প্রেসনিউজ২৪ডটকমঃ খান মোহাম্মদ কামাল ঃআওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বীরবিক্রমের বড় ছেলে ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সদস্য সাজেদুল হোসেন চৌধুরী দিপুর জানাজা অনুষ্ঠিত হয়েছে তার জন্মভূমি চাঁদপুরের মতলবে। অশ্রসজল চোখে জনপ্রিয় এই রাজনীতিকের জানাজায় অংশ নিয়েছেন লাখো মানুষ।
রোববার (৩ নভেম্বর) বাদ যোহর মতলব উত্তর উপজেলার মোহনপুর খেলার মাঠ ও বাদ আছর মতলব দক্ষিণে মতলব নিউ হোস্টেল মাঠে সাজেদুল হোসেন চৌধুরী দিপুর পৃথক জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। প্রথশ জানাজা অনুষ্ঠিত হয় এদিন দুপুরে মতলব উত্তর উপজেলার মোহনপুরের নাছিরাকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে। জানাজার পূর্বে মতলব উত্তর উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক কাজী শরীফের সঞ্চালনায় সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বীরবিক্রম।
আবেগজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, পিতার কাঁধে সন্তানের লাশ যে কত ভারী তা একমাত্র সন্তানহারা বাবারাই বোঝে। আজ হাজার হাজার জনতার উপস্থিতি দেখে মনে হচ্ছে আপনারা আমার ছেলেকে কতটা ভালোবাসেন। আপনাদের ভালোবাসার ঋণ কোনোদিন পরিশোধ করতে পারব না। তারপরও আমার ছেলে যদি কারো সঙ্গে কোনো অন্যায় করে থাকে তাহলে ক্ষমা করে দেবেন, আল্লাহ যেন তাকে জান্নাতবাসী করেন।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন চাঁদপুর-৪ আসনের সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ সফিকুর রহমান, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নাছির উদ্দীন, সাধারণ সম্পাদক আবু নঈম পাটোয়ারী দুলাল, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ওচমান গনি পাটোয়ারী, জেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সংস্থাপন প্রতিমন্ত্রী মরহুম নূরুল হুদার বড় ছেলে তানভীর হুদা, মতলব উত্তর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট রুহুল আমিন, সহ-সভাপতি গিয়াস উদ্দিন চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা চেয়ারম্যান মুক্তিযোদ্ধা এমএ কুদ্দুস, ছেংগারচর পৌরসভার সাবেক মেয়র আলহাজ রফিকুল আলম জর্জ, মতলব দক্ষিণ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা চেয়ারম্যান বিএইচ কবির আহাম্মদ, মতলব উত্তর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম হাওলাদার, শাহজাহান মিয়া, যুগ্ম-সম্পাদক আইয়ুব আলী গাজী, ছেংগারচর পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি মনির হোসেন বেপারী, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি ব্যারিস্টার আশফাক চৌধুরী মাহি এবং তার ছোট ভাই রাহি চৌধুরী, ছেংগারচর পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আতাউর রহমান ঢালী, উপজেলা যুবলীগের সদস্য হাসান মোর্শেদ আহার চৌধুরী,জহিরাবাদ ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি গাজী মুক্তার হোসেন, পৌর যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মোঃ জাকির খান,ছেংগারচর পৌরসভার সাবেক প্যানেল মেয়র আলহাজ্ব রুহুল আমিন মোল্লা প্রমূখ।
জানাজায় ইমামতি ও মরহুম দিপু চৌধুরীর বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনায় মোনাজাত ও দোয়া পরিচালনা করেন ফরাজীকান্দি দরবার শরিফের পীর সাহেব কেবলা আল্লামা শায়খ মাসুদ আহমেদ। জানাজার পূর্বে প্রিয় নেতার কফিনে চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগ, উপজেলা আওয়ামী লীগ, ছেংগারচর পৌর আওয়ামী লীগ এবং অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, সুধীসমাজসহ বিভিন্ন সংগঠন ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করে। সুধীজনরা বলেন, সততা, প্রজ্ঞা, দক্ষতা ও সাহসিকতার এক অনন্য উদাহরণ সাজেদুল হোসেন চৌধুরী দিপু।
এদেশের, বিশেষ করে মতলবের, মানুষ তার অবদানের কথা সব সময় স্মরণ রাখবে।এর আগে সাজেদুল হোসেন চৌধুরী দিপুর মরদেহবাহী গাড়ি বেলা সোয়া ১১টায় মতলব উত্তর উপজেলার আলি ভিলায় পৌঁছে। সে সময় সেখানে হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়। নেতাকর্মী, স্বজন ও শুভাকাঙ্ক্ষীদের আহাজারিতে ভারি হয়ে ওঠে পরিবেশ।
প্রিয় নেতাকে এক নজর দেখার জন্য ভিড় করেন হাজার হাজার মানুষ। এদিন বাদ আসর চাঁদপুরের মতলব দক্ষিণ উপজেলার নিউ হোস্টেল ময়দানে সাজেদুল হোসেন চৌধুরী দিপুর দ্বিতীয় জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এখানে জানাজার পূর্বে মতলব পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলামের সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন ও সন্তানের জন্য দোয়া কামনা করেন মরহুমের পিতা মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বীরবিক্রম।
মতলব দক্ষিণে অনুষ্ঠিত জানাজায় অংশগ্রহণ করেন শরীয়তপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য নাইম রাজ্জাক, চাঁদপুর-২ আসনে জাতীয় পার্টি মনোনীত প্রার্থী ও দলটির প্রেসিডিয়াম মেম্বার এমরান হোসেন মিয়া, চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি জে আর ওবায়দুর রহমান টিপু, ফরিদগঞ্জ উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান জাহিদুল ইসলাম নোমান, চাঁদপুর পৌরসভার মেয়র জিল্লুর রহমান জুয়েল, মতলব পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও মতলব পৌরসভার মেয়র আওলাদ হোসেন লিটনসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতাকর্মীসহ কয়েক সহস্রাধিক মানুষ।
এখানে জানাজায় ইমামতি ও দোয়া পরিচালনা করেন মতলব উপজেলা পরিষদের পেশ ইমাম ও খতিব মাওলানা মোর্শেদ আলম সিরাজী।আগামীকাল ৪ঠা ডিসেম্বর মঙ্গলবার আওয়ামী লীগের কার্যালয়ের বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে তৃতীয় জানাজা এরপর গুলশান আজাদ মসজিদে তার চতুর্থ দফায় জানাজা শেষে বনানী কবরস্থানে দাফন করা হবে। এদিন বাদ জোহর বনানী কবরস্থানে দাফন করার কথা রয়েছে জনদরদি রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব সাজেদুল হোসেন চৌধুরী দিপুকে।
উল্লেখ্য, সাজেদুল হোসেন চৌধুরী দীপু গতকাল শনিবার (২ ডিসেম্বর) সন্ধ্যা ৫টা ১৭ মিনিটে রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। এর আগে ২৮ অক্টোবর হৃদরোগে আক্রান্ত হলে তাকে এই হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। মৃত্যুর আগে পর্যন্ত ইউনাইটেড হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন ছিলেন তিনি। সাজেদুল হোসেন চৌধুরী দিপু পিতা, মাতা, স্ত্রী, ছোট ভাই, বোন, দুই ছেলে, এক মেয়েসহ অসংখ্য আত্মীয়স্বজন ও অসংখ্য গুনগ্রাহী রেখে গেছেন।রাজনৈতিক পরিবারে জন্ম নেয়া দিপু চৌধুরী রাজনীতি ও দেশের মানুষের, বিশেষ করে চাঁদপুরের মতলবের মানুষের, প্রতি ছিলেন নিবেদিত প্রাণ।
অত্যন্ত জনপ্রিয় এই রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের মৃত্যুতে শোকে মুহ্যমান রাজনৈতিক অঙ্গন।১৯৭২ সালের পহেলা ফেব্রুয়ারি চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার মোহনপুর গ্রামে এক জন্ম গ্রহণ করেন সাজেদুল হোসেন চৌধুরী দিপু। তার পিতা মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বীর বিক্রম ছিলেন মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় ক্র্যাক প্লাটুনের কমান্ডার। রাজনীতির তিন প্রজন্ম – মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বীর বিক্রম, সাজেদুল হোসেন চৌধুরী দিপু ও আশফাক চৌধুরী মাহী।রাজনীতির তিন প্রজন্ম – মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বীর বিক্রম, সাজেদুল হোসেন চৌধুরী দিপু ও আশফাক চৌধুরী মাহী।মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া চাঁদপুর-২ আসন থেকে দুবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
এছাড়া তিনি অত্যন্ত সাফল্যের সঙ্গে দুবার আওয়ামী লীগ সরকারে মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। বর্তমানে তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য এবং দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনীত চাঁদপুর-২ আসনে নৌকার প্রার্থী। সাজেদুল হোসেন চৌধুরী দিপুকে এক নামে চেনেন মতলবের সর্বস্তরের মানুষ। অত্যন্ত জনপ্রিয় এই নেতা ছিলেন নিরহংকারী ও সাদা মনের মানুষ। আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন সাজেদুল হোসেন চৌধুরী দিপু।
এছাড়াও তিনি ছিলেন একাধারে সমাজসেবক, ক্রীড়ানুরাগী, ব্যবসায়ী, ধর্মানুরাগী, দানবীর এবং অসহায়মানুষের বন্ধু।মতলবের সাধারণ মানুষের কাছে তার গ্রহণযোগ্যতা ছিল বর্ণনাতীত। মতলববাসীর যে কোনো দুর্যোগ-দুর্বিপাকে পাশে থেকেছেন বিনা প্রশ্নে। একই সঙ্গে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগেরও ছিলেন সক্রিয়। জননেত্রী শেখ হাসিনাকে, তথা আওয়ামী লীগকে পুনরায় ক্ষমতায় আনার জন্য দৃঢ় প্রতিজ্ঞ ছিলেন সাজেদুল হোসেন চৌধুরী দিপু। তার স্বপ্ন ছিল, টানা পঞ্চমবারের মতো বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রীর আসন অলংকৃত করবেন। এজন্য নিরলস পরিশ্রম করে গেছেন তিনি।