প্রেসনিউজ২৪ডটকমঃ দেশ স্বাধীনের পর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একটি মূল্যবান উক্তি বারবার উচ্চারণ করে গেছেন। সেটি হচ্ছে-‘স্বাধীনতা অর্জনের চেয়ে স্বাধীনতা রক্ষা ও সুসংহত করার কাজ কঠিন’। লন্ডন ক্লিনিকে অস্ত্রোপচারের পর বঙ্গবন্ধু প্রথম ‘ইস্টার্ন নিউজ এজেন্সিকে (এনা) দেওয়া এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে এই উক্তি করেছিলেন।
স্বাধীন বাংলাদেশের রূপকার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সেই অর্থবহ উক্তিকে ধরেই বলতে হয়, স্বাধীনতা অর্জন তথা যুদ্ধ করে বিজয় লাভের সঙ্গে জনগণের পরবর্তী দায়িত্ববোধ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি কেবল সাধারণ দু’চারটি বাক্য বা শব্দের আবর্তে ঘেরা নয়, এর মর্মার্থ অনেক বড়-অবারিত। কারণ যুদ্ধ করে রক্ত দিয়ে যে দেশ স্বাধীন করা হয়েছে সেটা কোনো সাধারণ বিষয় নয়। দীর্ঘ নয় মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ ও লাখো শহিদের তাজা রক্তের বিনিময়ে যে বিজয় অর্জিত হয়েছে সেটা চিরন্তন। তাই যেকোনো মূল্যে বিজয়ের সেই অর্জন সমুন্নত রাখতে হবে।
মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ছড়িয়ে দিতে হবে সবখানে।আজ ১৬ ডিসেম্বর, মহান বিজয় দিবস। স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের বিজয় দিবসের ৫২তম বার্ষিকীতে এসে দেখা যাচ্ছে, এক সময়ের পূর্ব পাকিস্তান আর আজকের বাংলাদেশের মধ্যে পার্থক্য অনেকটা ‘আকাশ-পাতাল’। উন্নয়ন-অগ্রগতিতে বাংলাদেশ এখন পৃথিবীর কাছে এক বিস্ময়। পাকিস্তানের অনেক বড় বড় বোদ্ধারাও এখন বাংলাদেশের মতো একটি উন্নয়নশীল সমৃদ্ধ পাকিস্তান চাইছেন। যেখানে যুদ্ধ পরবর্তী বাংলাদেশ পুনর্গঠন অবস্থায় অনেক বিদেশি তুচ্ছ-তাচ্ছিল্ল করেছিলেন, তারাই এখন বাংলাদেশের অগ্রগতি দেখে ব্যাপক ইতিবাচক মন্তব্য করছেন।
বর্তমানে দেশে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ডামাডোল চলছে। এর আগেই বাংলাদেশের রাজনীতি ও নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রসহ ইউরোপীয় অনেক রাষ্ট্রের কূটনীতিকদের ঘুম যেন হারাম হয়ে গেছে। নানা ধরনের তৎপরতা সবারই চোখে পড়ছে। যদি এর মর্মার্থ খোঁজা যায় তাহলে সহজেই অনুমান করা যায় যে, বাংলাদেশ এখন বিশ্ব পরিমণ্ডলে কতটা গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে আছে। ভূ-রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট এবং ভৌগোলিকভাবেও বাংলাদেশ এশিয়া তথা বিশ্বের কাছেই এখন নানা কারণেই গুরুত্বপূর্ণ।
বাংলাদেশকে এই গুরুত্ব দেওয়ার মূলেই এ দেশের সমৃদ্ধ ইতিহাসের বড় ভূমিকা রয়েছে। সারা পৃথিবী জানে, বাংলাদেশকে। কীভাবে বাংলাদেশের জন্ম হয়েছে। দেশের স্বাধীনতার জন্য এ দেশের মানুষ বুকের তাজা রক্ত ঢেলেছিল। লাখ লাখ শহিদের রক্ত ছাড়াও অসংখ্য মা-বোনেরা স্বাধীনতার জন্য নিজের সম্ভ্রম হারিয়েছিলেন।পরাধীনতার শৃঙ্খল ভেঙে পাক হানাদার বাহিনীর আধুনিক অস্ত্র-সরঞ্জামের বিপরীতে মুক্তিকামী বাঙালিরা যার যা কিছু ছিল তা নিয়েই দেশ স্বাধীনের যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ কালরাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী অতর্কিতে নিরস্ত্র বাঙালির ওপর আক্রমণ চালায়। ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন।
অতঃপর দীর্ঘ নয়মাস সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে আমরা অর্জন করি স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ।বঙ্গবন্ধু সবসময় রাজনৈতিক স্বাধীনতার পাশাপাশি একটি সুখী-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন দেখতেন। তার সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নের প্রাণপণ প্রচেষ্টা এখন অনেকটাই দৃশ্যমান। বাংলাদেশ আজ উন্নয়নের মহাসড়কে দুর্বার গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। দারিদ্র্য বিমোচন, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, মানবসম্পদ উন্নয়ন, নারীর ক্ষমতায়ন, শিশু ও মাতৃমৃত্যু হার হ্রাসসহ আর্থসামাজিক উন্নয়নের বিভিন্ন ক্ষেত্রে বাংলাদেশ অভাবনীয় সাফল্য অর্জন করেছে। দেশের ভূমিহীন ও গৃহহীন বিশাল একটি জনগোষ্ঠী এখন সরকারিভাবে নতুন ঘরবাড়ি পাচ্ছে।
পৃথিবীর কাছে বড় বিস্ময় রচিত হয়েছে, যখন বাংলাদেশ নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ করেছে। মেগাপ্রকল্পের মধ্যে মেট্রোরেল ইতিমধ্যে চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়েছে। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল, কর্ণফুলী টানেলসহ এমন অনেক ক্ষেত্রেই এগিয়ে গেছে উন্নয়নশীল বাংলাদেশ। টেকসই উন্নয়নের এ অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাকলে ২০৪১ সালের মধ্যেই বাংলাদেশ বিশ্বের বুকে একটি উন্নত-সমৃদ্ধ-স্মার্ট দেশ হিসেবে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে বলেও মনে করছে বর্তমান সরকার।কিন্তু এত উন্নয়ন-অগ্রযাত্রার মাঝেও এখনও সোচ্চার শক্তিশালী মুনাফাখোর, কালোবাজারি, দুর্নীতিবাজ সিন্ডিকেট।
দুর্নীতিবাজ-কালোবাজারি অসাধু চক্র এখনও দেশকে পিছিয়ে দিতে নানাভাবে ‘কারিশমা’ চালিয়ে যাচ্ছে। দেশের অর্থ-সম্পদ বিদেশে পাচার থেকে শুরু করে সব অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে স্বাধীনতাবিরোধী তথা দেশবিরোধী চক্র। দেশি-বিদেশি চক্র মিলে রক্তের বিনিময়ে পাওয়া স্বাধীনতা তথা বিজয়ের অর্জনকে ভূলণ্ঠিত করার অপচেষ্টা চলছে। তাই বিজয়ের সেই অর্জনকে সমুন্নত রাখতে রাষ্ট্র, সরকার এবং সাধারণ জনগণকে ওই অপশক্তির বিরুদ্ধে আরও সোচ্চার হতে হবে।