প্রেসনিউজ২৪ডটকমঃ জেলা সংবাদদাতা: মুন্সীগঞ্জের রজতরেখা নদীর মুখে বাঁধের কারণে বন্ধ হয়ে গেছে পানির প্রবাহ। স্থানীয়রা জানান, ৮-১০ বছর নদীটির উৎসমুখ বন্ধ রাখা হয়েছে। দিঘিরপাড় বাজারের একটি অংশ এখন এ নদীর উপর। সেখানে দোকানও নির্মাণ করা হয়েছে। এ দোকানপাটের দক্ষিণেই আড়াআড়িভাবে বাঁধ নির্মাণ করে চলাচলের রাস্তা করা হয়েছে।
কৌশলে পানির প্রবাহ বন্ধ করে দেওয়ার পর এখন দিঘিরপাড় বাজারের ময়লা-আর্বজনা ফেলা হচ্ছে রজতরেখার বুকে। পদ্মার সঙ্গে সংযোগ স্থল থেকে প্রায় ৪শ মিটার উত্তর দিক পর্র্যন্ত অবস্থা খুবই খারাপ। জানা যায়, এক সময় নদীটি ৪৮০ ফুটের মতো চওড়া ছিল। তবে বর্তমানে মরা খালে পরিণত হয়েছে। নদীটি কোথাও ৩০ ফুট, কোথাও ৪০-৫০ ফুটের মতো চওড়া।
মুন্সীগঞ্জের টঙ্গীবাড়ির দিঘিরপাড় থেকে বেশনাল, পুরাবাজার, সদর উপজেলার শিলই, মাকহাটি, কাঁটাখালী হয়ে মুন্সীরহাট দিয়ে ধলেশ্বরীতে যুক্ত হয়েছে প্রায় ১৮ কিলোমিটারের এ নদী। দুই দশক আগেও নদীটি প্রবহমান ছিল। নদীর পূর্ব পাশে মুন্সীগঞ্জ সদর ও পশ্চিম পাশে টঙ্গীবাড়ী। এ নদীপথে শরীয়তপুরের পাট নারায়ণগঞ্জে যেত। মালবাহী নৌকা চলাচল করত প্রতিনিয়ত। তবে দখলের কারণে নদীটি এখন অস্তিত্ব হারিয়েছে। স্থানীয় প্রভাবশালীরা রজতরেখা নদীর বিভিন্ন স্থান ভরাট করে দখল করেছেন।
ফলে নদীর পানি প্রবাহে বাধার সৃষ্টি হচ্ছে। জোয়ার-ভাটা বন্ধ থাকায় বৃষ্টির পানি জমে এখন পচে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। কৃষি কাজেও এ পানি ব্যবহার করা যাচ্ছে না। আলু উৎপাদনে অন্যতম শীর্ষ জেলায় এবার আলুর ফলনও কম হয়েছে। মোল্লাকান্দির বাসিন্দা মহিউদ্দিন সুমন জানান, এ নদী মরতে থাকায় বর্ষার পানি নামতে দেরি হচ্ছে। তাই ধান রোপণও বিলম্ব হচ্ছে। অন্যান্য চাষেও সমস্যা হচ্ছে। বর্ষায় পলি না আসায় জমি উর্বর হচ্ছে না। কিন্তু এতে পরিবেশও বিপন্ন হচ্ছে।
মুন্সীগঞ্জ-৩ আসনের সংসদ-সদস্য ফয়সাল বিপ্লব বলেন, রজতরেখা নদী এক সময় এ অঞ্চলের মানুষের প্রাণ ছিল। বিশেষ করে চরাঞ্চলের মানুষের যাতায়াত, সেচ, উৎপাদিত কৃষিপণ্য বাজারজাত সর্বোপরি এখানকার গ্রামীণ অর্থনীতির একটি চালিকাশক্তি ছিল এ নদী। রজতরেখা মরে গেলে জীবনযাত্রায় বিরূপ প্রভাব পড়বে। নদী উদ্ধার বর্তমান সরকারের অন্যতম একটি এজেন্ডা। রজতরেখা নদী উদ্ধার করে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনা আমার জোর দাবি।
মুন্সীগঞ্জ-২ আসনের সংসদ-সদস্য সাগুফতা ইয়াসমিন এমিলি বলেন, রজতরেখা এ নদী টঙ্গীবাড়ি ও মুন্সীগঞ্জের কয়েক লাখ মানুষের জীনযাত্রার সঙ্গে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত ছিল। প্রাচীন উৎসমুখ খুলে দেওয়া ছাড়াও পুরো নদীটি উদ্ধারে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া এখন সময়ের দাবি। তাই দখলদারদের তালিকা করে দখলমুক্ত করা এবং নদীটি দ্রুত খনন করে পানি প্রবাহ চালু রাখার দাবি জানান তিনি।
পরিবেশ বিজ্ঞানী আরিফুর রহমান জানান-কৃষি, বাণিজ্য, রাজনীতি সবই নিয়ন্ত্রিত হয় এ নদীকে কেন্দ্র করে। মুন্সীগঞ্জের কাটাখালীর পরে দক্ষিণে আলদী পর্র্যন্ত কিছুটা পানিপ্রবাহ থাকলেও আলদী থেকে দিঘিরপাড় পর্র্যন্ত একবারেই নেই।মুন্সীগঞ্জ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) সভাপতি মুজিবুর রহমান বলেন, কৃষির স্বার্থে নদীটিকে আগের রূপে ফিরিয়ে আনা সময়ের দাবি।
নদী খনন আবার ফিরিয়ে দিতে পারে এ এলাকার বৈচিত্র্য। নৌপথটি সচল হলে আবারও কৃষি বাণিজ্য থেকে শুরু করে গ্রামীণ অর্থনীতি চাঙা হবে। জেলা প্রশাসক আবুজাফর রিপন বলেন, সমস্যাটি কয়েক বছর আগে থেকেই। খোঁজ নিয়ে শিগগিরই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। জেলা কমিটির সভায় বিষয়টি উত্থাপন করা হবে। দখলমুক্ত করতে উদ্ধার অভিযানসহ কিভাবে নদীটির প্রবাহ ফিরিয়ে আনা যায় সে ব্যাপারে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হবে।