নারায়ণগঞ্জে সাব-রেজিষ্ট্রারের বিরুদ্ধে মোটা অংকের রাজস্ব ফাঁকির অভিযোগ।

0

প্রেসনিউজ২৪ডটকমঃ নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে সরকার নির্ধারিত রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে একটি বেলওয়াজ হেবা দলিল রেজিষ্ট্রির অভিযোগ উঠেছে সাব-রেজিষ্ট্রার এসএম শফিউল বারীর বিরুদ্ধে। জমির শ্রেণি পরিবর্তন করে ‘নাল’ স্থলে ‘পতিত’ উল্লেখ্য করে সরকারের মোটা অংকের টাকার রাজস্ব ফাঁকি সহ অনুসন্ধ্যানে বিভিন্ন তথ্য বের হয়ে এসেছে। এলাকায় এনিয়ে বিভিন্ন মহলের মধ্যে রীতিমত তোলপাড় শুরু হয়েছে।

সরেজমিন গিয়ে জানা গেছে, উপজেলার সাবেক লাসরদী হালে বাঘানগর, মৌজায় রেজিষ্ট্রিকৃত দলিল নাম্বার ১৪৭৫২। ২৬-১২-২০১৯ইং। জমির পরিমাণ ৫৮ শতাংশ। তাতে রেজিষ্ট্রি মূল্য দেখানো হয়েছে ৪ লাখ টাকা। তবে দলিলে সরকারের গড় মূল্য আসে ১ কোটি, ৪ লাখ, ৪৬ হাজার টাকা। এতে সরকারের রেজিষ্টেশন স্ট্যাম্প ফি (রাজস্ব) ফাঁকি দেয়া হয়েছে ৮ লাখ, ৩ হাজার, ৬৮০টাকা। সাব-রেজিষ্ট্রার ও স্থানীয় এমপি বাবুর আশীবার্দপুষ্ট অসাধু দলিল লিখক নুরুল আমিন, কাজল ঢালী, শেখ জাকারিয়া, সাজ্জাত পারভেজ ও জাকারিয়া জাকির গংয়ের যোগসাজশে সরকারের মোটা অংকের টাকা রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে পকেট ভারী করা হয়েছে। এসএম শফিউল বারীর একাšন্ত সহকারি জাকির একাজে সহযোগিতা দিয়েছে।

দলিল লিখকরা জানান, (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) এদিকে দিনের পর দিন সরকার দলীয় অসাধু এই দলিল লিখকদের যোগাসাজশে সাব-রেজিষ্ট্রারকে জিম্মি করে সরকার নির্ধারিত রাজস্ব ফাঁকি ও নামমাত্র কাগজপত্র দাখিল করে মোটা অংকের ঘুষের মাধ্যমে দলিল রেজিষ্ট্রি করিয়ে নিচ্ছেন। ঘুষ ছাড়া কোনো দলিল রেজিষ্ট্রি করা যাচ্ছে না। আড়াইহাজারে সাব-রেজিষ্ট্রার বদলি হয়ে আসার কিছুদিন পরেই চলে যান। বিগত দিনে দেখা গেছে অনেক রেজিষ্ট্রার আড়াইহাজারে বদলি হয়ে আসতেও অনিহা প্রকাশ করেন। কয়েক বছর ধরে অতিরিক্ত সাব-রেজিষ্ট্রার দিয়ে এখানে দলিল রেজিষ্ট্রি কাজ সম্পন্ন করা হচ্ছে। জমির ক্রেতা-বিক্রেতারা এতে ভোগান্তি পোহাচ্ছেন। দলিল লিখক সমিতির সদস্যদের প্রশ্ন নারায়ণগঞ্জ জেলার প্রতিটি উপজেলায় একজন করে স্থায়ী সাব-রেজিষ্ট্রার আছেন। কী কারণে আড়াইহাজারে স্থায়ীভাবে সাব-রেজিষ্ট্রার দেয়া হচ্ছে না।

খাগকান্দা এলাকার ভুক্তভোগী আমির হোসেন বলেন, আমি জমি বিক্রি করে ছেলেকে বিদেশ পাঠানোর চিন্তা-ভাবনা করছিলাম। জমি বায়না করেছি, কিন্তু এখন সাব-রেজিষ্ট্রারের জটিলতায় জমি বিক্রি করতে পারছি না। এতে আর্থিকভাবে ক্ষতির মুখে পড়েছি। বগাদী এলাকার মিজান নামে এক ভুক্তভোগী বলেন, আমার একটি নাল জমি বিক্রি করে মেয়ের বিয়ে ও নিজের চিকিৎসা নিতে চেয়ে ছিলাম। কিন্তু সাব-রেজিষ্ট্রারের জটিলতায় আমি জমি বিক্রি করতে পারছি না। অতিরিক্ত সাব-রেজিষ্ট্রার দিয়ে কার্যক্রম চলায় কয়েক বছর যাবত উপজেলার বিভিন্ন এলাকার লোকজন জমি কেনাবেচা করতে পারছে না। বন্দর ও রূপগঞ্জের সাব-রেজিষ্ট্রার দিয়ে সাপ্তাহে একদিন অথবা দুইদিন কার্যক্রম চালানো হচ্ছে।

দলিল লিখক ও স্থানীয়রা জানান, সাব-রেজিষ্ট্রার অফিস ঘিরে স্থানীয় এমপির আশীর্বাদপুষ্ট ক্ষমতাসীন দলের একটি শক্তিশালী চক্র এখানে সক্রীয়। এ চক্রের কারণে এখানে সাব-রেজিষ্ট্রার বদলি হয়ে এসে বেশী দিন থাকতে পারে না। তাদের চাপে কর্মকর্তারা দুর্নীতিতে জড়িয়ে যাচ্ছেন। স্থানীয়রা আরো জানান, ৫ ফেব্রুয়ারি অর্থ গ্রহণের দৃশ্য দেখা গেছে একটি অনলাইন পোষ্টালের টাইমলাইনে। সংবাদটি প্রকাশের পর থেকে দুর্নীতি আড়াঁল করতে অতিরিক্ত সাব-রেজিষ্ট্রার এসএম শফিউল বারী বিভিন্ন মহলে দৌঁড়ঝাপ করছেন।এ ব্যাপারে সাব-রেজিষ্ট্রার এসএম শফিউল বারীর বক্তব্য নেওয়ার জন্য তার মুঠোফোন (০১৮৪১৮৮৪১৮৮) নাম্বারে বার বার যোগাযোগ করলে তা বন্ধ পাওয়া যায়।

প্রসঙ্গত. ইতিপূর্বে সাব-রেজিষ্ট্রার অফিসের বিভিন্ন দুর্নীতির খবর একাধিকবার স্থানীয়, জাতীয় এবং ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ায় ফলোওভাবে সংবাদ প্রকাশিত হয়। যা বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। এর পর থেকে ওই চক্রটি আরো বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। সাব-রেজিষ্ট্রার অফিসের পুরো কার্যক্রম এই চক্রের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে। উপজেলাবাসীর দাবী বিচারবিভাগীয় শক্তিশালী একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে দোষিদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক এবং দ্রুত স্থায়ী সাব-রেজিষ্ট্রার নিয়োগ দেয়া হোক।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here