তালতলীর গোলের রস ও গুড়ে বদলে যাচ্ছে বেহালা গ্রাম

0
তালতলীর গোলের রস ও গুড়ে বদলে যাচ্ছে বেহালা গ্রাম

প্রেসনিউজ২৪ডটকমঃ মুঃ আব্দুল মোতালিব তালতলী (বরগুনা) প্রতিনিধিঃ প্রতিবছর শীত এলেই তালতলী উপজেলার বেহেলা গ্রামের গোলগাছিদের কর্মযজ্ঞ বেড়ে যায়। গোলের গুড়ে গ্রামের প্রায় দুই হাজার মানুষের জীবিকার সংস্থান হয়েছে। গোলপাতার রস সংগ্রহ আর গুড় তৈরির কর্মযজ্ঞে এ সময়টাতে বদলে যায় পুরো গ্রামের চিত্র। গোল গুড় বিক্রি করে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হয়েছেন তাঁরা। এতে অর্থনীতিক ভাবে বদলে যাচ্ছে বেহেলা গ্রামটি। তবে গাছিদের দাবি, মানসম্মত প্রশিক্ষণ ও গুড় সরকারিভাবে বাজারজাতকরণে সহযোগিতা করলে গ্রামটি হবে অর্থনীতির মডেল।

উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, উপজেলায় ১০০ হেক্টর জমিতে গোলগাছের সংখ্যা প্রায় ২৫ হাজার। এ সব গোলগাছের বাহর থেকে সংগৃহীত রস জ্বালিয়ে প্রতি শীতে প্রায় ১২-১৩ হাজার টনের বেশি গুড় উৎপাদিত হয়। সবচেয়ে বেশি গাছ আছে বেহেলা গ্রামে। এই গ্রামটিতে গোলগাছের সংখ্যা ১৫ হাজার। এরপরে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক গাছ রয়েছে গেন্ডামারা গ্রামে। এটিসহ উপজেলার অন্যান্য কয়েকটি গ্রাম মিলিয়ে রয়েছে প্রায় ১০ হাজার গাছ। স্থানীয়ভাবে গোলের বাগানকে বলা হয় ‘বাহর’। বেহেলায় রস সংগ্রহ থেকে গুড় তৈরিতে কাজ করেন প্রায় ৩ শত পরিবার।ঃৃজানা যায়, নভেম্বর মাস থেকে ফেব্রুয়ারির শেষ সময় পর্যন্ত রস সংগ্রহের উপযোগী থাকে।

শীতের তীব্রতা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে গোলগাছের রস ঝরা শুরু হলে সেই রস সংগ্রহ করেন। শীত যত তীব্র হয় এই রসের চাহিদাও তত বেড়ে যায়। শীতকালীন এ কয়েক মাসে গোল রস ও গুড় বিক্রি করে লাখ টাকাও আয় করেন চাষিরা। গোলের রস প্রতি কলস ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা ও গুড় প্রতি কেজি ১৮০ থেকে ২২০ টাকায় বিক্রি হয়। এক কলস রস দিয়ে ৩ কেজি গুড় তৈরি হয়।বেহেলা গ্রামের সুব্রত হাওলাদার বলেন, আমার ১৫০টি গাছ আছে, এগুলো নিজেই কেটে রস সংগ্রহ করে তারপর গুড় তৈরি করে বাজারে বিক্রি করি। ১৫০টি গাছ থেকে প্রায় ৮ কলস রস হয়।

এতে প্রতিদিন গড়ে দুই হাজার টাকার গুড় আসে। তিনি আরও বলেন, এই মৌসুমে প্রায় ৭০-৮০ হাজার টাকার গোলের গুঁড় বিক্রি করি। এছাড়াও গোলের পাতা ও গাছ বিক্রী করে বাড়তি টাকা আয় করি। বাড়তি আয়ে অর্থনৈতিক ভাবে এগিয়ে যাচ্ছি আমরা।বেহেলা গ্রামের আরেক চাষি নিখিল মিস্ত্রী বলেন, আমি ৫০ শতাংশ জমিতে প্রায় ২০০ গোল গাছ থেকে রস সংগ্রহ করে গুঁড় তৈরি করি। অনেক খুচরা বিক্রেতা বাড়িতে এসেই গুড় নিয়ে যান। আবার বাজারে গিয়েও বিক্রী করি। প্রতি কেজি ১৮০-২২০ টাকায় বিক্রি করি। আর আমাদের দেশের লোক বিদেশে গুড় নিয়ে যায়। এই গুড় এক বছরের মধ্যে নষ্ট হয় না।

তিনি আরও বলেন, আমাদের সরকারী ভাবে প্রশিক্ষন ও গুঁড় বাজারজাত করণে সহযোগিতা করলে এই গ্রামটি অর্থনৈতিক ভাবে বেশ এগিয়ে যাবে।উপজেলা কৃষি অফিসার সুমন হাওলাদার বলেন, গোল গাছে পরিচর্ষা করতে তেমন কোনো খরচ নেই। গুড় উৎপাদন ছাড়াও রয়েছে এ গাছের বহুবিধ ব্যবহার। এ অঞ্চলে গোলের গুড়ের ব্যাপক চাহিদা থাকার ফলে চাষিরা লাভবান হচ্ছে। গোলের গুড়ের এই সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে গবেষণার মাধ্যমে গোলগাছ চাষিদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হলে এটা খুব কাজে লাগবে। এ বিষয় সরকারিভাবে উদ্যোগের জন্য আমার দপ্তর থেকে কৃষি মন্ত্রণালয়ে দ্রুত প্রস্তাব পাঠানো হবে ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here