই সমস্ত পাপীদের আমি কেয়ার করি না।তিনি বলেন, আমি সিটি করপোরেশনের কাছে অনুরোধ করবো দয়া করে কবরগুলোকে আগের অবস্থায় নিয়ে আসুন। শুধু আমার পরিবারেরটা না। অন্যান্য বীর মুক্তিযোদ্ধা আছেন, তাদেরটাও।

কবরস্থানের সীমানা প্রাচীর ও উন্নয়ন কাজের ঠিকাদার মামুন জানান, এটা উচিত হয়নি। আমি মাটিগুলো বাইরের সড়কে রেখেছিলাম। কিছু বৃষ্টিতে আসার কথা তবে এটা তারা ভরাট করে চলাচলের জন্য তৈরী করেছে আর কিছু তারাই ভরেছে। জসিম নামে একজন আছে আমি চিনিনা।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে কবরস্থান মসজিদের ইমাম বদরশাহ জানান, কবরস্থানে শ্মশানের মাটি দেয়া সমীচীন নয়। এখানে ধর্মীয় বিষয় না তবে এটা মানবিক দিক থেকেই উচিত নয়। আমি মসজিদে নামাজ পড়াই ও দোয়া করি। এ বিষয়টি আমি দেখভাল করিনা। তবে নাপাক মাটি কবরে দেয়া উচিত নয়। মসজিদের মোয়াজ্জিন ও কবরস্থানের দেখভালের দায়িত্বে থাকা জাকারিয়া জানান, এটা শ্মশানের মাটি। ঠিকাদাররা শ্মশান ও কবরস্থানের উন্নয়ন কাজ করেছে।

শামীম ওসমানের ছাড়া এখানে থাকা একাধিক কবরের স্বজনরা খবর পেয়ে ছুটে এসে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন এবং এ ঘটনায় নাসিকের প্রতি তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন। একই স্থানে নাসিক মেয়র ডা. সেলিনা হায়াত আইভীর পূর্ব পুরুষদের কবরও রয়েছে আর তাই অন্য কবরগুলোর প্রতি এহেন আচরণ কোনভাবেই মেনে নিতে পারছেন না কেউ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here