বরগুনার তালতলীতে বিধ্বস্ত বাড়িতে ফিরতে পারছেনা আশ্রয় কেন্দ্রের মানুষ

0
বরগুনার তালতলীতে বিধ্বস্ত বাড়িতে ফিরতে পারছেনা আশ্রয় কেন্দ্রের মানুষ

প্রেসনিউজ২৪ডটকমঃ তালতলী (বরগুনা) প্রতিনিধিঃ বরগুনার তালতলীতে ঘুর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে তছনছ হয়ে যাওয়া বিধ্বস্ত বাড়িতে ফিরতে পারছে না সাইক্লোন সেল্টারে আশ্রয় নেয়া মানুষ। গেছে এ উপজেলার বিভিন্ন এলাকা। ঘুর্ণিঝড় শুরুর আগের দিন রবিবার সন্ধ্যা থেকেই আশ্রয় কেন্দ্রে আসতে শুরু করে মানুষ। এরপরে টানা কয়েক ঘন্টার রেমালের তান্ডবে এ উপজেলায় ৬৫০টি ঘর-বাড়ি সম্পূর্ন বিধ্বস্ত হয়ে যায়। আংশিক বিধ্বস্ত হয়েছে কয়েক হাজার ঘর-বাড়ি।

ঘূর্ণিঝড় শেষ হওয়ার প্রায় ২ দিন অতিবাহিত হওয়ার পরেও বিধ্বস্ত হওয়া পরিবারগুলোর প্রায় ৫হাজার মানুষ তাদের বাড়িতে ফিরতে পারছেন না। বাড়িঘর সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত ও পানি বন্দি থাকায় আশ্রয়কেন্দ্রেই থাকতে হচ্ছে তাদের। উপজেলার একাধিক আশ্রয়ণে ঘুরে এমন চিত্র দেখা যায়। মঙ্গলবার(২৮ মে) রাতে উপজেলার বিভিন্ন আশ্রয় কেন্দ্র পরিদর্শন করেছেন স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের উপপরিচালক মোঃ তানজীম ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার সিফাত আনোয়ার তুমপা।

ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হওয়ায় ঝড় শেষ হওয়ার প্রায় ৩৬ ঘন্টার পরেও বাড়িতে ফিরতে পারছেন না অনেক পরিবার। সাইক্লোন সেন্টারে আশ্রয় নেয়া মানুষের সাথে কথা বলে জানা যায়,গত রবিবার ২৬ মে আশ্রয় কেন্দ্রে আসেন রোকেয়া বেগম। তবে প্রথমে ঘরেই থাকার চেষ্টা করেছিলেন কিন্তু ঝড়ের প্রভাব ও পানি বাড়তে থাকায় ঘরে থাকা দায় হয়ে পড়ে। এ অবস্থায় রাতেই বৃষ্টি মাথায় নিয়ে জয়ালভাঙা সাইক্লোন সেল্টারে আশ্রয় নেন। পরিস্থিতি ভয়াবহ থাকায় খালি হাতেই ঘর থেকে বের হয়েছিলেন।

পরের দিন বিকেলে ঝড় থামলে বাড়ি গিয়ে দেখেন ঘড়-বাড়ি সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হয়ে যায়। অন্য দিকে বাড়ির চারপাশে অথই পানি থাকায় তার সন্তান সন্ততি নিয়ে ঐ আশ্রয়কেন্দ্রেই থাকছেন তিনিজয়ালভাঙা সাইক্লোন সেল্টার আশ্রয় কেন্দ্রে গিয়ে রোকেয়া বেগমের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, রাতের বাতাসে ঘর-বাড়ি সম্পূর্ণ ভেঙে গেছে। বাড়ির চারদিকে পানি থই থই করছে। এখন হাতে টাকা-পয়সা নাই। কোথাও থেকে ধার আনতে হবে নতুন ঘর তৈরির জন্য।

তিনি বলেন যত দিন ঘর তৈরি করতে না পারবো ততোদিন আশ্রয় কেন্দ্রেই থাকতে হবে। রেমালের প্রভাবে পানিবন্দি হওয়া নলবুনিয়া আশ্রয় কেন্দ্রে ঐ এলাকার প্রায় শতাধিক পরিবার আশ্রয় নেয়। এসব পরিরাবের পুরুষের বেশির ভাগই জেলে। কেউ কেউ দিনমজুর হিসেবে কাজ করছেন আবার কেউ রিকশা চালান। তাঁদের অনেকের বাড়িঘরই পানিবন্দি হয়ে আছে। কারও কারও ঘর পুরো ভেঙে পড়েছে। কারও ঘরের বেড়া, মেঝে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অনেকের আসবাব, কাপড়-চোপড় পানিতে ভেসে গেছে। তাই তাঁরা ঘরে ফিরতে পারছেন না।

ফকিরহাটের সকিনা আশ্রয় কেন্দ্রে গিয়ে দেখা গেছে, বেশির ভাগ পরিবার এখনো বাড়িতে ফেরেনি। আশ্রয় কেন্দ্রের ৫টি কক্ষে আছেন এসব পরিবারের সদস্যরা। কেউ মেঝেতে শুয়ে আছেন অন্য কক্ষে বেঞ্চ দিয়ে ভাগ করে থাকছেন বাড়িঘর হারানো পরিবার। প্রশাসন ও উপজেলা নির্বাচনের প্রার্থীদের পক্ষ থেকে খাবার দেওয়া হচ্ছে। সেগুলোই খাওয়া-দাওয়া চলছে। ছোটবগী এলাকার আজিজ হাওলাদার নামের এক ব্যক্তি বলেন, আমার বাড়ি-ঘরসহ আমার ভাইদের ঘরে গাছ পড়ে একদম শেষ।

তাছাড়া এখনো পানিতে সেই বাড়ি তলিয়ে রয়েছে। ঘর থেকে পানি নামলেও উঠান ভরা পানি রয়েছে। ঘরের একদিক ধসে পড়েছে। আসবাবপত্র সব পানিতে ভেসে গেছে। ঘরে কোনো জিনিসপত্র ঠিক নেই। তাই নতুন ঘর তৈরি করে বাড়িতে যেতে হবে। মাজেদা বেগম বলেন, ঝড় গেছে একদিন হয়ে গেছে। এখনো পানিবন্দি হয়ে আছি।

এখানের পরিবেশে থাকা তো খুবই কষ্টের। সামান্য পানি কমলেও ঘরের ভেতরে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। উপজেলা নির্বাহী অফিসার সিফাত আনোয়ার তুমপা বলেন, ৫৩ টি আশ্রয় কেন্দ্র রয়েছে। এখনো আশ্রয় কেন্দ্রে প্রায় ৫ হাজার মানুষ রয়েছেন। একদিকে পানি বন্দি অন্যদিকে বিধ্বস্ত বাড়িতে ফিরতে পারছেন না তারা। এই মানুষদের খাবারসহ সকল ধরনের সহযোগিতা করা হচ্ছে প্রশাসন থেকে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here