প্রেসনিউজ২৪ডটকমঃ ভোলা সংবাদদাতা : ভোলা সদর উপজেলা জনস্বাস্থ্য উপ-সহকারী প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে সীমাহীন অফিসিয়াল জাল জালিয়াতি, নানা দুর্নীতি, অনিয়ম, স্বেচ্ছাচারিতা, ভুয়া স্বাক্ষর দিয়ে এমপির ডিও লেটার পরিবর্তন করা, ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের আদেশ অমান্য করা, ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকাসহ বিভিন্ন অপকর্মের অভিযোগে সংবাদ সম্মেলন করেছে ওই ডিপার্টমেন্টের ঠিকাদাররা।
বুধবার (৪ ডিসেম্বর) দুপুরে ভোলা প্রেসক্লাব হল রুমে তারা এ সংবাদ সম্মেলন করেন। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত অভিযোগপত্র পাঠ করেন ঠিকাদার মো. ফিরোজ। এসময় তারা বলেন, উপ-সহকারী প্রকৌশলী মাসুম বিল্লা নিজেকে আওয়ামী লীগের একজন সক্রিয় কর্মী পরিচয় দিয়ে ভোলা সদর উপজেলায় বিভিন্ন সময়ে ঠিকাদারদের সঙ্গে কাজের কমিশন ও অনিয়মের শর্তে ভাগাভাগি ইত্যাদি নিয়ে প্রায়ই বাকবিতণ্ডা ও নানা ধরনের অপকর্মের মাধ্যমে অফিসের পরিবেশ নষ্ট করে আসছে।
তার রাজনৈতিক প্রভাব, ঘৃণ্য আচার-আচরণ ও কমিশন বাণিজ্যে বর্তমান পরিবর্তিত পরিস্থিতিতেও ঠিকাদাররা অতিষ্ঠ। বৈষম্য বিরোধী ছাত্র জনতার আন্দোলনে ফ্যাসিস্ট সরকারের পতন ঘটলেও অবসান ঘটেনি বিভিন্ন অফিসে ঘাপটি মেরে থাকা দুর্নীতিবাজদের। তাই ভোলা সদর জনস্বাস্থ্য উপ-সহকারী প্রকৌশলী মাছুম বিল্লা নিজের দুর্নীতি আর অপকর্ম ঢাকতে ৫ আগস্টের পর রাতারাতি আওয়ামী খোলস বদলিয়ে ভুয়া সমন্বয়ক সেজে উদুর পিণ্ডি বুদুর ঘাড়ে চাপাতে সংবাদ কর্মীদেরকে মিথ্যা ও বানোয়াট তথ্য পরিবেশন করে ভোলাবাসীকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে।
গত ১ ডিসেম্বর ভোলা তুলাতলী একটি রিসোর্টে সংবাদ সম্মেলনে দুর্নীতিবাজ মাছুম বিল্লা নিজেকে জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানে অংশ নেওয়া একজন বৈষম্যবিরোধী সমন্বয়ক দাবি করেছেন। যা সম্পূর্ণ ভুয়া, মিথ্যা ও বানোয়াট। আমরা আজকের এই সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। মূলত তিনি আওয়ামী লীগ দলীয় লেবাস পরিবর্তন করে, বৈষম্যবিরোধী সমন্বয়কের তকমা লাগিয়ে পুনরায় অফিসিয়ালি প্রভাব দেখাতে সে উঠে পরে লেগেছে। কিন্তু আমরা সচেতন ঠিকাদাররা তার আন্দোলনে অংশ নেওয়ার মিথ্যা তথ্য ও অভিযোগকে কোনো দিনও মেনে নেব না।
এই উপ-সহকারী প্রকৌশলী মাছুম বিল্লা ২০২১ সালে লালমোহন উপজেলায় কর্মরত থাকাকালীন নলকূপের গ্রাহকদের কাছ থেকে পরিমাণের অতিরিক্ত টাকা উত্তোলন, নলকূপ বিক্রি করা, নলকূপের পাটাতন করা, ভুয়া বিল ভাউচার করে জলবায়ু প্রকল্পের টিউবওয়েল অন্যত্র বিক্রি করে সরকারের অর্থ লুটপাটসহ সীমাহীন দুর্নীতি করেছেন। তার বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলন করেছিলেন ওই অফিসের অফিস সহকারী সাগর চন্দ্র দে। যার প্রেক্ষিতে প্রকৌশলী মাছুম বিল্লাকে লালমোহন থেকে সরিয়ে ভোলা সদর উপজেলায় বদলি করা হয়।
তিনি ভোলায় যোগদানের পর জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর, সদর উপজেলা কর্তৃক বাস্তবায়িত সমগ্র দেশে নিরাপদ পানি সরবরাহ প্রকল্পের আওতায় ২০২২ – ২০২৩ ইং অর্থবছরে বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি, ভোলা -১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য তোফায়েল আহমেদ এর বরাদ্দকৃত গভীর নলকূপ স্থাপনের স্থানের নাম উল্লেখ করা ডিও লেটারে জাল স্বাক্ষর দিয়ে আরেকটি ডিও লেটার বানিয়ে গ্রাহকদের কাছ থেকে উৎকোচ গ্রহণ করে অর্থ আত্মসাৎ করেছিলেন।
এছাড়াও তার জন্মস্থান ও কর্মস্থল একই স্থানে হওয়ায় ঠিকাদারগনকে পেশিশক্তির হুমকি ধামকি এবং অফিস স্টাফদের সঙ্গে প্রভাব খাটায়। এই উপ-সহকারী প্রকৌশলী মাছুম বিল্লা একক আধিপত্য বিস্তার, ঠিকাদারদের কাছ থেকে সমগ্র দেশে নিরাপদ পানি সরবরাহ প্রকল্পের সাইট লিস্ট, রেজুলেশন, সাইট হ্যান্ডওভারসহ বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন উসিলায় ঠিকাদারদের চাপ দিয়ে টাকা আদায় করেন। কোনো ঠিকাদার টাকা দিতে গড়িমসি করলে তার সঙ্গে অমানবিক আচরণ করেন।
সাইট লিস্ট ও চূড়ান্ত বিলের জন্য তার পিছনে মাসের পর মাস ঘুরতে হয়। এতে আমরা ঠিকাদাররা আত্মসম্মান ও আর্থিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হই। ভোলার দুই আওয়ামী লীগ নেতা তার নিকট আত্মীয় হওয়ায় তাদের প্রভাবে সীমাহীন দুর্নীতি ও নানা অপকর্ম করেছেন এই প্রকৌশলী। রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় থাকার কারণে কেউ টু শব্দ করার সাহস পায়নি। সর্বোপরি সমগ্র বাংলাদেশে নিরাপদ পানি সরবরাহ প্রকল্প ৪র্থ ও ৫ম পর্বের টিউবওয়েল নির্ধারিত ব্যক্তির হওয়া সত্ত্বেও টাকার বিনিময়ে অন্যত্র বিক্রি করে দেয়।
পৌরসভায় টিউবওয়েল বসানোর কোনো নির্দেশনা না থাকলেও টাকার বিনিময়ে তিনি বরাদ্দকৃত টিউবওয়েল পৌরসভার এরিয়ায় বসানোর নির্দেশনা দিয়েছেন। পরিশেষে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র জনতার আন্দোলনে আওয়ামী সরকারের পতনের পর একটি নতুন বাংলাদেশ সৃষ্টি হওয়ায় কথা বলার পরিবেশ ফিরে পাওয়ার পর ভোলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের ঠিকাদাররা গত ২৮ আগস্ট ২০২৪ তারিখে উপ-সহকারী প্রকৌশলী মাসুম বিল্লার অফিসিয়াল কৃতকর্ম, দুর্নীতি, অনিয়ম, স্বেচ্ছাচারিতাসহ বিভিন্ন অপকর্মের বিরুদ্ধে প্রধান প্রকৌশলীর বরাবর লিখিত অভিযোগ দিলে গত ১৭ অক্টোবর ২০২৪ তারিখে তাকে সাতক্ষীরা জেলার আসাশুনি উপজেলায় ৭ দিনের সময় দিয়ে স্ট্যান্ড রিলিজ করা হলেও তিনি অদ্যাবধি নানা অজুহাতে উক্ত কর্মস্থলে যোগদান করেননি।
উপরন্তু তিনি তার দুর্নীতি ও অনিয়ম ঢাকতে ভোলা সদর উপজেলা প্রকৌশলীসহ অফিস স্টাফদের বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলন করে মিথ্যা অপবাদ রটিয়ে শাক দিয়ে মাছ ঢাকার চেষ্টা করছেন। সম্মেলনে উপস্থিত ঠিকাদাররা তার অপসারণ দাবি করে সত্য উদ্ঘাটন করে রাষ্ট্র ও জাতির কাছে সমাজে থাকা ঘাপটিমারা এসব দুর্নীতিবাজদের মুখোশ উন্মোচন করে দেশকে দুর্নীতিমুক্ত করতে সাংবাদিকদের প্রতি অনুরোধ করেন।