প্রেসনিউজ২৪ডটকমঃ নারায়ণগঞ্জের আলোচিত সাব্বির হত্যা মামলায় নারায়ণগঞ্জ জেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি জাকির খানের বিরুদ্ধে তদন্তকারী কর্মকর্তা সাক্ষ্য দিয়েছেন আদালতে। উচ্চ আদালত আগামী ২৫ নভেম্বরের মধ্যে মামলাটি নিষ্পত্তি করার নির্দেশনা দিয়েছেন বলে আইনজীবীরা জানিয়েছেন। ফলে আগামীকাল থেকে প্রতিদিন মামলাটির সাক্ষ্য গ্রহণ সহ অন্যান্য কার্যক্রম চলবে।
সোমবার (১৮ নভেম্বর) দুপুরে নারায়ণগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ মমিনুল ইসলামের আদালতে সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়। সাক্ষ্য প্রদানকারী হলেন- মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা নুরুল আফছার। জেলা ও দায়রা জজ কোর্ট আদালতের রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি অ্যাডভোকেট আবুল কালাম আজাদ জাকির বলেন, ১০ জন আইও এর মধ্যে ৯ নম্বর আইও (তদন্তকারী কর্মকর্তা) নুরুল আফছার আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছেন। উনি দুটি পত্রিকার রিপোর্ট সহ কিছু কাগজপত্র জমা দিয়েছেন।
এছাড়া ১৬১ ধারায় ৯ জন সাক্ষীর জবানবন্দি নিয়েছিলেন তিনি। তিনি আরও বলেন, আসামি পক্ষ উচ্চ আদালতে জামিনের আবেদন করলে ৬ মাসের মধ্যে আদালত মামলাটি নিষ্পত্তি করার নির্দেশ দেন। সেই ৬ মাসের মেয়াদ আগামী ২৫ তারিখ শেষ হয়ে যাবে। ফলে এই সময়ের মধ্যে মামলাটি নিষ্পত্তি করার চেষ্টা করবেন বলে আদালতের বিচারক জানিয়েছেন। সে হিসেবে আগামীকাল থেকে প্রতিদিন এই মামলার তারিখ হবে, প্রতিদিন মামলার সাক্ষ্য গ্রহণ করা হবে।
আসামি পক্ষের আইনজীবী মো. রবিউল হোসেন বলেন, তদন্তকারী কর্মকর্তা নুরুল আফছার শুধুমাত্র কিছু কাগজপত্র জব্দ সহ পত্রিকার রিপোর্টের কাটিং দেখিয়েছে। হত্যাকাণ্ডের ঘটনার সময় জাকির খান দেশের বাইরে ছিল বলে তিনি আদালতে জানিয়েছেন। এই মামলার সাথে যেসব কাগজপত্রের সম্পৃক্ততা নেই সেসব তিনি দেখিয়েছেন। এছাড়া উনার সাক্ষীও যথাযথ হয়নি। তিনি ছাড়া এই মামলায় এখন পর্যন্ত ১৮ জন সাক্ষ্য দিয়েছেন, তারা কেউ জাকির খানের বিরুদ্ধে কোন তথ্য দেয়নি।
তিনি আরও বলেন, আগামীকাল থেকে ২৬ নভেম্বর পর্যন্ত এই মামলার কার্যক্রম প্রতিদিন চলবে। আপনারা এরকম মামলা কবে দেখেছেন যে মামলার কার্যক্রম প্রতিদিন চলে। এটা একটা চাঞ্চল্যকর হত্যা মামলা হলেও এর সাথে আসামি জাকির খান কোনভাবে সম্পৃক্ত নয়। তার সম্পৃক্ততা না থাকার কারণে আদালত এই মামলা ৬ মাসের মধ্যে শেষ করার নির্দেশনা দিয়েছেন। সেই সময় শেষ হবে আগামী ২৫ নভেম্বর।
অর্থাৎ আগামী ২৬ নভেম্বরের মধ্যে মামলাটি নিষ্পত্তি হবে বলে আমরা আশা করছি। এর আগে, দুপুরে পুলিশের কঠোর নিরাপত্তার মধ্যে দিয়ে নারায়ণগঞ্জ কারাগার থেকে আদালতে আনা হয় জাকির খানকে। পরে আদালতের কার্যক্রম শেষে তাকে ফের কারগারে পাঠানো হয়। এ সময় জাকির খানের মুক্তির দাবিতে শত শত নেতাকর্মী ব্যানার ফেস্টুন নিয়ে জড় হয়।
এ সময় মিছিলে উপস্থিত ছিলেন, জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি সরকার হুমায়ুন করিব, নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সাবেক আহবায়ক মনিরুল ইসলাম রবি, নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আব্দুস সবুর খান সেন্টু, মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক মনির খান, সদর থানা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক লিংকন খান, সদর থানা বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক ও ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের সভাপতি দিদার খন্দকার , যুবদল নেতা পারভেজ মল্লিক, সলিমুল্লাহ করিম সেলিম, কাশিপুর ৯নং ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক রহমতউল্লাহ মানিক সহ প্রমুখ। প্রসঙ্গত, ২০০৩ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারী গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন ব্যবসায়ী নেতা সাব্বির আলম খন্দকার।
এ হত্যাকান্ডের পর তার বড় ভাই তৈমূর আলম বাদি হয়ে ১৭ জনকে আসামী করে ফতল্লা থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলা দায়েরের পর মোট ৯ জন তদন্তকারী কর্মকর্তা পরিবর্তন করা হয়। পরবর্তিতে মামলাটি পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগে (সিআইডি) স্থানান্তর করা হয়। সিআইডির এএসপি মসিহউদ্দিন দশম তদন্তকারী কর্মকর্তা দীর্ঘ প্রায় ৩৪ মাস তদন্ত শেষে তিনি ২০০৬ সালের ৮ জানুয়ারী আদালতে ৮ জনকে আসামী করে চার্জশীট দাখিল করেন।
এতে মামলা থেকে সাবেক এমপি গিয়াসউদ্দিন, তার শ্যালক জুয়েল, শাহীনকে অব্যাহতি দিয়ে সাবেক ছাত্রদল সভাপতি জাকির খান, তার দুই ভাই জিকু খান, মামুন খানসহ মোট ৮ জনকে আসামি উল্লেখ করা হয়।