গৌরীপুর-রামগোপালপুরে ভাঙাচোরা সড়কে জনদুর্ভোগ চরমে !

0
ময়মনসিংহের গৌরীপুর-রামগোপালপুরে ভাঙাচোরা সড়কে জনদুর্ভোগ চরমে!

প্রেসনিউজ২৪ডটকমঃ মোঃ মাহফুজুর রহমান, গৌরীপুর (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি : গৌরীপুর পৌর শহরের বালুয়াপাড়া থেকে রামগোপালপুর বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত প্রায় তিন কিলোমিটার দীর্ঘ সড়কটির বেহাল অবস্থা জনদুর্ভোগকে চরমে ঠেলে দিয়েছে। স্বাভাবিক অবস্থায় এ পথ পাড়ি দিতে সময় লাগার কথা সর্বোচ্চ ১০ মিনিট।

কিন্তু সড়কজুড়ে অসংখ্য খানাখন্দ, ভাঙাচোরা অংশ এবং দীর্ঘদিনের সংস্কারহীনতার কারণে বর্তমানে একই পথ অতিক্রমে সময় লাগছে প্রায় ৪০ মিনিট। স্থানীয়দের অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরে সড়কটির কোনো মানসম্মত সংস্কার হয়নি। বর্ষায় তীব্র জলাবদ্ধতা ও ড্রেনেজব্যবস্থার ত্রুটির কারণে সড়কের বিভিন্ন স্থানে গভীর গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। শুকনো মৌসুমে ধুলাবালিতে এবং বর্ষায় কাদায় চলাচল কঠিন হয়ে পড়ে।

স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালসের চালক শামীম হোসেন বলেন,‎ ‘গৌরীপুর থেকে রামগোপালপুর হয়ে ঔষধ সরবরাহ করতে কিশোরগঞ্জ যাচ্ছি। রাস্তার যে বেহাল অবস্থা, গাড়ি লোড এই রাস্তা দিয়ে আসাটা খুবই কষ্টকর। ঝাঁকিতে মানুষের যেমন ক্ষতি হয় তেমনি গাড়িরও অনেক ক্ষতি হয়। বড় বড় গভীর গর্তের কারণে একেবারেই উঁচু নিচু। গাড়ি একবার রাস্তার এদিক ওদিক দুলে পড়ে। সড়কের দূরাবস্থার কারণে ১০ মিনিটের অল্প পথেই ৩০/৪০ মিনিট বেশি সময় লাগে। এতে সময় বেশী ও কোম্পানির ব্যয় বাড়ছে।

জরুরি পরিবহন বিশেষত রোগী স্থানান্তরে মারাত্মক ভোগান্তির সৃষ্টি হচ্ছে বলে স্থানীয়রা জানান। ডেলিভারি-জটিলতায় থাকা এক রোগীকে সিএনজিতে করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার সময় রোগীর স্বজন মো. মঞ্জিল মিয়া বলেন, ‎‘গাড়ি গর্তে পড়ে এমনভাবে দুলছে যে মনে হচ্ছিল হাসপাতালে পৌঁছানোর আগেই রাস্তাতেই ডেলিভারি হয়ে যাবে। এই রাস্তায় জরুরি রোগী নেওয়া অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। সড়কটি আঞ্চলিক যোগাযোগের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে দৈনিক গৌরীপুর, রামগোপালপুর, ঈশ্বরগঞ্জ, নান্দাইল হয়ে কিশোরগঞ্জগামী হাজারো মানুষের চলাচলের মাধ্যম।

পাশাপাশি কৃষিপণ্য, মাছ, হাঁস-মুরগি ও অন্যান্য বাণিজ্যিক পণ্য পরিবহনেও এ সড়কের ওপর নির্ভর করতে হয় স্থানীয় ব্যবসায়ীদের। সড়কের পাশে অবস্থিত একাধিক ফিসারি ও হ্যাচারির মালিকরা জানান, বাজারে সময়মতো মাছ পৌঁছাতে না পারায় প্রতিদিনই আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়তে হচ্ছে। বলুহা গ্রামের হ্যান্ডট্রলি চালক অমল চন্দ্র বিশ্বাস বলেন, ‘রাস্তা ভয়াবহ খারাপ থাকায় গাড়ি চালাতে পারি না। মাত্র বাড়ি থেকে বের হয়ে রাস্তায় উঠছি একটা গর্তে পরে এখন গাড়ি নষ্ট হয়ে গেছে। এই রাস্তা দিয়ে গাড়ি নিয়ে বের হলেই বড় বড় গর্তে পরে গাড়ি নষ্ট হয়ে যায়।

রামগোপালপুর পি.জে.কে উচ্চ বিদ্যালয় সংলগ্ন স্থানীয় ব্যবসায়ী বলেন, ‎‘রাস্তাটি দিয়ে ইজিবাইক উল্টে গিয়ে প্রতিনিয়ত যাত্রী ও শিক্ষার্থীরা পরে আহত হয়। এ সড়কের পাশে তিনটি প্রাথমিক বিদ্যালয়, একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও বেশ কয়েকটি মাদ্রাসা রয়েছে। শিক্ষার্থীরা প্রতিদিন সাইকেল বা ইজিবাইকে করে চলাচল করার সময় দুর্ঘটনার ঝুঁকিতে থাকেন। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত কয়েক মাসে এ পথে ইজিবাইক উল্টে ও সাইকেল গর্তে আটকে পড়ে একাধিক শিক্ষার্থী ও যাত্রী আহত হয়েছেন।

রামগোপালপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী সুবল বলেন, ‘বাড়ি থেকে একদিন সাইকেল দিয়ে আসতেছিলাম তখন গর্তের মধ্যে সাইকেল পরে পা কেটে যায়। আমরা দ্রুত রাস্তাটি মেরামত চাই।’ রামগোপালপুর পাওয়ার যোগেন্দ্র কিশোর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. মিজানুর রহমান বলেন, ‘রামগোপালপুর বাসস্ট্যান্ড থেকে গৌরীপুর পর্যন্ত রাস্তাটি ভীষণ খারাপ। বিদ্যালয়ের সামনেও গত বর্ষার সময় বড় বড় গর্ত হয়েছে। যে কারণে বিদ্যালয় শুরু ও শেষের সময় শিক্ষার্থীরা গর্তে পড়ে গিয়ে আহত হয় এবং যাত্রীরাও আহত হয়। দ্রুত সড়কটি মেরামত করে দেয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।

এ বিষয়ে উপজেলা স্থানীয় সরকার প্রকৌশলী মো. আমিনুল ইসলাম বলেন, রাস্তাটি ৫ বছর পূর্বে সংস্কার হয়েছিলো। রাস্তার বেহাল দশার বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। বাজেট বরাদ্দ পেলে স্থায়ী সংস্কার করা হবে। নতুন বছর পরলে যেখানে বড় বড় ভাঙাচোরা রয়েছে সেখানে দ্রুত মেরামত করে চলাচল স্বাভাবিক রাখা হবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here