প্রেসনিউজ২৪ডটকমঃ জেলা সংবাদদাতা: ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে জোয়ারের চাপে বরগুনায় বেড়িবাঁধ ভেঙে ১০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে রোববার (২৬ মে) সকাল থেকেই বরগুনার আকাশ ছিলো মেঘাচ্ছন্ন। ঘূর্ণিঝড় রিমাল গতি সঞ্চার করে উপকূলের দিকে এগিয়ে আসতে আসতে রুদ্র মূর্তি ধারণ করে বরগুনার প্রকৃতি। বেলা বাড়ার সাথে সাথে বাড়তে থাকে বাতাসের গতিবেগ।সেই সাথে থেমে থেমে জড়ো বৃষ্টি ঝড়ছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বরগুনা সদর উপজেলার ঢলুয়া ইউনিয়নের পোটকাখালী, ডালভাঙা ও নলী এলাকা, নলটোনা ইউনিয়নের নিশানবাড়িয়া, নলটোনা, সোনাতল ও কুমিড়মারা, বুড়িরচর ইউনিয়নের গুলবুনিয়া, বাঁশবুনিয়া, চালিতাতলী, আয়লা পাতাকাটা ইউনিয়ন, বদরখালী ইউনিয়নের ফুলঝুড়ি, কুমড়াখালী ও গুলিশাখালী এলাকা, পাথরঘাটা উপজেলার সদর ইউনিয়নের পদ্মা, জীনতলা, টেংরা, কালমেঘা, কাকচিড়া, তালতলী উপজেলার নিশানবাড়িয়া, ছোটবগী, নিদ্রার চর, তেতুলবাড়িয়া, খোট্টার চর, সোনাকাটা, নিউপাড়া, আমতলী উপজেলার সদর ইউনিয়ন, গুলিশাখালী, বামনা উপজেলার রামনা, বদনীখালী, বেতাগী উপজেলার কালিকাবাড়ি, ঝিলবুনিয়া, ছোট মোকামিয়া এলাকার বাঁধের বাইরের প্রায় লক্ষাধিক বাড়ি-ঘর অধিক জোয়ারে নিমজ্জিত হয়েছে।
সরেজমিনে বরগুনা সদর উপজেলার ঢলুয়া ইউনিয়নের মাছখালী গ্রামে গিয়ে দেখা গেছে,নদী তীরবর্তী মানুষ বেড়িবাঁধের ওপর আশ্রয় নিয়েছে। উচ্চ জোয়ারের চাপে আশ্রয় নেওয়া সেই বেড়িবাঁধ ভেঙে গিয়ে প্লাবিত হয়েছে ৬টি গ্রাম। প্লাবিত এলাকায় জোয়ারের পানি ঘরের মধ্যে ঢুকে যাওয়া নষ্ট হয়ে গেছে রান্নার চুলা ও নিত্য ব্যবহার্য জিনিসপত্র।এছাড়াও ঘরের ভিতরে পানি প্রবেশ করায় ব্যহত হচ্ছে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা। আশ্রয় কেন্দ্র কিংবা নিরাপদ আশ্রয়ে যাওয়ার পথ দুর্ঘম হওয়ায় অনেকটাই বাধ্য হয়ে ঘরের ভিতরই আশ্রয় নিয়েছেন তারা।
যে বেড়িবাঁধটিতে ভাঙন দেখা দিয়েছে রাতে যদি জোয়ার ও বৃষ্টি অব্যাহত থাকে তাহলে পুরো বেড়িবাঁধটির এক কিলোমিটার জায়গাজুড়ে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে ।বাসিন্দা শহিদুল ইসলাম বলেন, বেলা ১১টার দিকে বেড়িবাঁধ ভেঙে প্লাবিত হয় এখানকার ছয়টি গ্রাম। জোয়ার চলে গেলে পানি যেভাবে নেমে যাওয়ার কথা সেভাবে না নামায় অনেকেই আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন। রাতে যদি পানির পরিমাণ বৃদ্ধি পায় তাহলে তাদের সহায় সম্বল সবকিছু নষ্ট হয়ে যাবে।
একই এলাকার বাসিন্দা সালাম মাঝি বলেন, বছরের পর বছর এভাবে গাঙ্গেও পানিতে ভাসছি। কতো মানুষ আসে কতো মানুষ যায় কিন্তু আমাগো বেড়িবাঁধের কোন ব্যবস্থা হয় না। সরকার যদি আমাগো এই বেড়িবাঁধ করে দিতো তাহলে আমরা নিরাপদে থাকতে পারতাম। বরগুনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রাকিব বলেন, বেশ কিছু জায়গায় বেড়িবাঁধে ভাঙনের খবর পেয়েছি। ভাঙন রোধে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
অধিক জোয়ার ও বৃষ্টিতে যে সকল এলাকার বেড়িবাঁধের নাজুক অবস্থা তৈরি হয়েছে সেই এলাকাগুলোতে নজরদারি বৃদ্ধি করা হয়েছে। তাৎক্ষণিকভাবে ভাঙনের হাত থেকে উপকূলবাসীকে রক্ষা করতে জরুরি মেরামতে অংশ হিসেবে ৮০০ জিও ব্যাগ প্রস্তুত রাখা হয়েছে। বরগুনার জেলা প্রশাসক মোহা. রফিকুল ইসলাম বলেন, ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় আমরা সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নিয়েছি।
আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে উপকূল তীরবর্তী মানুষ জনকে নিয়ে আসা হয়েছে। কিছু কিছু এলাকায় বেড়িবাঁধ ভাঙনের খবর পাওয়া গেছে। সেই সব এলাকার বাসিন্দাদের নিরাপদ আশ্রয়ে নিয়ে আসার জন্য স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ও উপজেলা প্রশাসনকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।