কুলের গ্রাম হিসেবে পরিচিত মহেশপুরে ভাটপাড়া-স্বাবলম্বী ৮শ’ পরিবার

0
কুলের গ্রাম হিসেবে পরিচিত মহেশপুরে ভাটপাড়া-স্বাবলম্বী ৮শ’ পরিবার

প্রেসনিউজ২৪ডটকমঃ জিয়াউর রহমান জিয়া,মহেশপুর (ঝিনাইদহ)সংবাদদাতা ঃ ঝিনাইদহের মহেশপুরে কুলের গ্রাম খ্যাত ভাটপাড়ায় কুল (বরই) চাষ করে স্বাবলম্বী হয়েছেন অনেক পরিবার। মাঠের পর মাঠ বিভিন্ন জাতের কুল বাগান। কেউ বা নিজের জমি আবার কেউ অন্যের জমি লীজ বা বর্গা নিয়ে চাষ করেছেন কুল। প্রতিদিন ট্রাক ভর্তি কুল যাচ্ছে ঢাকা,চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে। এই গ্রামের ৯শ’ পরিবারের মধ্যে প্রায় ৮শ’ পরিবারই কুল চাষের সাথে জড়িত।

গ্রামের প্রায় ৩ হাজার বিঘা জমির মধ্যে ২ হাজার ৪শ’ বিঘা জমিতে চাষ করা হয়েছে কুল। কৃষি অফিসের সুত্র মতে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় কুল চাষের গ্রাম এটি। স্থানীয়রা ভাটপাড়া গ্রামটিকে কুলের গ্রাম হিসেবেই পরিচিত করেছেন। সরেজমিনে কুল বাগানের মাঠে গিয়ে কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, ২০১১ সালের দিকে এই গ্রামের স্থানীয় গ্রাম্য চিকিৎসক ও কৃষক তাজু উদ্দিন মহেশপুর উপজেলা কৃষি অফিসের সার্বিক সহযোগিতায় প্রথমে দেড় বিঘা জমিতে বাউ কুল চাষ করেন।

সেই বছর তিনি কুল বিক্রি করে বেশ টাকা পান। এর পর কুল চাষে আগ্রহ বেড়ে যায তার। পরের বছর আরো ৪ বিঘা জমিতে বাউকুল চাষ করেন তিনি। এর পর ডা: তাজু উদ্দিনকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। তার দেখা দেখি শুরু হয় কুলের চাষ। কুল চাষ করে স্বাবলম্বী হয়েছে অধিকাংশ চাষী। কেউ কিনেছেন জমি, মটরসাইকেল, কেউ বা তৈরি করেছেন পাকা বাড়ি। গ্রামের স্বপন আলী ১৭ বিঘা, চানমিয়া ৪ বিঘা, বাবু শেখ ৫ বিঘা, তহিদুল ৬ বিঘা, তাজুল ৮ বিঘা, মুনছুর শেখ ৭ বিঘা, সিপনের ৬ বিঘা, রফিকুল ৩ বিঘা, ফারুক এর ৭ বিঘা, এপিয়ারের ৬ বিঘাসহ এই গ্রামের প্রায় ৮শ পরিবারের কুলবাগান আছে।

প্রতিদিন প্রায় ২ হাজার নারী-পুরুষ কাজ করছে এইসব বাগানে। প্রথম কুল চাষী গ্রাম্য ডাক্তার তাজু উদ্দিন জানান, প্রথম বছরে তিনি দেড় বিঘা জমিতে বাউকুল চাষ শুরু করেন। কুল চাষ একটি লাভ জনক ফসল। কারো যদি এক বিঘা জমিতে কুল থাকে তাহলে সব খরচ বাদে ১ থেকে দেড় লাখ টাকা আয় করা সম্ভব। এখন তার ৮ বিঘা জমিতে কুল আছে। তার দেখা দেখি এখন প্রায় ২ হাজার ৪শ’ বিঘা জমিতে বাউকুল চিনিগুরা,থাই ও বল সুন্দরী চাষ হচ্ছে। তিনি বলেন বাউ কুল মুলত ৩-৪ মাসের ফসল। যে জমিতে কুল চাষ করা হয় সেই জমিতে বোরো ধান কিংবা কলাই চাষ করা যায়।

বাউকুল চাষী তহিদুল জানান, বর্তমানে প্রতি কেজি বাউকুল পাইকারী বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৫০ টাকা দরে। আর বলসুন্দরী কুল ৫০ থেকে ৬০ টাকা দরে। ঢাকার পাইকারী ব্যবসায়ীরা বাগান থেকেই কুল ট্রাকে ভরে নিয়ে যাচ্ছে। বলসুন্দরী কুল চাষী বাবু শেখ জানান, এক বিঘা জমিতে কুল চাষ করতে খরচ হয় মাত্র ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা। বলসুন্দরী কুল চাষে একটু খরচ বেশি দামও একটু বেশি। তিনি আরো বলেন, এক বিঘা জমি থেকে ৯০ থেকে ১০০ কাটুন কুল সংগ্রহ করা যায়।

মান্দারবাড়িয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আমিনুর রহমান জানান, এ ইউনিয়নের ভাটপাড়া গ্রাম কুল চাষের জন্য বিখ্যাত। প্রতিদিন ২-৩ ট্রাক ভর্তি কুল দেশের বিভিন্ন স্থানে পাঠাচ্ছেন কুল চাষিরা। কুল চাষ করে এ গ্রামের অনেকে স্বাবলম্বী হয়েছে। মহেশপুর উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা ইয়াসমিন সুলতানা জানান, কুল একটি লাভ জনক ফসল। অল্প সময়ে এটি চাষ করে বেশি লাভ পাওয়া যায়।

ভাটপাড়া গ্রামের কুল চাষীদের কৃষি অফিস থেকে সার্বিক সহযোগিতা করা হচ্ছে। কারিগরি, রোগবালাই, কৃষক প্রশিক্ষণ, কুল প্যাকেজিংসহ সার্বিক সহযোগিতা করা হচ্ছে। কুল চাষীদের সার্বিক সহযোগিতার জন্য হাসান নামের একজন উপ সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মান্দারবাড়িয়া ব্লকে রাখা হয়েছে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here