প্রেসনিউজ২৪ডটকমঃ কামরুজ্জামান শাহীন,ভোলা: মাদক উপত্যাকায় পরিণত হয়েছে গোটা ভোলা জেলা। জেলার ৭ উপজেলায় এখন মাদক বিক্রি হচ্ছে দেদারছে। মাদকের অন্যতম গেটওয়ে হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে ভোলা। এর অন্যতম কারণ উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা ও নির্বিঘেœ পাচারের নিরাপদ রুট। নদী পথে কোস্টগার্ড আর থানায় থানায় পুলিশ ও র্যাব মাদকের এই ভয়াবহতা থামাতে হিমশিম খাচ্ছেন।
এদিকে গতকাল ২৩ ফেব্রুয়ারী ভোলা পৌরসভা ৫ নং ওয়ার্ড এলাকার খালপাড় রোড থেকে ৫৫ টি বিয়ার ক্যানসহ কবির হোসেন ওরফে তেল কবির ও মো. রায়হান নামেন দুই মাদক ব্যবসায়ীকে আটক করেছে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। বিশেষ করে ভোলায় বিভিন্ন রুটে ব্যাপক ভাবে মাদক প্রবেশ করায় ডিবি ও পুলিশের ঘুম হারাম করে দিচ্ছে। নিয়মিত সন্ত্রাস ও বিভিন্ন অপরাধ বিরোধী অভিযান চালানোর পাশাপাশি মাদকের শ্রোত ঠেকাতে হিমশিম খাচ্ছে আইনশৃংখলা বাহিনী। অন্যদিকে, ঠুটো জগন্নাথে পরিণত মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রন অধিদপ্তর।
লোকবলের দোহায় দিয়ে তারা হাত পা গুটিয়ে বসে আছে। ব্যবসায়ীদের লেজ না পেলেও তারা মাঝে মধ্যে সেবনকারীদের আটকিয়ে তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলতে কষ্ট হচ্ছে। পুলিশের দেওয়া তথ্যমতে গত এক বছরে ভোলায় প্রায় তিন কোটি টাকার মাদক উদ্ধার করেছে তারা। তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, ভোলার ডিবি পুলিশ ও থানা পুলিশ আমদানীর তুলনায় খুব কম পরিমান মাদক উদ্ধার করতে পারছে। অভিযোগ আছে, সখ্যতা থাকায় মাদক স¤্রাটরা থেকে যাচ্ছে অধরা। চুনোপুটি মার্কা ব্যবসায়ীরা পুলিশের জালে বন্দি হলেও এ ব্যবসার আড়ালে থাকা গডফাদাররা গ্রেফতার হয় না।
সরকারের বিশেষ একটি সংস্থার রিপোর্ট মোতাবেক ভোলা জেলায় কোন না কোন ভাবে মাদক ব্যবসায় ৪/৫ শতাধিক ব্যক্তি জড়িত রয়েছে। এসব মাদক ব্যবসায়ীরা প্রায়ই ডিবি পুলিশ ও থানা পুলিশের হাতে গ্রেফতার হলেও বেশিদিন জেলে আটকে থাকে না। দুর্বল ধারা ও সঠিক প্রমানের অভাবে তারা বের হয়ে আসে এবং পুরোদমে মাদক ব্যবসায় জড়িয়ে পড়ে। ভোলার একাধিক মাদক ব্যবসায়ীকে কয়েক বার গ্রেফতারের পর পুলিশের এক কর্মকর্তা জানান, প্রতিবারই জেল থেকে বেরিয়ে এসে আবারো জড়িয়ে পড়ে মাদক ব্যবসার সাথে।
ফলে শহর থেকে গ্রাম পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ছে মাদকের বিশাক্ত নীল ছোবল। পানের দোকানেও এখন ইয়াবা পাওয়া যাচ্ছে। ফলে উঠতি বয়সের কিশোর থেকে শুরু করে যুবকরা আক্রান্ত হচ্ছে মাদকের মত মারাত্মক জ্বরে। সরকারের একটি গোয়েন্দা সংস্থার তথ্যমতে ভোলা অঞ্চলে এখন প্রভাবশালীরা মাদকের সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছে। এই তালিকায় অবাক করার মতো তথ্য দিয়েছে সংস্থাটি। তাদের কাছে তথ্য আছে নামধারী জনপ্রতিনিধি, পুলিশ ও সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে মাদকের বড় বড় চালান পাচার হচ্ছে।
কতিপয় ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার ও চেয়ারম্যানরা ও রাজনৈতিক দলের নেতারা জড়িয়ে পড়েছে এই মাদক ব্যবসায়। অন্যদিকে পুলিশের কতিপয় সদস্যও মাদক ব্যবসায়ীদের সাথে ঘনিষ্ঠ ভাবে জড়িয়ে পড়েছে। জেলা পুলিশ সুপার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, জেলার ৭ টি উপজেলা, থানা ও বিভিন্ন ইউনিয়নে মাদকবিরোধী অভিযান চালিয়ে গত এক বছরে ‘২০২৩ সালের জানুয়ারী থেকে ডিসেম্বর পযর্ন্ত’ ভোলায় মাদক আইনে ৪৩২ টি মামলায় দায়ের করেছেন।
এ সময় ৫০ হাজার ১ শত ২৭ পিস ইয়াবা ট্যাবলেট, ২২৩ কেজি গাঁজা, ১৮ বোতল ফেন্সিডিল, ১২ বোতল বিদেশী মদ, ১১৬ লিটার স্পিরিট ভিনেচার্জ, ২ লিটার চোলাই মদ, ১ গ্রাম হেরোইন ও ২ বোতল হুইসকি মদ উদ্ধার করা হয়েছে। এসময় মাদকের ৪৩২টি মামলায় আসামীর সংখ্যা ৫৮১ জন, পুলিশ গ্রেফতার করেছেন ৫৩৪ জন আসামীকে। এ বিষয়ে ভোলার পুলিশ সুপার মো. মাহিদুজ্জামান বলেন, আমরা প্রতিনিয়িত মাদক বিরোধী অভিযান পরিচালনা করছি।
মাদকের শ্রোত ঠেকাতে আমরা বিভিন্ন অভিযানের পাশাপাশি সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য কাজ করছি। ইমামদের মাধ্যমে মসজিদে মসজিদে মাদক নিয়ে ইসলামের দৃষ্টি ভঙ্গি তুলে ধরছি এবং স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসায় মাদক বিরুদ্ধে সচেতনতা তৈরী করছি। মেম্বার ও চেয়ারম্যানদের নিয়ে কাজ করছি। তারপরও মাদকের ভয়াবহতা ঠেকানো যাচ্ছে না। তিনি বলেন, আমরা মাদক ব্যবসায়ীদের আটক করে মামলা দিই। এরপর আমাদের আর কোন কাজ নেই।
এছাড়া পুলিশের আরেকটি সুত্র জানায়, মাদক ব্যবসায়ীদের মধ্যে বেশির ভাগ সদস্য সরকারী দলের ছত্রছায়ায় ব্যবসা করে। এ জন্য তাদের গ্রেফতার করলেও বেশিদিন আটকানো যায় না। এদিকে নাম প্রকাশ না করার শর্তে ভোলার জেলা পুলিশের এক কর্মকর্তা জানান, মাদকের সাথে সমাজের অনেকই জড়িত। তারপরও পুলিশ নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করছে।
অভিভাবকরা সচেতন না হলে পুলিশের একার পক্ষে মাদক নিয়ন্ত্রন করা সম্ভব নয়। তিনি আরও জানান, আমরা মাদক ব্যবসায়ীদের ধরছি, কিন্তু আইনের ফাঁকফোকর দিয়ে তারা বেরিয়ে আবার পুরানো পেশায় ফিরে আসছে।