প্রেসনিউজ২৪ডটকমঃ শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জে উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে আলোচনা সভা ও শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হলেও মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদ বুদ্ধিজীবী আব্দুল কাদের মিয়ার কবর জিয়ারত করা হয়নি। বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় সচেতন মহলে ক্ষোভ ও প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে। রবিবার (১৪ ডিসেম্বর) সকালে দেবীগঞ্জ সরকারি ডিগ্রি কলেজের শহীদ মিনারে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয়। পরে উপজেলা পরিষদ হলরুমে দিবসটি উপলক্ষে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
সভায় সভাপতিত্ব করেন দেবীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মাহমুদুল হাসান। এতে বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের কর্মকর্তা, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, শিক্ষক, সাংবাদিক ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।তবে দিবসটির কর্মসূচিতে মহান মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর হাতে নিহত শহীদ বুদ্ধিজীবী আব্দুল কাদের মিয়ার কবর জিয়ারতের কোনো আয়োজন না থাকায় মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সংরক্ষণ ও শহীদদের প্রতি রাষ্ট্রীয় সম্মান প্রদর্শনের বিষয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে।
মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, শহীদ বুদ্ধিজীবী আব্দুল কাদের মিয়া ১৯৩০ সালের ১ এপ্রিল সিরাজগঞ্জ জেলার শাহজাদপুর উপজেলার জামিরতা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৭১ সালে তিনি চাকরিসূত্রে পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ শুরুর পর ২৭ মার্চ তিনি দেবীগঞ্জ থানায় বাংলাদেশের মানচিত্রখচিত পতাকা উত্তোলন করে দেবীগঞ্জকে স্বাধীন ঘোষণা দেন। একই সঙ্গে তিনি মুক্তিকামী যুবকদের প্রশিক্ষণ দেন, থানার অস্ত্রশস্ত্র তাদের হাতে তুলে দেন এবং নিজেও প্রতিরোধ যুদ্ধে অংশ নেন।
মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য অস্ত্র সংগ্রহের উদ্দেশ্যে তিনি ভারতের হলদিবাড়ি এলাকায় যান বলেও জানা গেছে। ১৯৭১ সালের ৩১ মে পাকিস্তানি সেনাদের সঙ্গে সংঘর্ষে তিনি আহত হন। পরদিন ১ জুন সকালে পাকিস্তান-সমর্থিত শান্তি কমিটির সহযোগিতায় পাকিস্তানি সেনারা তাকে আটক করে দেবীগঞ্জের ব্রুজেরডাঙ্গা এলাকায় নিয়ে হত্যা করে এবং লাশ মাটিচাপা দেয়। স্বাধীনতার পর ওই স্থান থেকে তাঁর জুতা, মোজা, আংটি ও কলম উদ্ধার করা হয়। স্বাধীনতার দীর্ঘদিন পর ১৯৯৯ সালে সরকারিভাবে শহীদ পুলিশ কর্মকর্তা আব্দুল কাদের মিয়াকে শহীদ বুদ্ধিজীবী হিসেবে স্বীকৃতি দেয় গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার।
তাঁর স্মরণে দুই টাকার স্মারক ডাকটিকিট প্রকাশ করা হয়। পাশাপাশি দেবীগঞ্জে একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, পঞ্চগড় পুলিশ লাইনে একটি গ্রন্থাগার এবং একটি সড়ক তাঁর নামে নামকরণ করা হয়েছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে তাঁর কবর জিয়ারত না হওয়া দুঃখজনক এবং ইতিহাসের প্রতি অবহেলার শামিল। ভবিষ্যতে দিবসটির কর্মসূচিতে শহীদ আব্দুল কাদের মিয়ার কবর জিয়ারত অন্তর্ভুক্ত করার দাবি জানান তারা।





