প্রেসনিউজ২৪ডটকমঃ নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার ফতুল্লার পশ্চিম তল্লা বাইতুস সালাত জামে মসজিদে বিস্ফোরণের ঘটনায় সহোদর মারা গেছেন। তারা হলেন সাব্বির (২১) ও যোবায়ের (১৮)। তারা নারায়ণগঞ্জ প্রেস ক্লাবের কর্মচারী নুরুদ্দিনের ছেলে।
শুক্রবার ৪ সেপ্টেম্বর রাতে বিস্ফোরণের সময়ে দুইজনই মসজিদে নামাজ আদায় করছিলেন। তারা নিয়মিত ওই মসজিদেই নামাজ আদায় করেন। এ দুইজনের মৃত্যুতে সরকারি তোলারাম কলেজ পরিবার গভীরভাবে শোকাহত। নিহতদের মধ্যে সাব্বির সরকারি তোলারাম কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র জুবায়ের ও তার ভাই সাব্বির নারায়ণগঞ্জ কলেজের ছাত্র।
দগ্ধ দুই ছেলের সঙ্গে শুক্রবার রাত থেকে হাসপাতালে আছেন বাবা নূরউদ্দিন। তার বড় ছেলে মো. সাব্বিরের (২১) মৃত্যুর খবরটি জানতে পারলেও ছোট ছেলে যুবায়েরের খবর জানেন না তিনি। নুর উদ্দিন বলেন, বড় ছেলে মো. সাব্বির নারায়ণঞ্জের একটি কলেজে অনার্স তৃতীয় বর্ষে লেখাপড়া করতেন।
আর তার ছোট ছেলে নারায়ণগঞ্জের তোলারাম কলেজের উচ্চ মাধ্যমিকের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। দুর্ঘটনার সময় বড় দুই ভাইয়ের সঙ্গে তার ছোট ছেলে ইয়াসিনও (১২) ছিল। তারা তিনজনই এক সঙ্গে নামাজ পড়তে ওই মসজিদে গিয়েছিলেন। তবে ইয়াসিন পেছনের সারিতে দাঁড়ানোর কারণে বিস্ফোরণের সঙ্গে সঙ্গে দৌড়ে মসজিদ থেকে বেরিয়ে যাওয়ায় সে সুস্থ আছে।
কান্না করতে করতে নুর উদ্দিন বলেন, ছোট ছেলে যুবায়েরের মৃত্যুর গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে। তবে আমাদের এখনো কেউ কিছু বলেনি। আমরাও জানার চেষ্টা করছি। তবে হাসপাতালের ভেতরে ঢুকতে পারি না। এ দুইজন সহ ১২ জনের মৃত্যু ঘটেছে। মৃত ১২ জন হলেন মুয়াজ্জিন দেলোয়ার হোসেন (৪৮), রিফাত (১৮), মোস্তফা কামাল (৩৪), জুনায়েদ (১৮), সাব্বির (২১), কুদ্দুস ব্যাপারী (৭২), হুমায়ুন কবির (৭০), ইব্রাহিম (৪৩), জুনায়েদ (১৭), জামাল (৪০), জুবায়ের (৭) ও রাসেল (৩৪)।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, পৌনে ৯টায় বিকট শব্দে বিস্ফোরণ ঘটে। মুহূর্তেই মসজিদের ভেতরে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। ওই সময়ে মসজিদে থাকা মুসল্লীদের গায়ে আগুনের ফুলকি গিয়ে পড়লে একে একে দগ্ধ হতে থাকে। মসজিদের ভেতর থেকে আসতে থাকে মুসল্লীদের আত্মচিৎকার। পরে আশেপাশের লোকজন দিয়ে তাদের উদ্ধার করে। তাদের অনেকের শরীরের কাপড় ছিল না। দুর্ঘটনার পর সেখানে দেখা গেছে, মসজিদের ভেতরের কয়েকটি স্থানেই প্রচুর পানি জমে ছিল। এসব পানিতে রক্ত ছিল। লাল হয়ে ছিল পানি।
প্রত্যক্ষদর্শীরা আরো জানান, বিকট শব্দে বিস্ফোরণের পর বিদ্যুৎ চলে যায়। তখন মসজিদ থেকে একে একে মুসল্রীরা খালি গায়ে দগ্ধ হয়ে বের হতে থাকে। বাঁচাও বাঁচাও চিৎকার করে একে একে বেরিয়ে আসতে থাকে। তাদের চিৎকারে সেখানে হৃদয়বিদারক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। একে একে মুসল্লীদের রিকশায় করে দ্রুত হাসপাতালে নেওয়া হয়। স্থানীয়রা জানান, মুহূর্তের মধ্যে মসজিদের এসিও বিস্ফোরণ ঘটে। স্থানীয়রা জানান, পৌনে ৯টায় বিকট শব্দে বিস্ফোরণ ঘটে।
মুহূর্তের মধ্যে মসজিদের ভেতরে থাকা ৩০ থেকে ৪০ জনের মধ্যে আতংক ছড়িয়ে পড়ে। হুড়োহুড়ি করে বের হয় লোকজন। তাদের অনেকেই দগ্ধ ও আহত ছিল। মসজিদের ভেতরে এক ধংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। মসজিদের জানালার গ্লাসগুলোর সবগুলো ভাঙ্গা ছিল। ভেতরে কয়েকটি চেয়ার ছিল ভাঙাচোরা। ফ্যানগুলোও বাকা হয়ে যায়। ভেতরে থাকা দেড় ও ২ টনের ৬টি এসির সবগুলো বিস্ফোরণ ঘটে ভেতরের যন্ত্রাংশ বেরিয়ে গেছে। মসজিদের ভেতরে ফ্লোরের কিছু স্থানে রক্তের পানি দেখা গেছে।