মতলব উত্তরে ধান ভাঙার কল যাচ্ছে বাড়ি বাড়ি জনপ্রিয় হয়ে উঠছে ভ্রাম্যমাণ ধান ভাঙার মেশিন

0
মতলব উত্তরে ধান ভাঙার কল যাচ্ছে বাড়ি বাড়ি জনপ্রিয় হয়ে উঠছে ভ্রাম্যমাণ ধান ভাঙার মেশিন

প্রেসনিউজ২৪ডটকমঃ নিজস্ব প্রতিবেদকঃ চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার মেঘনা ধনাগোদা সেচ প্রকল্পে চলতি মৌসুমের রোপা ও ইরি ধান, আউশ ধান কাটা শেষ হয়েছে। সেচ প্রকল্প হওয়ায় এখানে ধানের চাষ হয় অনেক বেশি। স্থানীয় কৃষকরা এখন নতুন ধান শুকিয়ে গোলায় তোলার কাজও সম্পন্ন করে ফেলেছেন। সেই সঙ্গে শুকানো ধান থেকে চাল ভাঙতে এখন ব্যস্ত গৃহস্থ ও কৃষকরা। উপজেলার বেকার যুবকরা এখন শ্যালো মেশিনে ধান শুকনো ধান থেকে চাল ভাঙার চাকি হলার সংযোজন করে কৃষকের বাড়ি বাড়ি গিয়ে ধান ভাঙানোর কাজ করছেন।

এখন আর কাউকে ধান নিয়ে ছুটতে হয় না বাজার বা ধান ভাঙার মেশিন বাড়িতে। রিকশা, বাইসাইকেল ও মাথায় বহন করতে হয় না ধান বা চালের বস্তা। এখন ধান ভাঙার মেশিনই বাড়িতে বাড়িতে যাচ্ছে। আর এসব সমাধান করে দিয়েছেন উপজেলার ছেংগারচর পৌরসভার শিকিরচর গ্রামের আসাদ আলী’র (৪২) ভ্রাম্যমাণ ধান ভাঙার কল। এটা এখন গ্রাম বাংলায় দিনে দিনে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। গেরস্থ বাড়ির দোরগোড়ায় গিয়ে ধান ভেঙে চাল করে দেন আসাদ আলী।

এদিকে নতুন ধানকে কেন্দ্র করে প্রযুক্তির কল্যাণে ধান ভাঙার মেশিন চলে যাচ্ছে মানুষের বাড়ি বাড়ি। উদ্ভাবিত প্রযুক্তি ব্যবহারে তৈরি করা শুকনো ধান থেকে চাল ভাঙার মেশিন এখন গ্রামাঞ্চলে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। আধুনিক পদ্ধতি চালু হওয়ায় ধান ভাঙার জন্য গৃহস্থদের হাটবাজার কিংবা মিলে এখন আর যেতে হচ্ছে না। ঘরে বসেই পাচ্ছে ধান ভাঙার সুবিধে। এতে করে কৃষক ও গৃহস্থরা সময় ও কষ্ট থেকে রক্ষা পাচ্ছেন। পাশাপাশি ধান ভাঙতে লোডশেডিং কিংবা বিদ্যুৎ বিভ্রাটের কবলে পড়তে হচ্ছে না। কৃষক পরিবারের পুরুষরা কৃষিকাজ এবং বাইরের কাজে ব্যস্ত থাকায় ধানের বস্তা মাথায় নিয়ে গ্রামগঞ্জের ওইসব ধান ভাঙানোর মিলে যাওয়া অনেক সময় সম্ভব হয় না। তাই কৃষকরা ভ্রাম্যমাণ ধান ভাঙার মেশিনে চাল তৈরি করে নিচ্ছেন। খরচ কম হওয়ায় বাড়িতেই ভাঙ্গানো হচ্ছে ধান। চাষিদের বাড়ির উঠানেই ভ্রাম্যমান চাউল মাড়াই মেশিন দিয়ে চাউল মাড়াই করা হচ্ছে।

ডিজেল চালিত ভ্রাম্যমাণ এ শ্যালো মেশিনে ধান ভাঙাতে কারেন্টের জন্য অপেক্ষা করতে হয় না। উপজেলার ছেংগারচর শিকিরচর গ্রামের কৃষক আলী আসাদ (৪২) এখন শ্যালো মেশিনে ধান ভাঙার চাকি হলার সংযোজন করে কৃষকের বাড়ি বাড়ি গিয়ে ধান ভাঙানোর কাজ করছেন। তিনি প্রায় ১০ বছর ধরে মোবাইলে ফোন করলেই কৃষকের বাড়ি বাড়ি গিয়ে ধান ভাঙে দিচ্ছেন। ইতোমধ্যে কৃষকের কাছে খুবই জনপ্রিয় হয়ে উঠছেন তিনি ও তার ধান ভাঙার মেশিন।

সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার দক্ষিণ শিকিরচর গ্রামের বেপারী বাড়িতে নতুন ধান শুকিয়ে গোলায় তোলা ও ধান শ্যালো মেশিনে ভাঙতে ব্যস্ত আলী আসাদ । সেই সঙ্গে ধান ভাঙিয়ে চাল করার কাজে ব্যস্ত কৃষক-কৃষাণীরাও। এখন ধান কাটা মাড়াই ও শুকনোর পর চাল করার জন্য ঘরের পুরুষের ওপর নির্ভর করে থাকতে হচ্ছে না। গ্রামে গ্রামে গিয়ে ধান ভাঙার কাজ করায় গৃহবধূরা যেন মহাখুশি। তবে বাজারে গেলে চাষিরা কিছুটা কমেও পাবে। কিন্তু তাদের যাতায়াত খরচ, শ্রমিক খরচ দিয়ে আমার চেয়ে বেশি খরচ পড়ে যায়। তাই চাষিরা সল্প সময়ে, অল্প খরচে আমাদের ভ্রাম্যমান মাড়াই কল দিয়ে ধান-চউল মাড়াই করে।

আলী আসাদ জানান, মৌসুমে ভ্রাম্যমাণ রাইস মেশিন দিয়ে কৃষকের বাড়ি গিয়ে ধান ভাঙেন। কৃষকরা এখন দূরে বাজারে কিংবা মিলে গিয়ে ধান থেকে চাল ভাঙাতে চান না। যাদের ধান ভাঙার প্রয়োজন তারা যোগাযোগ করলে বাড়িতে গিয়ে ভাঙার কাজ করা হয়। সে আরও বলেন, আমি বিভিন্ন এলাকার রাস্তা দিয়ে মেশিন নিয়ে যাই। যাদের ভাঙ্গানো দরকার তারা আমাকে ডেকে নেয়। তখন তার বাড়িতে মেশিন রেখে মাড়াই করি। কারন আমার মেশিনটি ইঞ্জিন চালিত। শ্যালো ইঞ্জিন দিয়ে আমার গাড়িটা চলে। আর সেই গাড়ির ওপর রাখা আছে মাড়াই কল।

তিনি মণ প্রতি ধান ভাঙাতে ৬৫ টাকা নেন। প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ১০০ মণ ধান ভাঙলে ৭ হাজার টাকা আসে। এতে খরচ বাদে দৈনিক ২ হাজার টাকা আয় হয়। মৌসুম এলে ভালো রোজগার আর মৌসুম ছাড়া দৈনিক খরচ বাদে এ হাজার টাকা থেকে বারোশ’ টাকা রুজি করতে পারেন। এ আয় দিয়েই তার সংসার ভালোভাবে চলছে। আমার এ ভ্রাম্যমাণ কল দেখে অন্যরাও এ মেশিন তৈরি করে বাড়ি বাড়ি গিয়ে ধান ভেঙে কামাই (আয়) করে খাচ্ছে।

মেশিনে ধান থেকে চাল করতে আসা কৃষক কালু বেপারী (৪৫) বলেন, ‘এবার আমার ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। আমাদের গ্রাম থেকে ধান ভাঙাতে যেতে হয় অনেক দূরে বা বাজারে। এতে আমাদের সময় নষ্ট ও কষ্ট বেশি হয়। এ মেশিনে ধান ভাঙতে খরচ সামান্য বেশি হলেও কোনো প্রকার কষ্ট নেই। পরিশ্রম ছাড়া ঘরে বসেই ধান ভাঙতে পেরে খুবই খুশি।’

উপজেলার ছেংগারচর পৌরসভার ঠাকুরচর গ্রামের আহম্মদ উল্লাহ ছৈয়াল নামে একজন চাষি বলেন, আমরা আগে বাজারে যেতাম ধান ভাঙ্গাতে। কিন্তু ভ্রাম্যমান মেশিন আশার পরে আর আমাদের বাজারে যেতে হয় না। কেননা বাজারের চেয়ে বাড়িতে চাউল মাড়াই করলে আমাদের খরচ ও কষ্ট দুটোই অনেক কম হয়। বেশি ধান মাড়াই করতে বাজারে গেলে অতিরিক্ত শ্রমিক দরকার হয়। এখন ভ্রাম্যমান মেশিন দিয়ে বাড়ির উঠানেই মাড়াই করি। পরিবারের সদস্যরা সহযোগিতা করলেই হয়ে যায়।

ওই গ্রামের বধূ আমেনা বেগম জানান, ‘আংগরে (আমাদের) আগে মেশিন ঘরে/বাজারে যাইতাম ধান ভাঙ্গাতে। অহন (এখন) ভ্রাম্যমাণ মেশিন আওনের (আসার) পরে আর আংগরে (আমাদের) বাজারে বা ধান ভাঙ্গার মেশিন বাড়িতে যাওয়া লাগে না। বাজারের চেয়ে ভ্রাম্যমাণ কলে ধান ভাঙলে আমাদের খরচ, কষ্ট ও সময় খুব কম লাগে।

কৃষ্ণগপুর গ্রামের কৃষক কামাল জানান, এ উপজেলার কৃষকেরা সেচ প্রকল্পে বছরে তিনটি (ইরি, বোরো ও আমন) ধানের আবাদ করে থাকেন। আর কৃষকেরা তাদের উৎপাদিত সোনালি ধান সিদ্ধ করে শুকিয়ে দূর-দূরান্তের বাজারে গিয়ে ধান ভাঙ্গানো মেশিনে এখন আর চাল ভাঙ্গাতে আগ্রহী নন। তাই তারা বাড়িতে ভ্রাম্যমাণ ধান ভাঙ্গানো মেশিনে ধান ভেঙ্গে চাল করতে আগ্রহী হয়ে উঠেছে। আর এ সুযোগে এখন দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে ভ্রাম্যমাণ মেশিনের ব্যবহার। ধান ভাঙ্গানো এ ভ্রাম্যমান মেশিন ক্রমেই জনপ্রিয় হয়ে উঠছে উপজেলায়।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here