ঠাকুরগাঁওয়ে ব্যস্ততম সড়কের পাশে কোকিল সরকার প্রাথমিক বিদ্যালয়

0

প্রেসনিউজ২৪ডটকমঃ ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি: আব্দুল্লাহ আল মামুন নয়ন !! ঠাকুরগাঁও শহরের ব্যস্ততম বঙ্গবন্ধু সড়ক ঘেঁষে অবস্থিত কোকিল সরকার প্রাথমিক বিদ্যালয়। সম্প্রতি সড়কটি চার লেনে উন্নিত করতে গিয়ে অরক্ষিত হয়ে পড়েছে বিদ্যায়লটি।

ফলে সব সময়ই ঝুঁকিতে থাকেন এর শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। গত বুধবার দুপুরে ঠাকুরগাঁও পৌরসভা গেটের সামনে বিদ্যালয়টির এ চিত্র দেখা যায়। এদিকে বিদ্যালয়ের সামনে গতিরোধক নির্মাণ অথবা বিদ্যালয় চলার সময় সেখানে ট্রাফিক পুলিশ থাকার দাবি অভিভাবকদের।

জেলা শহর থেকে ৪টি উপজেলার সঙ্গে যোগাযোগের একমাত্র পথ বঙ্গবন্ধু সড়ক। সড়কের পাশেই বিদ্যালয়টি ছাড়াও আছে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, জজ আদালত, পৌরসভা কার্যালয়, থানা, মা ও শিশুকল্যাণ কেন্দ্রসহ নানা দপ্তর। এ কারণে ওই সড়কে সব সময় যানবাহনের ব্যস্ততা লেগেই থাকে। সম্প্রতি সড়কটি চার লেনে উন্নিত করতে গিয়ে ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ভাঙতে হয়েছে বিদ্যালয়ের দুপাশের অনেক স্থাপনা।

সে সময় ভাঙা পড়ে বিদ্যালয়টির সীমানা প্রাচীর। বিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ১৯১৭ সালে ঠাকুরগাঁও শহরে কোকিল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হয়। এই বিদ্যালয়ে বর্তমানে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ২৭৬, এর মধ্যে ১৪০ জন ছাত্রী ও ১৩৬ জন ছাত্র, আর শিক্ষক রয়েছেন ৯ জন।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বিদ্যালয়টির চারপাশে কোনো সীমানা প্রাচীর নেই; নেই সামনের সড়কে কোনো গতিরোধক। এমনটি টানানো হয়নি কোনো সতর্কীকরণ সাইনবোর্ড ও চিহ্ন। সড়ক দিয়ে বেপরোয়াভাবে চলছে বাস, ট্রাক, মোটরসাইকেল, অটোরিকশা, ভটভটিসহ বিভিন্ন ধরনের যানবাহন। বিদ্যালয়টির শিক্ষার্থীরা চলন্ত গাড়ির সামনে দিয়ে হাত উঁচিয়ে, গাড়ি থামিয়ে সড়ক পার হচ্ছে।

বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী আবু হাসনাত বলেন, স্কুলের সামনের রাস্তা দিয়ে সবসময় দ্রুত গতিতে যানবাহন চলাচল করে। সীমানা প্রাচীর ভাঙার পর থেকে আমরা ঝুঁকির মধ্যে রয়েছি; বিদ্যালয়ের সামনের অল্প একটু জায়গার মধ্যে আমরা খেলাধুলা করি। কখন যে গাড়ি এখানে উঠে পড়ে ভয়ে থাকি সবসময়। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সীমানা প্রাচীর ভেঙে ফেলার পর সড়ক পার হতে গিয়ে বিদ্যালয়টির ৩য় শ্রেণির ছাত্র রমজান আলী ও ৫ম শ্রেণির ছাত্র মিলন সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন। দুর্ঘটনার হাত থেকে রেহাই পেয়েছে আরো কয়েক জন শিক্ষার্থী।

বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক সাফিয়া বেগম বলেন, প্রশস্ত সড়কটি একেবারে বিদ্যালয় ঘেঁষে যাওয়ায় শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। শিক্ষার্থীদের সবসময় চোখে চোখে রাখতে হয়। তবুও শিক্ষার্থীরা সুযোগ পেলেই রাস্তা পেরিয়ে ওপারে চলে যায়। দুর্ঘটনা ঘটার আশঙ্কা করছেন তিনি।

আরেক সহকারি শিক্ষক উম্মে কুলসুম বলেন, আগে বিদ্যালয়ের সামনের মাঠটিতে অ্যাসেম্বলি হত। রাস্তা বড় হওয়ার পর মাঠের অনেকটাই রাস্তার অংশে চলে গেছে। সেখানে এখন আর অ্যাসেম্বলি সামনে করা যায় না। বিদ্যালয়ের পেছনে একটা পরিত্যক্ত জায়গায় অ্যাসেম্বলি করা হয়। আর পতাকা সামনে উড়িয়ে দেওয়া হয়।

অভিভাবক সুজন ইসলাম, আব্দুল কাইয়ুম ও শারমিন আক্তার বলেন, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিশুরা চঞ্চল প্রকৃতির। আগে প্রাচীরের ভেতরে থাকায় আমরা শিশুদের নিয়ে খুব একটা ভাবতাম না। প্রশস্ত রাস্তা করতে গিয়ে সীমানাপ্রাচীর ভেঙে ফেলা হয়েছে। শিশুরা কখন যে ছোটাছুটি করে সড়কে চলে আসে, সে আতঙ্কে সব সময় থাকতে হয়। রাস্তা প্রশস্ত হওয়ার পর দিয়েছে শিশুদের দুর্ঘটনার ঝুঁকি। তারা বলেন, বিদ্যালয়ের সামনে গতিরোধক নির্মাণ করা সম্ভব না হলে বিদ্যালয় চলার সময় সেখানে ট্রাফিক পুলিশ থাকার দাবি অভিভাবকদের।

জানতে চাইলে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ছাবেরা সুলতানা ইয়াসমিন বলেন, শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার বিষয়টি নিয়ে আমরা চিন্তায় আছি। রাস্তা পারাপারের সময় দুর্ঘটনার সম্মুখিন হয় শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। প্রশাসনকে ট্রাফিক দেওয়ার জন্য আবেদন করেও পাওয়া যায়নি।

জানতে চাইলে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. মাসুদ রানা বলেন, বিদ্যালয়টির নতুন ভবন নির্মাণের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। সেটা বাস্তবয়ন হলে আর এ সমস্যা থাকবে না।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here