প্রেসনিউজ২৪ডটকমঃ বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের সাবেক মন্ত্রী ও সংসদ সদস্য গোলাম দস্তগীর গাজীর মাফিয়া সাম্রাজ্য বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির নির্বাহী সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান ভূঁইয়া দিপু নিয়ন্ত্রণ করছে বলে মন্তব্য করেছেন জাপান-বাংলাদেশ গ্রুপের চেয়ারম্যান সেলিম প্রধান। যেকারণে আওয়ামী লীগের লুটেরা ও হত্যা মামলার আসামি গাজীর ফাঁসির দাবিতে মানববন্ধন করায় ও সেলিম প্রধানের আড়ত দখল নিতে অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে দিপু বাহিনী হামলা চালিয়েছে বলে তিনি জানিয়েছেন।
বিএনপি নেতা মোস্তাফিজুর রহমান ভূঁইয়া দিপুর নির্দেশে সেলিম প্রধানের বাড়িতে হামলা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় বুধবার (২৯ জানুয়ারী) দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ মন্তব্য করেন। সেই সাথে অপরাধীদের দ্রুত আইনের আওতায় আনার দাবি করেন। সাবেক মন্ত্রী গাজীর সাম্রাজ্য বিএনপি নেতা দিপু ভূইয়া নিয়ন্ত্রণ করছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, গত ৫ আগস্টের পরে সাবেক মন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী বাহিনীর লোকজন বিএনপি নেতা দিপু ভূইয়ার বাহিনীর সাথে যৌথভাবে মিলে গেছে। এই দুই অপরাধী একত্রে মিলে নানা অপকর্ম করে বেড়াচ্ছে।
এর ধারাবাহিকতায় তারা আমার জায়গা ও আড়ত দখল করেছে। এ নিয়ে প্রতিবাদ করায় দিপু ভূইয়ার নির্দেশে তার লোকজন অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে আমার বাড়িতে হামলা চালিয়ে লোকজনদের আহত করেছে। মোটরসাইকেল ও গাড়ি পুড়িয়ে দিয়েছে। অথচ আমার আড়তের বিষয়ে অনেক আগেই আমি পুলিশ প্রশাসনের কাছে অভিযোগ করেছি। কিছুদিন আগে ইউএনও বসে সেই ভুয়া চুক্তিনামায় করা স্বাক্ষর যাচাই বাছাই করার জন্য সিআইডিতে পাঠিয়েছে। তখন সিদ্ধান্ত হয়, বিসমিল্লাহ আড়ত থেকে কেউ টাকা তুলতে পারবে না। তবে দিপু ভূইয়ার লোকজন তাদের কথা অমান্য করে আড়তের দোকান থেকে টাকা তুলে আসছে।
এ নিয়ে গত সোমবার রূপগঞ্জের সাওঘাট এলাকার এলাকাবাসী ও ব্যবসায়ীরা মিলে গাজী ও তার লোকজনদের ফাঁসির দাবিতে মানববন্ধন করেছেন। এটা করাতে বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান ভূইয়া দিপু ও জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক গোলাম ফারুক খোকনের গায়ে লাগে। কারণ দিপু ভূইয়া তো গাজীর আরেক ছেলে। গাজীর দুই ছেলে একটা হলো পাপ্পা গাজী আরেকজন হলেন দিপু গাজী। গাজীর মাফিয়া সাম্রাজ্য দিপু ভূইয়া নিয়ন্ত্রণ করছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘গত এক বছর আমি এই গাজীর সন্ত্রাসী বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছি।
আমি যখন জেলখানায় ছিলাম তখন আমার পৈত্রিক ও কেনা প্রায় ১৯ বিঘা জমির উপরে গড়ে উঠা বিসমিল্লাহ আড়ত এই গাজী বাহিনীর লোক মজিবুর রহমান ও হাবিবুর রহমান হাবিব সহ তার লোকজন ভুয়া চুক্তিনামা বানিয়ে দখল করে নেয়। সেটা ছিল ১০ বছরের ভাড়ার একটা ভুয়া চুক্তিনামা। অথচ সেই চুক্তিনামার স্বাক্ষরের সময়ে আমি জেলখানায় ছিলাম। এ নিয়ে প্রতিবাদ করলে ওই সময় গাজী বাহিনীর লোকজন আমার বাড়িতে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করে ও গুলি চালায়। বিগত আওয়ামী লীগ আমলে রূপগঞ্জের প্রতিটা ইউনিয়ন ও এলাকা পর্যায়ে মন্ত্রী গাজীর সন্ত্রাসী বাহিনী ছিল।
সেখানে কেউ তার বিরুদ্ধে কথা বললে অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে তার বাড়িতে হামলা চালাতো। এক কথায় গাজী রূপগঞ্জের মাফিয়া ছিল। এখন গাজীর সেই মাফিয়া সাম্রাজ্য নিয়ন্ত্রণ করছে দিপু ভূইয়া। বিএনপি নেতা দিপু ভূইয়ার চাঁদাবাজির প্রসঙ্গে তিনি বলেন, দিপু ভূইয়া রিকশা ও সিএনজি-ট্যাক্সী থেকে চাঁদাবাজী করে। গাউছিয়া এলাকায় ফ্লাইওভারের দুপাশে ফু্টপাতে অবৈধ হকার ও দোকান উচ্ছেদ করা হয়েছিল। কিন্তু ৫ আগস্টের পরে দিপু বাহিনীর লোকজন ফুটপাত থেকে ২০ থেকে ৫০ হাজার টাকার বিনিময়ে দোকান বসিয়েছে।
বিএনপির সেক্রেটারী খোকন (গোলাম ফারুক খোকন) আমার সাথে দেখা করে আড়তের জমি দখলমুক্ত করতে ৫০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। অথচ সেটা আমার নিজের জায়গা। এক কথায় গাজী যেসব জায়গা থেকে চাঁদা উঠাতো, দখলবাজি করতো ঠিক সেখানে এখন দিপু ভূইয়া ও খোকন একই কাজ করছে। উল্টো আগের তুলনায় তাদের রেট বেড়ে গেছে। বর্তমানে রূপগঞ্জে দিপু ভূইয়া ও খোকনের কথা ছাড়া কোন কাজ হয় না। তাদের অপকর্মের বিষয়ে আমি বিএনপি অফিসে অভিযোগ জমা দিয়েছি।
এরুপ নানা সেক্টর থেকে প্রতিদিন ২ থেকে ৩ কোটি টাকা চাঁদা উঠে। এ বিষয়ে জানাতে চাইলে রূপগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘আড়তের চুক্তিনামার বিষয়টি আমাদের কাছে এসেছিল। তবে দলিল ভুয়া নাকি সেটা নির্বাহী আদেশের কিছু করার আমাদের ইখতিয়ার নেই। এটা জুডিসিয়ারী বিষয়। আদালত থেকে যার পক্ষে রায় হবে তাকে আড়ত পাবে। তিনি আরও বলেন, হামলার বিষয়ে আমরা প্রতিবেদন দিয়ে দিয়েছি। পুলিশকে তদন্ত করে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
প্রসঙ্গত, গত মঙ্গলবার (২৮ জানুয়ারী) দুপুরে বিএনপির নেতা মোস্তাফিজুর রহমান ভূঁইয়া দিপুর নির্দেশে তার লোকজন রূপগঞ্জের সাওঘাট এলাকায় সেলিম প্রধানের বাড়িতে হামলা চালায় ও অগ্নিসংযোগ করে। এতে গুলিবিদ্ধ সহ ৫ জন আহত হয়েছেন। সেলিম প্রধানের বাড়িতে থাকা ১০টি মোটরসাইকেল ও একটি গাড়িতে আগুন দেওয়া হয় ও লুটপাট করা হয়।