তালতলীতে জমি বিক্রির অনুমোদনে বিতর্ক

0
তালতলীতে জমি বিক্রির অনুমোদনে বিতর্ক

প্রেসনিউজ২৪ডটকমঃ তালতলী (বরগুনা) প্রতিনিধিঃ বরগুনার তালতলী উপজেলায় জমি বিক্রির অনুমোদন (পারমিশন) নিয়ে জনমনে দেখা দিয়েছে নানা প্রশ্ন ও আলোচনা। সাবেক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) উম্মে সালমা প্রায় দশ মাস দায়িত্বে থেকে রাখাইনদের মাত্র একটি জমি বিক্রির পারমিশন দিয়েছেন। অথচ বর্তমান ইউএনও (অতিরিক্ত) মো. রোকনুজ্জামান দায়িত্ব নেওয়ার পর মাত্র দুই মাসেই ছয়টি জমি বিক্রির অনুমোদন দিয়েছেন।

ইউএনও অফিস সূত্রে জানা গেছে, সাবেক ইউএনও উম্মে সালমা ২০২৪ সালের ১৫ অক্টোবর তালতলী উপজেলায় যোগদান করেন এবং ২০২৫ সালের ১৩ আগস্ট বদলি হয়ে যান। এরপর অতিরিক্ত দায়িত্বে বর্তমান ইউএনও মো. রোকনুজ্জামান যোগদান করেন। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, উম্মে সালমার দায়িত্বকালীন সময়ে রাখাইন সম্প্রদায়ের পাঁচ থেকে ছয়টি জমি বিক্রির আবেদন উপজেলা প্রশাসনে জমা পড়ে। কিন্তু দীর্ঘ সময়েও সেসব আবেদনের মধ্যে মাত্র একটি নিষ্পত্তি হয়, বাকিগুলো বাতিল করা হয়।

এতে বিক্রেতা ও ক্রেতা উভয়েই হয়রানির শিকার হন। অন্যদিকে, সে বদলীর পর ইউএনও (অতিরিক্ত) মোঃ রোকনুজ্জামান দায়িত্ব নেওয়ার পর পূর্বে জমা থাকা কয়েকটি আবেদনসহ মোট ছয়টি জমি বিক্রির অনুমোদন দিয়েছেন। এ ঘটনায় স্থানীয়দের মধ্যে শুরু হয়েছে নানা আলোচনা ও প্রশ্ন। কেউ বলছেন, “যদি ওই জমিগুলো বিক্রির উপযুক্ত হয়, তাহলে আগের ইউএনও কেন অনুমোদন দেননি?” আবার কারও প্রশ্ন, “বর্তমান ইউএনও এত দ্রুত অনুমোদন দিতে পারলেন কীভাবে?”এ বিষয় উপজেলা প্রশাসনের কাছে একাধিকবার এসব তথ্য চাইলেও তারা তথ্য দিতে অনীহা প্রকাশ করেন।

স্থানীয়দের অভিযোগ, সাবেক ইউএনও’র সময়ে বিভিন্ন সরকারি প্রকল্পে কাজ না করেও পে-অর্ডার রেখে বিল পরিশোধের অভিযোগ ছিল। বিষয়টি জানাজানি হলে পরে গোপনে কাজ সম্পন্ন করা হয়। এছাড়া রাখাইনদের জমি বিক্রির অনুমোদন না দেওয়ায় অনেকে আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েন। অনেক রাখাইন পরিবারের সদস্য জমির বায়না টাকা নিয়ে দলিল দিতে না পারায় পরে ধার করে সেই টাকা ফেরত দিয়েছেন। এছাড়াও, উম্মে সালমা পর্যটন সমৃদ্ধ তালতলী উপজেলায় পর্যটন উন্নয়ন বা রাখাইনদের জীবনমান উন্নয়নে তেমন কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করেননি বলেও স্থানীয় সচেতন মহলের অভিযোগ।

রাখাইন সম্প্রদায়ের কয়েকজন সদস্য জানান, নিয়ম অনুযায়ী আবেদন করেও মাসের পর মাস অপেক্ষা করতে হয়েছে। এখন একই জমির অনুমোদন পেয়ে তারা স্বস্তি পেলেও বিষয়টি প্রশাসনিক সিদ্ধান্তের স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে।তালতলীর সচেতন নাগরিক সমাজের একাংশ বলছেন, “দুই ইউএনওর সিদ্ধান্তে এই বৈষম্য প্রশাসনিক ধারাবাহিকতা ও ন্যায়বিচার নিয়ে প্রশ্ন তোলে। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নজরে আনা জরুরি।”নাম না প্রকাশের শর্তে এক ব্যক্তি বলেন, “উম্মে সালমা থাকাকালে রাখাইনরা জমির বায়না টাকা নিয়ে দলিল দিতে পারেননি। পরে অনেকে ধার করে সেই টাকা ফেরত দিয়েছেন।

এছাড়া তার সময়ে পর্যটন খাতে কোনো দৃশ্যমান উন্নয়ন হয়নি এবং রাখাইনদের জীবনমান উন্নয়নে কার্যকর কোনো পদক্ষেপও নেওয়া হয়নি।”নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক দলিল লেখক বলেন, “আমি অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা ইউএনওর আমলে আমার মক্কেলদের হয়ে ছয় থেকে সাতটি আবেদন করেছিলাম। এর মধ্যে একটি জমি বিক্রির আবেদন অনুমোদন পেয়েছি, বাকিগুলো প্রক্রিয়াধীন আছে এবং দ্রুত অনুমোদন পাব বলে আশা করছি। সাবেক ইউএনও কেন আমাদের আবেদনগুলো অনুমোদন দেননি, তা আমরা জানি না। সেই সময়ে মানুষ হয়রানির শিকার হয়েছে, জমির দলিল করতে পারেনি।”

এ বিষয়ে রাখাইন উন্নয়ন সংস্থার সাধারণ সম্পাদক মি. মংচিন থান বলেন, বর্তমান ইউএনও অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা যাচাই-বাছাই ছাড়া ও ভূমিদস্যদের সহযোগিতায় এইসব আমাদের রাখাইনদের জমি বিক্রির পারমিশন দিতে সহযোগিতা করেন। তাদের কাছে জমি পারমিশনের তথ্য চাইলেও দিতে চায়না। এটা ইউএনও মহোদয়কে নজর দেওয়া উচিৎ। তিনি আরও বলেন, সাবেক ইউএনও রাখাইন সম্প্রদায়ের উন্নয়নে তেমন কোন ভূমিকা রাখেনি। দশ মাসে আমাদের একটি কাজের জন্য মাত্র ১ লাখ টাকা বরাদ্দ দেন।

এ বিষয়ে সাবেক ইউএনও উম্মে সালমা বলেন, “এই বিষয়ে আমার কোনো মন্তব্য নেই। তবে আমি যতটুকু পেরেছি, নিয়ম মেনে কাজ করেছি।” বর্তমানে অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা ইউএনও মো. রোকনুজ্জামান বলেন, “বিধি মোতাবেক কাজ করা হয়েছে।” বরগুনার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শফিউল আলম বলেন, এ বিষয়ে যে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তাকে আমার কাছে আসতে বলেন আমি বিষয়টি শুনবো। উল্লেখ্য, তালতলী উপজেলায় রাখাইনদের জমি বিক্রি করতে হলে উপজেলা প্রশাসনের অনুমতি (পারমিশন) নেওয়া বাধ্যতামূলক।

 

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here