প্রেসনিউজ২৪ডটকমঃ জেলা সংবাদদাতা: উজান থেকে নেমে আসা ঢল ও ভারি বর্ষণে তিস্তায় পানি বৃদ্ধিতে কয়েক দিনের ব্যবধানে ফের বন্যা দেখা দিয়েছে। এতে রংপুরের ৩টি উপজেলায় প্রায় পাঁচ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। অনেক বাড়ি ঘর ছেড়ে গবাদি পশুসহ উঁচু স্থানে আশ্রয় নিতে দেখা গেছে।
বর্তমানে পরিবারগুলোর মাঝে খাদ্যসহ বিশুদ্ধ খাবার পানির সংকট দেখা দিয়েছে। সেই সাথে দেখা দিয়েছে তীব্র নদী ভাঙন। বৃহস্পতিবার (৪ জুলাই) উপজেলার মর্ণেয়া ইউনিয়নের তালপট্টি, আলফাজ টারী, নরশিং, হরিণ চরা কোলকোন্দ ইউনিয়নের চর মটুকপুর, চর ছিলাখাল, মধ্য চিলাখাল, লক্ষ্মিটারী ইউনিয়নের চর ইচলি, পশ্চিম ইচলি, চল্লিশসাল ও নোহালী ইউনিয়নের বাগডহরা, মিনার বাজার এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বানভাসি ও বন্যায় ঘর-বাড়ি ভেঙে যাওয়া পরিবারগুলোর দুর্বিষহ জীবন যাপন করছে।
গবাদিপশু-পাখি সঙ্গে নিয়ে ঠাঁই নিয়েছেন রাস্তার ধারে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, মসজিদ ও বিভিন্ন খোলা স্থানে। ভাঙন হুমকিতে থাকায় আগে-ভাগেই অনেক পরিবার তাদের বাড়ি-ঘর অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।সরেজমিনে দেখা যায়, বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে টিউবওয়েল, রান্নার চুলা, পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থা। দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ পানি ও খাবার সংকট। পানিবন্দি পরিবারগুলো দুর্বিষহ জীবনযাপন করছে।
এ ছাড়া পানিতে তলিয়ে নষ্ট হয়েছে বাদাম খেত ও আমন ধানের বীজতলাসহ বিভিন্ন শাকসবজির খেত।চরাঞ্চলগুলো প্লাবিত হওয়ায় তলিয়ে গেছে গ্রামীণ রাস্তাঘাট। মর্ণেয়া ইউনিয়নের আলফাছটারী এলাকায় ব্যাপক ভাঙন দেখা দিয়েছে। নদী ভাঙনে গত চারদিনে ওই এলাকায় অন্তত অর্ধশত পরিবারের ঘরবাড়ি বিলীন হয়েছে। চরম দুর্ভোগ দেখা দিয়েছে পানিবন্দি পরিবারগুলোর। ভাঙন আতঙ্কে অনেকে বাড়িঘর-আসবাবপত্র সরিয়ে নিচ্ছে।
স্থানীয়রা জানান, এবার গঙ্গাচড়ায় তিস্তায় বিলীন হয়েছে শতাধিক পরিবারের ঘর-বাড়ি। কয়েকদিনের ভারি বৃষ্টি আর ভারতের সিকিম থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে ফুলে-ফেঁপে উঠেছে তিস্তা নদী। এতে রংপুরের গঙ্গাচড়ার চারটি ইউনিয়নের প্রায় ১০০টি পরিবারের ঘর-বাড়ি তিস্তায় বিলীন হয়েছে। ২৫০ টিরও বেশি পরিবার ভাঙন আতঙ্কে তাদের ঘর-বাড়ি সরিয়ে নিয়েছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে গঙ্গাচড়া উপজেলার প্রায় ৫ হাজার পরিবার।
মর্ণেয়া ইউনিয়নের বানভাসী আফসার আলী (৪৮) বলেন, ১০ দিন থাকি পানিবন্দি হয়্যা (হয়ে) আছি। হামার চেয়ারম্যান, মেম্বার, সরকারি লোক কায়ো (কেউ) একনা (একবার) দেখপার আইসে নাই (দেখতে আসেনি)। কোলকোন্দ ইউনিয়নের খালেদা বেগম জানান, নদী থেকে প্রায় ২০০ মিটার দূরে হামার বাড়িটি আছিলো। বুধবার রাতে রান্নাঘরসহ তিনটি ঘর নিমেষেই তিস্তার গর্ভে বিলীন হয়ে যায়।
এদিকে মর্ণেয়া ইউপি চেয়ারম্যান জিল্লুর রহমান জানান, গত কয়েকদিনে তার ইউনিয়নে অর্ধশত পরিবারের বাড়িঘর নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে এক হাজারের বেশি পরিবার। গঙ্গাচড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাহিদ তামান্না বলেন আমাদের কাছে তিস্তার ভাঙনে বিলীন হয়ে যাওয়া মর্ণেয়া ইউনিয়নের এখন পর্যন্ত ২০টি পরিবারের তালিকা আছে। আমরা আরও খোঁজখবর নিয়ে তালিকা করছি।
তবে ভাঙন হুমকিতে থাকায় কোলকোন্দ, নোহালী, মর্ণেয়া, লক্ষ্মিটারী ইউনিয়নের প্রায় দুইশ ৫০টির মতো পরিবার তাদের বাড়ি-ঘর অন্যত্র সরিয়ে নিয়েছে।তিস্তা বাঁচাও, নদী বাঁচাও সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি অধ্যক্ষ নজরুল ইসলাম হক্কানি বলেন, অসময়ের বন্যা ও ভাঙনে প্রতি বছর এক লাখ কোটি টাকার সম্পদ তিস্তার গর্ভে চলে যায়। এই সমস্যার স্থায়ী সমাধানের জন্য নদীখনন, সংরক্ষণ ও তিস্তা মহাপরিকল্পনার বাস্তবায়ন করা ছাড়া বিকল্প নেই।
এদিকে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) বন্যার পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানিয়েছে, দেশের উত্তরাঞ্চল এবং তৎসংলগ্ন উজানে আগামী ২৪ ঘণ্টায় ভারি বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস রয়েছে। এসময় তিস্তা, ধরলা ও দুধকুমার নদীসমূহের পানি সমতল সময় বিশেষে বৃদ্ধি পেয়ে কতিপয় পয়েন্টে স্বল্পমেয়াদে বিপৎসীমা অতিক্রম করতে পারে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের উত্তরাঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলী মাহবুব রহমান বলেন, প্রবল বর্ষণ আর উজানের ঢলে নদী তীরবর্তী নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। তিস্তায় পানি বাড়া-কমায় গঙ্গাচড়ায় কিছু স্থানে ভাঙন দেখা দিয়েছে। দ্রুত ভাঙন রোধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।