প্রেসনিউজ২৪ডটকমঃ খান মোহাম্মদ কামালঃ২০২২ সালের অনুষ্ঠিত এইচএসসি পরীক্ষায় এবার কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডের অধিনে চাঁদপুরের মতলবের দূর্গম চরাঞ্চলের শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দেওয়ার লক্ষ্যে মেঘনা অববাহিকায় অবস্থিত আলী আহম্মদ মিয়া বহুমুখী মহাবিদ্যালয়টি অভাবনীয় সাফল্য অর্জন করেছে।
২০২২ এ অনুষ্ঠিত এইচএসসি পরীক্ষায় আলী আহম্মদ মিয়া বহুমুখী মহাবিদ্যালয় থেকে মোট ৯৯ জন পরিক্ষার্থী পরিক্ষায় অংশ গ্রহণ করে। যার মধ্যে ৯৮ জন পরিক্ষার্থী কৃতকার্য হয়। পাসের হার প্রায় ৯৯ ভাগ। বিজ্ঞান বিভাগে শিক্ষার্থীরা শতভাগ পাশ করেছে। তবে ব্যবসায় শিক্ষা ও মানবিক বিভাগ থেকে থেকে পাস করেছে ৯৮.৯৮%। মানবিক বিভাগ থেকে আমেনা আক্তার নামে এক শিক্ষার্থী জিপিএ ৫ পেয়েছেন।
এই কলেজ থেকে বিজ্ঞান শাখায় ৪ জন পরীক্ষার্থী অংশ নিয়ে ৪ জন পরীক্ষার্থীই উত্তীর্ণ হয়েছে। বিজ্ঞান শাখায় শতভাগ শিক্ষাথী উত্তীর্ণ হয়েছে। ব্যবসায় শাখা থেকে ২৯ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে ২৮ জন পরীক্ষার্থী কৃতকার্য হয়েছেন। আর মানবিক শাখা থেকে ৬৬ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে ৬৫ পরীক্ষার্থীই উত্তীর্ণ হয়েছে। তারমধ্যে আমেনা আক্তার নামে একজন শিক্ষার্থী জিপিএ ৫ পেে ছেন।
জানাগেছে,চাঁদপুরের মতলবের চরাঞ্চল ও নদী তীরবর্তি এলাকায় কোন কলেজ না থাকায় অনেক শিক্ষার্থীর প্রবল ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও নিকটবর্তী কোনো কলেজ না থাকায় অনেক ছেলে-মেয়েরা এসএসসি পাস করার পর ঝরে পড়তো। চরাঞ্চল ও নদী তীরবর্তী ছেলে-মেয়ের উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা গ্রহণে ওই এলাকায় শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য চাঁদপুরের কৃতি সন্তান মতলবের উন্নয়নের রুপকার বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের সভাপতিমন্ডলির অন্যতম সদস্য,দুই বারের সাবেক সফল মন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বীর বিক্রম তার প্রয়াত বাবা বিশিষ্ট সমাজ সেবক মরহুম আলী আহম্মদ মিয়ার নামে আলী আহম্মদ মিয়া বহুমুখী মহাবিদ্যালয় টি ২০১৫ সালে প্রতিষ্ঠা করেন।
প্রতিষ্ঠানটি প্রতিষ্ঠা হওয়ার পর থেকেই এমপিওভুক্ত না হয়েও এইচএসসিতে প্রতি বছরই অভাবনীয় ভাল ফলাফল অর্জন করছে শিক্ষার্থীরা। অত্যান্ত মনোরম পরিবেশ সুষ্ঠু ও নিরাবচ্ছন্ন পরিবেশ,দক্ষ ব্যবস্থপনা পরিষদ ও শিক্ষকদের আন্তরিকতার সহিত পাঠদান এবং ছাত্র-ছাত্রীদের নিরবাচ্ছন্ন মনোনিবেশই কলেজটিতে দ্রুত এ অভাবনীয় সাফল্য বয়ে আনছে বলে মনে করছেন অনেকে।
বিশেষ করে কলেজের প্রতিষ্ঠাতা চাঁদপুরের কৃতি সন্তান, মতলবের উন্নয়নের রুপকার বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলির অন্যতম সদস্য,দুই বারের সাবেক সফল মন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বীর বিক্রম, তার জ্যেষ্ঠ পুত্র ঢাকা মহানগর দক্সিণ আওয়ামীলীগের সদস্য বিশিষ্ট শিক্ষানুরাগী সাজেদুল হোসেন চৌধুরী দিপু,মায়া চৌধুরীর সহধর্মিনী মহুয়সী নারী মিসেস পারভিন চৌধুরী ও মায়া চৌধুরীর পুত্রবধু চাঁদপুর জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম-আহবায়ক সূবর্না চৌধুরী বীণা সর্বদা কলেজের লেখাপড়ার মান্নোনয়নে অসামন্য অবদান রেখে চলছেন। তাদের আন্তরিকতা ও সার্বিক তদারকি, সার্বিক সহযোগিতার পাশাপাশি কলেজের গভার্নিংবডির সকল সদস্যদের সহযোগিতা ও চমৎকার সমন্বয়ে অত্র কলেজটি প্রতিষ্ঠার অল্প সময়ের মধ্যে অভাবনীয় সাফল্য অর্জন করেছে।
কলেজটি থেকে বিজ্ঞান, মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষা এই ৩ টি বিভাগের জন্য অভিজ্ঞ শিক্ষক ও শিক্ষিকা ধারা পরিচালিত হওয়ায় শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার ফলাফল প্রতি বছর ভাল হচ্ছে।এমপিওভুক্ত না হয়েও ননএমপিও এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি সবসময় সরকারের নিয়মনীতি অনুসরন করে ভাল ফলাফলের জন্য চাঁদপুরে সুনাম অর্জন করছে।
আজ মঙ্গলবার বেলা সাড়ে বারটার সময় আলী আহম্মদ মিয়া বহুমুখী মহাবিদ্যালয় কলেজটিতে সরেজমিনে গিয়ে দেখাযায়,খুবই মনোরম পরিবেশে আন্তরিকতার সহিত সম্পন্ন নিরবাচ্ছন্ন পরিবেশে চলছে একাদশ ও দ্বাদশ শিক্ষার্থীদের ক্লাশ। এসময় কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ তোফায়েল আহম্মেদ এর কক্ষে ২০২২ সালের এইচএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ কয়েক শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা দেখা করেন এবং আনন্দ উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন। অভিভাবকরা স্যারদেরকে ধন্যবাদ ও মিষ্টি মুখ করান। শিক্ষার্থীরা কলেজ অধ্যক্ষ মোঃ তোফায়েল আহম্মেদ ও অন্যন্য শিক্ষকবৃন্দের সাথে দেখা করে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে।
কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির মানবিক শাখার শিক্ষার্থী সাদিয়া জাহান বলেন, আমাদের এই কলেজে আমি এখলাছপুর নদী এলাকা থেকে আসি। আমাদের কলেজটি চরাঞ্চল থেকে অনেক কাছে বিধায় আমরা চরাঞ্চলের অনেক শিক্ষার্থী পড়ালেখা করতে পারছি। এই কলেজে মনোরম পরিবেশে খুবই সুন্দরভাবে ও সুশৃঙ্খলভাবে আমাদের শিক্ষকরা পাঠদান করে থাকেন। আমরাও আনন্দের সহিত খুব শুন্দরভাবে পড়ালেখা করতে পারছি। আমরা হাইস্কুলে যে শৃঙ্খলাটা শিক্ষার কথা ছিলো, সেটা আমরা এই কলেজ থেকে শিখতে পেরেছি। আমাদের কলেজ থেকে এই বার এইচএসসি পরীক্ষায় অনেক ভালো রেজাল্ট অর্জন করেছে। এতে আমরা আনন্দিত। আমরা আশা করি আমরাও ভালো ফলাফল করবো। তার জন্য আমি সকলের কাছে দোয়া চাই।
কলেজের একাদশ শ্রেণির বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র মোঃ মুহিন বলেন-আমাদের নদী তীরবর্তী এলাকায় ২০১৫ সালে এই কলেজটি আমাদের মায়া স্যার প্রতিষ্ঠা করার ফলে আমরা চরাঞ্চলের ছাত্ররা খুব কাছ থেকেই সহজেই সুন্দরভাবে পড়াশুনা করতে পারছি। আগে নিকটবর্তী কনো কলেজ না থাকায় উচ্চ মাধ্যমিকে পড়াশুনার কোনো সুযোগ থাকতো না বিধায় অনেকে ঝরে পড়তো। আমাদের অনেক বোনেরা এই সুযোগ না থাকায় এসএসসি পাস করার পর আর পড়া হয়নি। এখন সকলের সুযোগ তৈরি হয়েছে।
আমরা মায়া স্যারকে ধন্যবাদ জানাই। স্যাররা আমাদেরকে আন্তরিকতার সহিত আমাদেরকে পাঠদান দিচ্ছে। এ বছর আমাদের কলেজ থেকে এইচএসসিতে ভালো ফলাফল অর্জন করেছে। আমরা এর ধারাবাহিকতা রক্ষা করবো ইনশাল্লাহ। সেজন্য সকলের কাছে দোয়া কামনা করছি।শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মোঃ তোফেয়েল আহম্মেদ বলেন, তোমাদের এই সাফল্য আমাদেরকে আনন্দ দিয়েছে। আমরা খুশী হয়েছি, আলী আহম্মদ মিয়া বহুমুখি মহাবিদ্যালয় পরিবার আজ আনন্দিত। তবে আরও বেশি খুশি হতাম সকল বিভাগে শতভাগ পাস করলে। তোমরা পরিশ্রম করেছ, তোমাদের বাবা মায়ের দোয়া ছিল, আমার শিক্ষকবৃন্দ পরিচর্চা করেছে, আমরা ভাল ফলাফল অর্জন করেছি।
তবে এখানেই শেষ নয়, আমাদের প্রত্যাশা থাকবে, তোমরা বুয়েট, মেডিকেল, পাবলিক বিশ^বিদ্যালয়ে ভর্তি যুদ্ধে উত্তীর্ণ হও। তোমরাই আগামী দিনের বাংলাদেশ। আগামী দিনের স্মার্ট বাংলাদেশ নির্মাণে তোমরা হবে দক্ষ কারিগর। তোমাদের বাবা-মা তথা মতলব উত্তর উপজেলাবাসীকে বিশেষ করে নদী তীরবর্তি ও চরাঞ্চলবাসীকে আমি ধন্যবাদ জানাই, তারাও এই আনন্দের স্টেকহোল্ডার। তোমাদের প্রতি তাদের নিরবিচ্ছিন্ন সাপোর্ট ছিল। ধন্যবাদ জানাই আমার শিক্ষকবৃন্দকে, তাদের সুনিপুণ পরিচর্চায় আমরা ভাল ফলাফল অর্জন করতে পেরেছি।
মোঃ তোফেয়েল আহম্মেদ বলেন, আমি ধন্যবাদ জানাই চাঁদপুরের কৃতিসন্তান দুই বারের সাবেক সফল মন্ত্রী, মতলবের উন্নয়নের রুপকার আমাদের শিক্ষক পরিবারের অভিভাবক মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বীর বিক্রম মহোদয়কে। যার হৃদয়ের সাথে তার প্রয়াত বাবার নামে প্রতিষ্ঠিত এই কলেজের সাথে সুনিপুন সম্পর্ক রয়েছে। তাঁর এবং তার জ্যেষ্ঠ পুত্র সাজেদুল হোসেন চৌধুরী দিপু ও তাদের পরিবারের হাত ধরে আলী আহম্মদ মিয়া বহুমুখি মহাবিদ্যালয় আরও এগিয়ে যাবে এই প্রত্যাশা করি।
তিনি ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আরও বলেন,-চরাঞ্চল ও নদী তীরবর্তী এলকায় উচ্চ শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দেওয়ার লক্ষ্যে এবং অত্র এলাকার বিশেষ করে হতদরিদ্র ছেলে-মেয়েদের উচ্চ শিক্ষা সুনিশ্চিত করার জন্যে মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বীর বিক্রম ২০১৫ সালে এ কলেজটি প্রতিষ্ঠা করেছেন। যার ফলে অত্র এলাকার নদী তীরবর্তী ও চরাঞ্চলের ছেলে-মেয়েরা অতি সহজে উচ্চ শিক্ষা গ্রহণের সূবর্ন সুযোগ পেয়েছে। এর আগে এসব এলাকার ছেলে-মেয়েরা এসএসসি পাস করার পর কাছাকাছি কোনো কলেজ না থাকায় এসএসসির পর ঝরে পড়তো।
এখন তারা উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা গ্রহণ করে দেশের সেবায় নিজেকে যোগ্য নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে পারছেন।তার স্বপ্ন বাস্তবায়নে আমরা শিক্ষক মন্ডলি ও গভার্নিংবডির সকল সদস্যরা নিরলসভাবে কাজ করতে অঙ্গিকারবদ্ধ। তিনি কলেজটি ভালো ফলাফল এবং চরাঞ্চলের মানুষের কথা চিন্তা করে অতি দ্রুত কলেজটিকে এমপিওভুক্ত করার জন্য সরকারের কাছে দাবী জানান।