চাঁদপুর ফরিদগঞ্জে ২৯টি ইটভাটার ২৮টিই অবৈধ, প্রশাসন নীরব

0

প্রেসনিউজ২৪ডটকমঃ জেলা সংবাদদাতা: চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ উপজেলায় ফসলের জমি ও জনবসতিপূর্ণ এলাকায় গড়ে উঠেছে ইটের ভাটা। এগুলোতে নেই পরিবেশ অধিদপ্তর ও জেলা প্রশাসনের ছাড়পত্র। জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে কাঠ ও কয়লা। বিরূপ প্রভাব পড়ছে পরিবেশের ওপর, উর্বরতা হারাচ্ছে ফসলি জমি। এছাড়া বায়ু দূষণের কারণে বাড়ছে শ্বাসকষ্টসহ নানা রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা।

অভিযোগ উঠেছে, সরকারি নিয়মনীতি অমান্য করে অবৈধভাবে ইটভাটা চালিয়ে যাচ্ছেন মালিকরা। পরিবেশ বিভাগ বলছে, পরিবেশ দূষণ রক্ষায় সরকার জিরো টলারেন্স ঘোষণা করেছে। তাই বিধি-বিধান অমান্য করলে ছাড় দেয়ার সুযোগ নেই। পরিবেশ আইন অনুযায়ী ফসলি জমির পাশে ইটভাটা স্থাপনের কোনো বিধান নেই। একই সঙ্গে লোকালয় থেকে এক কিলোমিটার দূরে ইটভাটা স্থাপন করতে হবে। সেই সঙ্গে গ্রামবাসী তথা সর্বসাধারণের স্বাস্থ্যগত দিক বিবেচনা করে ভাটা চালাতে হবে।
সেই হিসেবে গ্রামের ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় ইটভাটাগুলো কিভাবে দীর্ঘদিন কার্যক্রম চালিয়ে আসছে তা নিয়ে জনমনে রয়েছে মিশ্রপ্রতিক্রিয়া। সুত্র মতে জানা যায়,ফরিদগঞ্জ উপজেলায় মোট ২৯টি ইটভাটা রয়েছে। যার মধ্যে একটি ছাড়া বাকি সবগুলোই অবৈধ। অবৈধগুলোর মধ্যে ১নং বালিথুবার টুবগি এলাকায় পরিবেশ অধিদপ্তরের নিয়ম অমান্য করে তাজুল ইসলাম এম.টি.বি নামের একটি ইটভাটা গড়ে তুলেছে।
১ নং ইউনিয়নের সেকদি ও টুবগী এলাকার একাধিক ব্যক্তি নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান এই ইটভাটার ধোঁয়ায় স্থানীয় মীরের বাড়ি, গাজি বাড়ি, বেপারী বাড়ী, শেখ বাড়ি, খান বাড়ি, মিজি বাড়ি, মজুমদার বাড়ি সহ এই অঞ্চলের অসংখ্য বাড়ির নারিকেল, সুপারি, কাঠাল গাছসহ বিভিন্ন ফল গাছ ধোঁয়ায় পুড়ে ছাই হয়েছে। যে গাছগুলো আছে সেগুলোর পাতা লাল হয়ে গাছ শুকিয়ে যাচ্ছে। ব্রিকফিল্ডের পাশে একটি কালভার্ট ছিল। যার দ্বারা এলাকাবাসীর কৃষি কাজ করতে পানি আনা নেওয়ার কাজ হতো।
এছাড়া বর্ষা মৌসুমে এই কালভার্ট দিয়ে অতিরিক্ত পানি অপসারন হতো। কিন্তু ব্রিকফিল্ডের জোরদার মালিক সেই কালভার্টটি বন্ধ করে দিয়ে এলাকার মানুষের ব্যবহারের অনুপযোগী করে রেখেছে।ব্রিকফিল্ডের মালিক এলাকার কৃষকদের লোভ-লালসা দেখিয়ে কৃষি জমির মাটি ক্রয় করে এনে, ইট তৈরি করে কৃষি জমিনকে ব্যবহারের অনুপযোগী তুলছে।
তারা আরো বলেন, এলাকার সহস্রাধিক ব্যক্তিবর্গের গণস্বাক্ষর নিয়ে জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, পরিবেশ অধিদপ্তর সহ বিভিন্ন জায়গায় অভিযোগ করলেও তাজুল ইসলামের খুঁটির জোরে ইটভাটাটি বন্ধ হচ্ছে না এবং একাধিকবার এলাকার শত শত মানুষ ইটভাটাটি বন্ধ করার জন্য আন্দোলন করলেও প্রশাসন কোনো কর্ণপাত করছে না।
এ সময় ক্ষতিগ্রস্তসহ স্থানীয়রা জানান, বাড়ির আঙ্গিনার ধারে সড়কের সীমানা দিয়ে সারি সারি গাছ ছিলো। ইটভাটার কালো ধোঁয়ায় সবগুলো গাছ মরে গেছে। শুধু তাই নয়, আশপাশের প্রায় ২শ’ বাড়ির গাছের পাতা জ্বলে একের পর এক মরে যাচ্ছে। পরিবেশ দূষণ ও স্বাস্থ্যগত সমস্যায় বাড়িতে বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।
এছাড়া টুবগী-চান্দ্রা সড়ক দিয়ে ব্রিক ফিল্ডের বিভিন্ন মালামাল আনা-নেয়ার কারণে সড়কটির অবস্থা একেবারেই বেহাল হয়ে পড়েছে। যার কারণে প্রতি বছরই সরকারপক্ষ এই সড়কটি পুনঃনির্মাণ ও সংস্কার করতে লক্ষ লক্ষ টাকা ব্যয় করতে হয়। অন্যদিকে এলাকার জনৈক এক ব্যক্তি বলেন, এই ইটভাটাটি আরো আগেই পরিবেশ অধিদপ্তরের কালো তালিকায় নাম এসেছে। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে কিভাবে এখনও ব্রিকফিল্ডটি চালিয়ে যাচ্ছে তা আমাদের বোধগম্য নয়।
বিষয়টি নিয়ে চাঁদপুর জেলা পরিবেশ অধিদপ্তরের সঙ্গে কথা হলে তারা জানান, ইটভাটাটি সম্পূর্ণরূপেই অবৈধ। কিন্তু কাগজপত্রের কিছু জটিলতার কারণে ব্যবস্থা নিতে পারছেন না। ফরিদগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার শিউলী হরি বলেন, অবৈধ ইটভাটাগুলোর তালিকা আমরা জেলা প্রশাসক বরাবর দেবো এবং জেলা প্রশাসক এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেবেন বলে তিনি আশ্বাস দেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here