প্রেসনিউজ২৪ডটকমঃ মো:মাহফুজুর রহমান, গৌরীপুর (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি : গৌরীপুরে গার্মেন্ট কর্মীকে গণধর্ষণের ঘটনায় দেবর মো. আপেল মিয়া (৩৫) ও তার ভাবী বিউটি আক্তার (৪০) রোববার (২৮ এপ্রিল/২৪) বিজ্ঞ আদালত শুনানী শেষে তাদেরকে জেল হাজতে প্রেরণ করেছে। প্রতিপক্ষ মামলার বাদী ও স্বাক্ষীদের ফাঁসাতে গিয়ে নিজের অপকর্ম প্রকাশ পেয়ে যায়।
ধর্ষণের শিকার গার্মেন্ট কর্মী ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে এসে গৌরীপুর থানায় আসলে থানার অফিসার ইনচার্জ সুমন চন্দ্র রায়ের কৌশলে বেড়িয়ে আসে গণধর্ষণের আসল তথ্য। ধর্ষণের আলামত তৈরি করতে রাতে আপেল মিয়া ও তার দু’বন্ধু মিলে ওই নারীকে গণধর্ষণের মতো একটি জঘন্যতম কাজ করে। ভাবী বিউটি ও দেবর আপেল পরিকল্পিতভাবে মামলার বাদী ও সাক্ষীকে ফাঁসাতে চেয়েছিলো।
প্রকৃত রহস্য উদঘাটন প্রতিপক্ষ বাদী-সাক্ষ কে রক্ষা ও ধর্ষণের জড়িতদের গ্রেফতারে প্রশংসায় ভাসছেন গৌরীপুর অফিসার ইনচার্জ সুমন চন্দ্র রায়। ঘটনার বিবরণে জানা যায়, উপজেলার রামগোপালপুর ইউনিয়নের ধুরুয়া আগপাড়া গ্রামের মো. সাদেক মিয়ার স্ত্রী মোছা. বিউটি আক্তারকে সঙ্গে নিয়ে ওই গার্মেন্ট কর্মী শনিবার (২৭ এপ্রিল/২৪) গণধর্ষণের ঘটনায় উপজেলার রামগোপালপুর ইউনিয়নের ধুরুয়া আগপাড়া গ্রামের খন্দকার রায়হান হোসেন, খন্দকার আজমল হোসেন ও খন্দকার মো. লাক মিয়ার বিরুদ্ধে গণধর্ষণের অভিযোগ দায়ের করেন।
ওই গার্মেন্ট কর্মী অভিযোগ করে আবু রায়হানের সঙ্গে দীর্ঘদিনের প্রেম চলছে, বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে তাকে নিয়ে এসে গণধর্ষণ করে। একই সময় মো. আব্দুস সাত্তারের পুত্র মো. আপেল মিয়া (৩৫) মুঠোফোনে পুলিশকে জানায়, গণধর্ষণের আসামী আবু রায়হান তার সামনে রয়েছে, আসলেই ধরতে পারবে। এমন তথ্যের ভিত্তিতে দ্রুত সময়ের মধ্যে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে আবু রায়হানকে আটক করে। এরমধ্যে অফিসার ইনচার্জ সুমন চন্দ্র রায়ের জিজ্ঞাসাবাদে ধর্ষণের শিকার ওই নারীর তথ্যে গড়মিল পরিলক্ষিত হওয়ায় সন্দেহের সৃষ্টি হয়।
অফিসার ইনচার্জ এ সময় ৩জন নির্মাণ শ্রমিকের ছবি দেখিয়ে বলেন আমরা ধর্ষণে জড়িতদের আটক করেছি। আপনি (ধর্ষণের শিকার নারী) ‘আবু রায়হান’ চিহ্নিত করে দিন। তখন ওই নারী দীর্ঘদিনের সেই প্রেমিক হিসাবে সুন্দর গোলগাল চেহারার এক শ্রমিককে সনাক্ত করায় প্রকৃত রহস্য বেড়িয়ে আসে। পরে পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে ধর্ষণের শিকার ওই নারী জানায়, তাকে সঙ্গে করে বিউটি আক্তারের বাড়িতে বৃহস্পতিবার (২৫ এপ্রিল/২৪) গাজীপুর থেকে বেড়াতে নিয়ে আসেন। তার মা ও বিউটি একই গার্মেন্টে চাকুরী করে।
শুক্রবার (২৬এপ্রিল/২৪) রাত সাড়ে ১০টার দিকে তাকে ঘুম থেকে তুলে অন্য কক্ষে নিয়ে যায় বিউটি আক্তার। এরপরে সেখানে মো. আপেল মিয়া ও তার দু’বন্ধু ফজল মিয়া, শাহীন মিয়া পালাক্রমে গণধর্ষণ করে। বিউটি আক্তার ও আপেল মিয়া প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে তাকে দিয়ে মিথ্যা অভিযোগ করায়। প্রকৃতপক্ষে তিনি তাদের কাউকে চিনেন না। এদিকে ওসির নির্দেশে গৌরীপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (তদন্ত) ইমরান আল হোসাইন, রায়হানকে সনাক্তকারী ও তথ্যদাতা আপেল মিয়াকে চায়ের আমন্ত্রণ জানিয়ে থানায় নিয়ে আসেন।
ধর্ষণের মূলরহস্য বেড়িয়ে আসার বিষয়টি টের পেয়ে থানা থেকে পালিয়ে যান আপেল মিয়া। এরপরে পুলিশ অভিযান চালিয়ে, আপেল মিয়াকে আবারও গ্রেফতার করেন। গৌরীপুর থানার অফিসার ইনচার্জ সুমন চন্দ্র রায় জানান, ধর্ষণের প্রকৃত রহস্য উদঘাটন, জড়িত ২জনকে গ্রেফতার করে বিজ্ঞ আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে। মামলার তদন্তকারী অফিসার ওসি (তদন্ত) ইমরান আল হোসাইন জানায়, ধর্ষণের ঘটনাস্থল পরিদর্শন, আলামত সংগ্রহ ও ভিকটিমকে সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। জড়িত অন্য আসামীদের গ্রেফতারের অভিযান অব্যাহত আছে।
অপরদিকে অনুসন্ধানে জানা যায়, আপেল মিয়ার স্ত্রী মোছা. তাসনিম আক্তার ২০২১সনের ২৬ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ২নং ওয়ার্ডে (সাধারণ ৪.৫ ও ৬ওয়ার্ড) সংরক্ষিত আসনে জিরাফ প্রতীকে পায় ১হাজার ৭৯৫ ভোট। একই গ্রামের খন্দকার লাক মিয়ার স্ত্রী মোছা. জেসমিন আক্তার হেলিকপ্টার প্রতীকে পায় ১হাজার ৩৫৭ ভোট। তাসনিম আক্তারের পরাজয়ের পরপরেই জেসমিনের কর্মী-সমর্থক ও তাদের আত্মীয়-স্বজনের বাড়িঘরে হামলা-পাল্টা হামলার ঘটনা ঘটে। এ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দু’গ্রুপের মাঝে দ্বন্দ্ব-সংঘাতের সৃষ্টি হয়।
২০২২সনের ৮ ফেব্রুয়ারি আপেল মিয়ার নেতৃত্বে হামলা-ভাংচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় খন্দকার রায়হান হোসেন বাদী হয়ে ১০ ফেব্রুয়ারি ও খন্দকার রায়হান হোসেন গংদের আসামী করে ১২ ফেব্রুয়ারি বিউটি আক্তার বাদী হয়ে পাল্টা মামলা দায়ের করেন। খন্দকার রায়হানের মামলায় আপেল মিয়া জেলহাজতে ছিলেন। এতে ওরা আরও ক্ষুব্দ ও প্রতিশোধপ্রবণ হয়ে উঠে।
ওই নির্বাচনের জেরে হামলা-মামলার ঘটনার প্রেক্ষিতে প্রতিপক্ষ খন্দকার রায়হান হোসেন গংদের ফাঁসাতে আপেল মিয়া ও বিউটি আক্তারের পরিকল্পনায় গার্মেন্টকর্মীকে নিজেরা গণধর্ষণ করে প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা করার অপচেষ্টা চালায়। তবে ওই নির্বাচনে বিজয়ী হন ২হাজার ৬৮ ভোট পেয়ে তালগাছ প্রতীকের প্রার্থী মোছা. হোসনে আরা বেগম।