প্রেসনিউজ২৪ডটকমঃ সাব্বির হত্যা মামলায় নারায়ণগঞ্জ জেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি জাকির খানের বিরুদ্ধে দুজন সাক্ষ্য দিয়েছেন। তবে এই ঘটনার সময়ে তারা কেউ জাকির খানকে দেখেনি বলে জানিয়েছেন। ফলে এই মামলাটি রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য করা হয়েছে বলে দাবি করেন জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি সরকার হুমায়ুন কবির। সাক্ষীদের কাছ থেকে সাদা কাগজে সই রেখে মামলার সাক্ষী করা হয়েছে বলে আদালতে জানিয়েছেন সাক্ষীরা।
রবিবার (৬ অক্টোবর) দুপুরে অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ উম্মে সরাবন তহুরার আদালতে তারা সাক্ষ্য দেন। সাক্ষী জেরার সময় আদালতে জাকির খান অনুপস্থিত ছিলেন। অসুস্থ্যতার কারণে তাকে আদালতের নির্দেশে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। সাক্ষীরা হলেন-ঠিকাদার গোলাম সারোয়ার বাদল ও চেম্বার অব কমার্সের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারী আামিনুল ইসলাম উল্লাস। আসামি পক্ষের আইনজীবী মো. রবিউল হোসেন বলেন, আজকে দুজন সাক্ষী সহ মোট ১৬ জন সাক্ষী দিয়েছেন।
আদালতে জব্দ করার বিষয় উত্থাপন করা হয়েছে। এদের মধ্যে একজন বলেছেন, আমি কিছুই জানিনা আমার সামনে কিছু জব্দ করা হয়নি। তিনি সাদা কাগজে স্বাক্ষর করেছেন।সাব্বির আলম খন্দকারের ভাই কমিশনার ছিলেন, তার কার্যালয়ে নিয়ে সাক্ষী বাদলের কাছ থেকে সাদা কাগজে সই নিয়েছেন। আরেকজন সাক্ষী চেম্বার অব কমার্সের ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারী আামিনুল ইসলাম উল্লাস বলেছেন, তার সামনে সভাপতি স্বাক্ষর করলে তিনি সেখানে অনুলিপি স্বাক্ষর করেন। সে হিসেবে তিনি স্বাক্ষর দিয়েছেন। এমনকি তার কাজ থেকে নেওয়া কাগজগুলো ফটোকপি আদালতে দাখিল করেছেন।
সেসব কাগজের মূল কপি না দেখে তিনি কিছুই বলতে পারবে না বলে জানিয়েছেন। এছাড়া তার অফিস থেকে কিছুই উদ্ধার হয়নি বলে তিনি আরও জানিয়েছেন। আমি যে পর্যন্ত মামলার জেরা করিছি তাতে কিছু প্রমাণ করতে পারেনি তারা। আসামি পক্ষের আরেক আইনজীবী ও নারায়ণগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি সরকার হুমায়ুন কবির বলেন, এই মামলার ১৬ জন সাক্ষী কেউ বলেনি জাকির খান এই ঘটনার সাথে জড়িত রয়েছে। সাক্ষীরা কিছু জানেনা, তারা কিছু দেখেনি বলে আদালতে জানিয়েছেন। অথচ তাদেরকে সাক্ষী হিসেবে রাখা হয়েছে।
এতে প্রমাণিত হয় জাকির খান এই ঘটনার সাথে জড়িত নয়। এটা সম্পূর্ণ মিথ্যা মামলা। আশা করছি, তিনি অচিরেই মামলা থেকে খালাস পাবেন। এবং অল্প সময়ের মধ্যে তিনি জাকির খান জামিন পাবেন, ইনশাআল্লাহ। আসামি পক্ষের আরেক আইনজীবী রাজীব মণ্ডল বলেন, সাক্ষীর কাছ থেকে সাদা কাগজে সই নিয়েছেন সাব্বির আলম খন্দকারের ছোট ভাই খোরশেদ।এমনকি অনেক সাক্ষী নিজে জানেনা তাকে সাক্ষী করা হয়েছে।এদিকে জেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি জাকির খানের মুক্তির দাবিতে সকাল থেকে আদালত পাড়ায় দলে দলে বিক্ষোভ মিছিল করেছে তার শত শত নেতাকর্মী ও সমর্থকরা।
এ সময় তারা স্লোগানে স্লোগানে আদালতপাড়া প্রকম্পিত করে।এ সময় মিছিলে উপস্থিত ছিলেন সদর থানা বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক ও ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের সভাপতি দিদার খন্দকার, সদর থানা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক লিংকন খান, জেলা মৎস্যজীবী দলের সভাপতি এইচ এম হোসেন, জেলা মৎস্যজীবী দলের সিনিয়র সহ সভাপতি মুন্সি মো. শাহজালাল, জেলা গার্মেন্ট শ্রমিক দলের সভাপতি কাউসার আহমেদ, কাশিপুর ৯নং ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক রহমতউল্লাহ মানিক, মাসুম, শেখ সালেহ আহাম্মদ রনি সহ প্রমুখ।
প্রসঙ্গত, ২০০৩ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারী গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন ব্যবসায়ী নেতা সাব্বির আলম খন্দকার। এ হত্যাকান্ডের পর তার বড় ভাই তৈমূর আলম বাদি হয়ে ১৭ জনকে আসামী করে ফতল্লা থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলা দায়েরের পর মোট ৯ জন তদন্তকারী কর্মকর্তা পরিবর্তন করা হয়। পরবর্তিতে মামলাটি পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগে (সিআইডি) স্থানান্তর করা হয়। সিআইডির এএসপি মসিহউদ্দিন দশম তদন্তকারী কর্মকর্তা দীর্ঘ প্রায় ৩৪ মাস তদন্ত শেষে তিনি ২০০৬ সালের ৮ জানুয়ারী আদালতে ৮ জনকে আসামী করে চার্জশীট দাখিল করেন।
এতে মামলা থেকে গিয়াসউদ্দিন, তার শ্যালক জুয়েল, শাহীনকে অব্যাহতি দিয়ে সাবেক ছাত্রদল সভাপতি জাকির খান, তার দুই ভাই জিকু খান, মামুন খানসহ মোট ৮ জনকে আসামী উল্লেখ করা হয়।