মতলব উত্তরে কেরির ট্যাবলেট খেয়ে আত্মহত্যা, নাকি পরিকল্পিত হত্যা ?

0
মতলব উত্তরে কেরির ট্যাবলেট খেয়ে আত্মহত্যা, নাকি পরিকল্পিত হত্যা ?

প্রেসনিউজ২৪ডটকমঃ মতলব উত্তর (চাঁদপুর) প্রতিনিধি : চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার ছোট ষাটনল রঙ্গুখাঁর কান্দি গ্রামের মো. ফারুক খানের মৃত্যু ঘিরে ধোঁয়াশা কাটছে না। নিহতের পরিবার বলছে পরিকল্পিত হত্যা, আর প্রথম স্ত্রী হ্যাপি বেগমের দাবি—এটি মানসিক চাপে আত্মহত্যা। ঘটনাকে ঘিরে স্থানীয় জনমত বিভক্ত হয়ে গেছে, এবং দুটি ভিন্ন ঠিকানায় ঘটনার স্থান উল্লেখ হওয়ায় মামলার তদন্তে দেখা দিয়েছে বিভ্রান্তি।\

মো. ফারুক খানের মৃত্যু নিয়ে এলাকায় চলছে চরম বিভ্রান্তি ও উত্তেজনা। স্ত্রী বলছে আত্মহত্যা, বাবা বলছেন পরিকল্পিত হত্যা। প্রথম স্ত্রী হ্যাপি বেগম দাবি করেছেন—ফারুক বিষ খেয়ে আত্মহত্যা করেছে এবং এখন তার পরিবার ও স্বজনরা সালিশে থাকা নিরীহ মানুষদের হত্যা মামলায় ফাঁসাতে চাচ্ছে। অন্যদিকে নিহতের বাবা নূর মোহাম্মদ খান এই দাবিকে ‘চরম মিথ্যাচার’ বলে উল্লেখ করে বলেছেন—তার ছেলেকে গাছের সাথে বেঁধে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে।

নিহতের বাবা নূর মোহাম্মদ খান বলেন, আমার ছেলেকে ২ জুন বিকেলে সালিশের নামে বাড়িতে ডেকে আনে প্রথম স্ত্রী হ্যাপি ও তার লোকজন। গাছে বেঁধে ১০–১২ জন মিলে পিটিয়ে শরীর থেঁতলে ফেলে। আমি বাঁধা দিতে গেলে আমাকেও গাছে বেঁধে মারে। পরে ওকে ঘরে এনে মুখে বিষ ঢেলে দিয়ে আত্মহত্যা বলে চালানোর চেষ্টা করে। তিনি জানান, এ ঘটনায় তিনি মতলব উত্তর থানায় হ্যাপি বেগম, রোকন খান, নাছির প্রধানসহ ৬ জনের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করেছেন। এরপর চাঁদপুর আদালতেও পৃথক হত্যা মামলা দায়ের করেন।

প্রথম স্ত্রী হ্যাপি বেগম গত ২২ জুন আদালতে পাল্টা মামলা দায়ের করে বলেন, ফারুক দ্বিতীয় বিয়ে করায় আমাদের সংসারে অশান্তি দেখা দেয়। আমি বাপের বাড়ি চলে যাই। পরে সালিশের মাধ্যমে সে আমাকে আবার ঘরে তোলে এবং দ্বিতীয় স্ত্রীকে তালাক দিতে রাজি হয়। এসব মানসিক চাপে সে নিজেই কেরির ট্যাবলেট খেয়ে আত্মহত্যা করে। তিনি আরও অভিযোগ করেন, আমাকে ও সালিশকারীদের পরিকল্পিতভাবে ফাঁসানো হচ্ছে। আমরা কোনো অপরাধ করিনি, শুধু সামাজিকভাবে একটা সমাধান চেয়েছিলাম।

এদিকে মতলব উত্তর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ভর্তি রেজিস্ট্রারে দেখা গেছে—ফারুক খানকে বিষক্রিয়াজনিত রোগী হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। বিষয়টি আত্মহত্যার দাবিকে জোরালো করলেও নিহতের পরিবার বলছে, মুখে জোর করে বিষ ঢেলে তাকে ‘আত্মহত্যাকারী’ বানানো হয়েছে। এই ঘটনায় স্থান নির্ধারণ নিয়ে রয়েছে বড় ধরনের অসঙ্গতি। আদালতে দায়ের করা মামলায় ঘটনাস্থল হিসেবে দেখানো হয়েছে ছোট ষাটনল রঙ্গুখাঁর কান্দি গ্রাম, যা ফারুক খানের নিজ বাড়ি।

কিন্তু থানায় দেওয়া অভিযোগে ঘটনার স্থান দেখানো হয়েছে হ্যাপি বেগমের বাপের বাড়ি মুক্তিরকান্দি গ্রাম। এই বিভ্রাট তদন্তে জটিলতা তৈরি করছে। পিবিআই সূত্র জানায়, স্থান, সময় ও পরিস্থিতির তথ্য যাচাই করে প্রকৃত ঘটনা বের করা হবে। ঘটনায় অভিযুক্ত সালিশদার রোকনুজ্জামান খান বলেন, আমরা এলাকার সম্মানিত মানুষ হিসেবে সালিশে ডাকা হয়েছিল। ফারুক নিজেই স্বীকার করেছিল সে দ্বিতীয় স্ত্রীকে তালাক দেবে। কোথাও কোনো মারধরের ঘটনা ঘটেনি।

এখন আমাদের ব্যক্তিগতভাবে হেয় করতে এই মামলা। তিনি আরও বলেন, যেদিন সালিশ হয়েছিল সেদিন ষাটনল ইউনিয়ন পরিষদের ৩জন বর্তমান সদস্য উপস্থিত সহ এলাকায় গণ্যমান্য আরো আরো অর্ধশতাধিক লোকজন উপস্থিত ছিলেন। সালিশে কোন রকমের মারধরের ঘটনা ঘটেনি। নাছির প্রধান বলেন, সামাজিক সমাধান চাওয়ার জন্য আমরা সালিশে গিয়েছিলাম। কোনো অপরাধ করিনি। তদন্ত হলে সত্য উদ্ঘাটিত হবে। আমাদের বিরুদ্ধে কেন মিথ্যা মামলা দেওয়া হলো এর জন্য আমরা প্রশাসনের কাছে বিচার চাই।

মামলাটি বর্তমানে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) তদন্ত করছে। তদন্ত কর্মকর্তা মাহফুজুর রহমান জানান,  ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পরই মৃত্যুর প্রকৃত কারণ নির্ধারণ করা সম্ভব হবে। দুটি মামলাই বিচারাধীন রয়েছে। একটি মৃত্যু—দুইটি ভিন্ন দাবি। আত্মহত্যা নাকি পরিকল্পিত হত্যা? সালিশকারীরা নিরীহ নাকি ঘটনার সঙ্গে জড়িত? আর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ—ঘটনাস্থল আসলে কোনটি? এই প্রশ্নগুলোর জবাব এখন শুধুই ময়নাতদন্ত রিপোর্ট ও পিবিআই তদন্তের ওপর নির্ভরশীল।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here