প্রেসনিউজ২৪ডটকমঃ আসন বণ্টন ও আস্থার সংকটে ঝুলে রয়েছে জাতীয় পার্টির নির্বাচনের সিদ্ধান্ত। আসনের সংখ্যার পাশাপাশি সিনিয়র চার নেতার আসন জটিলতায় সমঝোতা বিলম্বিত হচ্ছে বলে জাতীয় পার্টি সূত্র জানিয়েছে।সূত্র জানিয়েছে, জাতীয় পার্টি ৬০টি আসন চায় আওয়ামী লীগের কাছে। অন্যদিকে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে ৪৪টির মতো আসনের বিষয়ে গ্রিন সিগন্যাল দেওয়া হয়েছে। জাতীয় পার্টি আসন সংখ্যার পাশাপাশি শীর্ষ নেতাদের আসনও চূড়ান্ত করতে চান আগে ভাগেই।
জাতীয় পার্টির সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, কো-চেয়ারম্যান সাবেক মহাসচিব এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার, কো-চেয়ারম্যান সাবেক মন্ত্রী ও সাবেক সংসদ সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদ, কো-চেয়ারম্যান জাতীয় পার্টির ডোনার খ্যাত যমুনা গ্রুপের কর্ণধার ও সংসদ সদস্য সালমা ইসলামের আসন নিয়ে জটিলতা দেখা দিয়েছে।কাজী ফিরোজ রশীদ ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনে ঢাকা-৬ আসন থেকে নির্বাচিত হন। এ বছর কাজী ফিরোজ রশীদকে আসনটি ছেড়ে দিতে নারাজ আওয়ামী লীগ। ওই আসনে আওয়ামী লীগ সাবেক মেয়র সাঈদ খোকনকে প্রার্থী করতে চান।
জাপার ডোনার খ্যাত সালমা ইসলামের আসন ঢাকা-১ (দোহার-নবাবগঞ্জ) নিয়ে মতানৈক্য দেখা দিয়েছে। ২০১৮ সালের নির্বাচন থেকেই রশি-টানাটানি চলছে। ওই নির্বাচনে সালমা ইসলামকে হারিয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন বেক্সিমকো গ্রুপের কর্ণধার সালমান এফ রহমান। পরে সংরক্ষিত কোটায় সংসদ সদস্য হয়ে আসেন সালমা ইসলাম। এবার আসনটি ছাড় দিতে নারাজ জাপা। সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান ও সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বিগত কয়েকটি নির্বাচনে চট্টগ্রাম-৫ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হচ্ছেন। নানা কারণে ওই আসনটিও ছাড়তে চায় না আওয়ামী লীগ। সেখানে হেভিওয়েট প্রার্থী রয়েছে সাবেক জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এমএ সালাম।
সাবেক মহাসচিব এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার ২০১৪ সালে পটুয়াখালী-১ আসন থেকে নির্বাচিত হন। ২০১৮ সালে গোপন সমঝোতা থাকলেও আওয়ামী লীগের প্রার্থী থেকে যান। আর ধরাশায়ী হন রুহুল আমিন হাওলাদার। সম্প্রতি ওই আসনে অনুষ্ঠিত উপনির্বাচনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আফজাল হোসেন।সিনিয়র নেতাদের এসব আসনের পাশাপাশি জাতীয় পার্টির নেতাদের মধ্যে প্রবল আস্থার সংকট রয়েছে। জাতীয় পার্টি মনে করে ২০০৮, ২০১৪ এবং ২০১৮ সালের নির্বাচনে কোন প্রতিশ্রুতিই রক্ষা করেনি আওয়ামী লীগ। নানাভাবে তাদের সঙ্গে অবিচার করা হয়েছে।
উপনির্বাচন, উপজেলা পরিষদ থেকে ইউনিয়ন পর্যন্ত কোথাও ছাড় দেওয়া হয়নি। অনেক সময় জোর করে বসিয়ে দেওয়া হয়েছে জাপার প্রার্থীদের। সে কারণে এবারের প্রতিশ্রুতি কতটা রক্ষা করবে সে সম্পর্কে তাদের মনে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। যে কারণে জাতীয় পার্টি আগে ভাগেই নিশ্চিত হয়ে তারপর সিদ্ধান্ত নিতে চায়। তারা এমন কোন মাধ্যমে নিশ্চিত হতে চান যাতে, আওয়ামী লীগ আর প্রতিশ্রুতি ভাঙতে না পারে।আওয়ামী লীগের সঙ্গে জটিলতার পাশাপাশি জাতীয় পার্টির অভ্যন্তরীণ বিষয়েও কিছু সংকট রয়ে গেছে। সরকারের গুডবুকে থাকা রওশন এরশাদের পছন্দের প্রার্থীদের ওই সংকট।
রওশন পন্থী নেতাদের ছাড় দিতে নারাজ জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের। জাতীয় পার্টির দুর্গখ্যাত রংপুর-৩ আসন থেকে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ বারবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। এরশাদের মৃত্যূর পর আসনটি থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন রওশন পুত্র রাহগীর আল মাহি সাদ এরশাদ। আসনটিতে নির্বাচনের বিষয়ে পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের’র খুবই আগ্রহী। অন্যদিকে রওশন এরশাদও তার পুত্রকে রাখতে বদ্ধপরিকর। উপনির্বাচনেও সময়েও বিষয়টি নিয়ে রশি টানাটানি হয়।
কঠোর গোপনীয়তার সঙ্গে চলছে আসন সমঝোতার ইস্যুটি। উচ্চ পর্যায়ের একটি টিম এ নিয়ে কাজ করছে বলে জানা গেছে। আসন সমঝোতার গুঞ্জন প্রসঙ্গে জানতে চাইলে জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু বলেছেন, বিষয়টি পুরোপুরি সত্য না আবার মিথ্যাও না। এই মুহুর্তে এরচেয়ে বেশি মন্তব্য করতে পারছি না।১৫ নভেম্বর দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়। জাতীয় পার্টির পক্ষ থেকে নির্বাচন প্রশ্নে এখনও কোন সিদ্ধান্ত জানায় নি।
নির্বাচন প্রশ্নে ভেবে চিন্তে পা ফেলতে চায় জাতীয় পার্টি। সময়ক্ষেপণ করে দেখতে চান অন্যকিছু ঘটে কিনা। বিশেষ করে আমেরিকার দৌঁড়ঝাপের দিকেও নজর রাখছে দলটি। অনেকেই ২০১৪ সালের নির্বাচনের আলামত দেখতে পাচ্ছেন। ২০১৪ সালে নির্বাচনে মনোনয়ন দাখিল করার পর হঠাৎ করেই নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেন হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ।
কিন্তু সেই নির্দেশ অমান্য করে রওশনের নেতৃত্বে ৮৭ জন প্রার্থী নির্বাচনে থেকে যান। রওশন এরশাদ এবার নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার ঘোষণা দিয়েছেন।