মুন্সীগঞ্জের শিমুলিয়ায় “প্রজেক্ট হিলসা”ফেসবুকে ঝড় দেখে ছুটছে মানুষ

0

প্রেসনিউজ২৪ডটকমঃ আনিছুর রহমান রলিন মুন্সীগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি : আস্ত ইলিশের আদলে তৈরি এক রেস্তোরাঁ। নাম ‘প্রজেক্ট হিলসা’। দেশের সবচেয়ে বড় রেস্তোরাঁ বলা হচ্ছে এটিকে। মুন্সীগঞ্জের শিমুলিয়া ঘাটের অদূরে নির্মিত এই বৃহদাকার রেস্তোরাঁ উদ্বোধনের পর কয়েক দিনের মধ্যেই জমজমাট হয়ে উঠেছে ব্যবসা। এই করোনাকালেও দেশের বিভিন্নপ্রান্ত থেকে দলে দলে ভোজনরসিক যাচ্ছেন ওই রেস্তোরাঁয়।

সামাজিক দূরত্ব বা করোনায় স্বাস্থ্যবিধি কোনো কিছুই মানছেন না ভোজনরসিকরা। ফেসবুকে ঝড় দেখে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে যে যেভাবে পাড়ছেন ছুটে আসছেন প্রজেক্ট হিলসায়। দীর্ঘ সিরিয়াল, দীর্ঘ সময় অপেক্ষার পরে খাবার আসে সামনে। তবে বাস্তবের চাইতে রেস্তোরাঁটি বহুগুণ বেশি সাড়া ফেলেছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। অভিযোগ রয়েছে, মাওয়ার হিলসা করোনার বিধি মানছে না। যদিও পাশের থানা নবাবগঞ্জে অনেকে ভারতীয় ভয়ানক ঘাতক ভ্যারিয়েন্টে ভুগছে। তা ছাড়া করোনার কারণে দেশের সব স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ আজ অবধি। কোমলমতি ছাত্ররা ভুগছেন মানসিক সমস্যায়।

তারা বলতে গেলে গৃহবন্দী। এর মধ্যে ইলিশ নিয়ে হিলসা নামে রোস্তরাঁয় মানুষের কাছ থেকে গলাকাটা দাম আদায় করছে। মানছে না স্বাস্থ্যবিধি। এটা কতটা যোক্তিক এ প্রশ্নও তুলেছেন স্থানীয় অনেকে। সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, এখানে একটি ইলিশ বিক্রি হয় ১৫০০ থেকে ২০০০ টাকায়। একটি বেগুন আড়াই শ’ টাকা, এক প্লেট ভাত ১০০ টাকা, ডাল আড়াই শ’ টাকা। নেটে ছাড়া বিল কপি দেখে অনেকেই রেস্তোরাঁকে গলাকাটা,পকেট কাটা জবাই করার’ কেন্দ্র বলে আখ্যা দিচ্ছেন। তাদের মতে, ঢাকায় উন্নতমানের যেকোনো রেস্তোরাঁয় এই পরিমাণ খাবার খেলে বিল এক হাজার থেকে দেড় হাজারের বেশি হতো না।

কেউ কেউ আবার রেস্তোরাঁর পক্ষ নিয়ে বলছেন, ওরা যা খুশি তা দাম ধরবে, মানুষ ইচ্ছা করে নিজের গলা কাটতে গেলে রেস্তোরাঁর কী দোষ? অনেকেই লেখছেন, এই রেস্তোরাঁয় যাবেন উচ্চবিত্ত ও বিদেশীরা। নিম্ন মধ্যবিত্তরা গেলে খাবারের দাম বেশিই মনে হবে। কেউ কেউ পাল্টা যুক্তি দিচ্ছেন, রেস্তোরাঁর কোথাও কি লেখা আছে এটা ফাইভস্টার মানের? আর অর্ডারের পর খাবার পরিবেশনে যে সময় নিচ্ছে তা কোনো মতেই ভালো মানের রেস্তোরাঁর বৈশিষ্ট নয়।

অনেকের টাইমলাইনে ঘুরছে ইলিশ আকৃতির রেস্তোরাঁর ছবি। কেউ কেউ রেস্তোরাঁটি ঘুরে আসার প্রমাণ জাহির করছেন ফেসবুকে। ছবি-ভিডিও আপলোড করছেন সমানে। প্রতিদিনই কেউ না কেউ লাইভ দিয়ে চলছেন এই প্রজেক্ট হিলাসার। অনেকগুলো টেলিভিশনেও লাইভ দিতে দেখা গেছে। এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে প্রতিষ্ঠানটির পরিচালকরা হাতিয়ে নিচ্ছেন লাখ লাখ টাকা।

ভোজনরসিকদের ফেসবুকে দেয়া বিলের কপি থেকে জানা যায়, প্রতি পিস বেগুনভাজার দাম রাখা হয়েছে ৫০ টাকা। যা ভালো মানের রেস্তোরাঁয় ২০ টাকার বেশি নয়। প্রতি বাটি ডালের দাম ধরা হয়েছে ১০০ টাকা। এই মানের ডাল দেশের যেকোনো রেস্তোরাঁয় প্রতি বাটি ৩০-৫০ টাকায় মিলবে। সবচেয়ে অবাক করা দাম রাখা হচ্ছে মূল আকর্ষণ ইলিশের বেলায়। প্রোজেক্ট হিলসায় প্রতি পিস ইলিশ মাছের দাম নেয়া হচ্ছে ১৮০০ টাকা।

অথচ দেশের যেকোনো প্রান্তে এক কেজি বা তার চেয়ে বেশি ওজনের প্রতি পিস ইলিশ পাওয়া যায় ১২০০ থেকে ১৪০০ টাকায়। মাত্র এক প্লেট সাদা ভাতের জন্য গুণতে হচ্ছে ১০০ টাকা। এক প্লেট খিচুড়ি ২০০ টাকা করে নেয়া হচ্ছে। সামান্য সালাদের দামও শ’ ছাড়িয়ে। মানের তুলনায় দাম অতিরিক্ত অভিযোগে ফেসবুকে রেস্তোরাঁর ওপর ক্ষোভ প্রকাশ করছেন নেটিজেনরা। এরই মধ্যে ভাইরাল হয়েছে এক ভোক্তার বিল কপি। যেখানে দেখা গেছে, ওই ভোক্তা বেগুনভাজির অর্ডার দিয়েছেন ৪১টি।

প্রতিটি ৫০ টাকা করে বিল এসেছে ২০৫০ টাকা। ইলিশ অর্ডার করেছিলেন ১৩টি, যার মূল্য পরিশোধ করতে হয়েছে ২৩ হাজার ৪০০ টাকা। ডাল ২০ বাটি ও ভাত ৪১ প্লেটসহ তার খাবার বিল হয়েছে ৩২ হাজার ৬২৫ টাকা। এই বিলের সাথে সার্ভিস চার্জ দিতে হয়েছে তিন ২৬২ টাকা। আর সাথে যোগ হয়েছে ভ্যাট পাঁচ হাজার ২২২ টাকা। সব মিলিয়ে ওই ভোক্তাকে বিল পরিশোধ করতে হয়েছে ৪১ হাজার ১০৯ টাকা।

ইয়াসির আরাফাত নামের একজন অভিযোগ করেছেন শুক্রবার গিয়েছিলাম মাওয়ার প্রোজেক্ট হিলসায়। খাবার অর্ডারের পর কয়েক ঘণ্টা বসে থাকতে হয়েছে। উন্নত রেস্তোরাঁর এ কেমন অবস্থা? অনেক নারী খাবার খেতে এসে লাইভ দিয়েছেন। দীর্ঘ সময় অপেক্ষার পর কাঙ্ক্ষিত খাবার আসে। অনেকে তিন-চার ঘণ্টা অপেক্ষা করে টেবিল খালি পাচ্ছেন।

রেস্তোরাঁটির খাবারের মান, দাম নিয়ে করা অভিযোগ প্রসঙ্গে মুন্সীগঞ্জ জেলা ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের সহকারী পরিচালক আসিফ আল আজাদ বলেন, ‘তাদের খাবারের যে দাম সেটা অবশ্যই মেন্যুকার্ডে উল্লেখ করে রাখতে হবে। ভোক্তারা এটি দেখেই খাবেন। ভোক্তারা যদি মনে করেন, এখানে দাম বেশি তাহলে তিনি ওখানে নাও খেতে পারেন। খাবার দাম মেন্যুকার্ডে যা লিখে রাখা হবে তার থেকে বেশি নেয়া হলে সেটি অপরাধ হবে। এ ব্যাপারে আমাদের কাছে অভিযোগ এলে আমরা অবশ্যই ব্যবস্থা নেব।

সার্ভিস চার্জের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন, ২০০৯-এ সার্ভিস চার্জ রাখা যাবে কি যাবে না, এ সম্পর্কে কিছু বলা নেই। তবে সার্ভিস চার্জের বিষয়টি কর্তৃপক্ষকে ঘোষণা দিতে হবে। মেন্যুকার্ডে লিখে রাখতে হবে। কাস্টমারকে জানিয়ে রাখতে হবে যে ১০ শতাংশ সার্ভিস চার্জ রাখা হবে। এটি না করে থাকলে সেটি অপরাধ হবে। মেন্যু বলছে, রেস্তোরাঁটিতে ইলিশ মাছের ২৪ ধরনের রেসিপিসহ মোট ৩০০ ধরনের খাবার পাওয়া যায়।

ভোক্তাদের এসব অভিযোগের বিষয়ে ‘প্রজেক্ট হিলসা’র ম্যানেজার নিশাত আহমেদ বলেন, ‘দাম বেশি কি না সেটা পরিবেশ, রেস্তোরাঁর আকার, অবস্থা, ডেকরেশনের ওপর নির্ভর করে। আমাদের কাছে দাম অত বেশি মনে হচ্ছে না। তবে দাম নিয়ে কাস্টমারদের অসন্তোষের বিষয়টি নিয়ে আমরা ভাবব। ১০ শতাংশ সার্ভিস চার্জ কেটে নেয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘বড় বড় যে কোনো রেস্তোরাঁয় এমন সার্ভিস চার্জ রাখা হয়। পার্কিং চার্জ, ইলেক্ট্রিসিটি, এসি সবকিছুর ওপর একটি চার্জ তো হবেই, তাই না? আর আমাদের মেন্যুকার্ডে এ কথা উল্লেখ করা আছে।’

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here