তফসিল নাটক বন্ধ করুন, দাবি না মানলে পরিণতি হবে ভয়ঙ্কর : রুহুল কবির রিজভী

0
 তফসিল নাটক বন্ধ করুন, দাবি না মানলে পরিণতি ভয়ঙ্কর : রুহুল কবির রিজভী

প্রেসনিউজ২৪ডটকমঃ তফসিল নাটক বন্ধ করে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের দাবি না মানলে পরিণতি ভয়ঙ্কর হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব এ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেন, জনগণের দাবি উপেক্ষা করে এক তরফা নির্বাচন করার জন্য উন্মত্ত হয়ে গেছে সরকার। এই তফসিল নাটক বন্ধ করে আগে পদত্যাগ করুন। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে ক্ষমতা দিন। এই দলদাস আওয়ামী নির্বাচন কমিশন বাতিল করুন। তারপর তফসিল। দাবি না মানলে পরিণতি ভয়ঙ্কর হবে।

সোমবার (১৪ নভেম্বর) বিকেলে ভার্চুয়াল এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। রিজভী বলেন, শেখ হাসিনা তার আজ্ঞাবহ নির্বাচন কমিশনকে দিয়ে অবৈধভাবে তফসিল দেওয়ার পায়তারা শুরু করেছে। এই তফসিলে বাংলাদেশে কোন নির্বাচন হবে না। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া কোন নির্বাচন হবে না। জনগণ ৫৭ সেকেন্ডে নৌকা মার্কায় ৪৩টি সিল মারা প্রহসনের পাতানো নির্বাচন দেশের মাটিতে হতে দিবে না।তিনি বলেন, অবৈধ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সম্মিলিত বিবেকবোধের চাঁপ বোধ করেন না বলেই জ্যান্ত মানুষ ধরে আগুনে নিক্ষেপ করতে সন্ত্রাসী ভাষায় হুকুম দিচ্ছেন। গত কয়েকদিন ধরে লাগাতার এই সহিংস হুংকারে দেশের গণতন্ত্রকামী প্রতিটি মানুষ চরম আতঙ্কে পতিত হয়েছে।

ইতিহাস এই স্বাক্ষ্য দেয় যে, আগুন সন্ত্রাস, ধ্বংসযজ্ঞ, গুম-খুন-ভাংচুর, সহিংসতার আতুরঘর আওয়ামী লীগ।তিনি আরও বলেন, আওয়ামী দুঃশাসনে পিষ্ট প্রতিবাদী মানুষকে নিশ্চিহ্ন এবং শান্তিপূর্ণ আন্দোলন প্রশ্নবিদ্ধ করতে বরাবরই দলীয় ও রাষ্ট্রশক্তিকে দিয়ে সন্ত্রাস নাশকতার চালিয়ে আসছে। অগ্নিসন্ত্রাস শব্দটিকে ব্যবহার করে বিএনপির ওপর চাপ প্রয়োগ করা হচ্ছে। অপরাধ করে তারা, আর চাপিয়ে দেয় বিএনপির লোকজনের ওপর। বিএনপি জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করে।‘কেবল বাংলাদেশ নয়, এখন গোটা পৃথিবীবাসী জানেন যে, আগুন দিয়ে গাড়ি পোড়ানো, সহিংসতা, গান পাউডার দিয়ে, লগি-বৈঠা দিয়ে মানুষ হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী আওয়ামী লীগ।

এবারো একদফার সংগ্রাম বানচাল করতে পুলিশের প্রটেকশনে আগুন সন্ত্রাসে আওয়ামী ক্যাডারদের অংশগ্রহণ দৃশ্যমান। যেমনটা তারা ২০১৩, ১৪ ও ১৫ সালে করেছে, বিভিন্ন সময় যেমন করেছে। বিএনপির নেতাকর্মীরা গুলি খাচ্ছে, রিমান্ডে অমানবিক নির্যাতন ভোগ করছে। গত ২৯ জুলাই রাজধানীর মাতুয়াইলে জনগণের অবস্থান কর্মসূচি চলাকালে আওয়ামী আগুন সন্ত্রাসীরা মুখোশ পরে বাসের ড্রাইভারের সামনেই আগুন দিয়েছে। ড্রাইভারও বলেছেন ১০ হাত দূরে পুলিশ ছিল, তাকে (ড্রাইভারকে) বলছে তাড়াতাড়ি নেমে যা, নাহলে তোকেসহ আগুন লাগিয়ে দিব।

বিএনপির এই মুখপাত্র অভিযোগ করে বলেন, গত ২ নভেম্বর অবরোধ চলাকালে ফেনীর লালপুলে মহাসড়কে চিনিভর্তি ট্রাকে আগুন দেয়ার ঘটনায় গ্রেফতারকৃত সদর উপজেলাধীন ধলিয়া ইউনিয়ন যুবলীগের সহ-সভাপতি নুর উদ্দিন টিপুকে গ্রেফতারে প্রমাণিত হয় অতীতের মতো আওয়ামী লীগ আগুন সন্ত্রাস নাশকতা করে বিএনপির ওপর দায় চাপাচ্ছে। প্রায় প্রতিটি আগুন সন্ত্রাসের ঘটনায় আওয়ামী লীগ ও রাষ্ট্রশক্তির সংশ্লিষ্টতার সুস্পষ্ট প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে।

কোনটা প্রকাশ হচ্ছে কোনটা ঢাকা দিচ্ছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।তিনি বলেন, আজকে নয়, ১৯৭২ সালের পর থেকে তারা এদেশের সন্ত্রাসের মধ্য দিয়ে যারা ভিন্নমত অবলম্বন করছে,যারা দেশপ্রেমিক, যারা আওয়ামী লীগের দুঃশাসন-দুর্নীতির বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছিলেন তাদেরও এভাবে নিশ্চিহ্ন করার চেষ্টা হয়েছে। তখনও আগুন লাগানো হয়েছে ঘরে, বসতবাড়ীতে, কল-কারখানায়। একের পর এক পাটকল আগুনে ভস্মিভূত হয়েছে। তখনও বিরোধী দলকে নির্মূল করার চেষ্টা করা হয়েছে। শেষে একচ্ছত্র ক্ষমতা হাতে নিতে বাকশাল প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল।

সে ঘটনাগুলো জনগণ ভুলে যাননি।ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগকে জঙ্গি দল আখ্যা দিয়ে রিজভী বলেন, এই আওয়ামী লীগ ১৯৯১-৯৬ সালে বিএনপি সরকারের সময়ে ১৭৩ দিন হরতাল করেছিল। এছাড়া ২০০১-০৬ সাল সময়ে ১৩০ দিন হরতাল করে। বিএনপিকে এই মাফিয়া সরকার আগুন সন্ত্রাসী বলে অথচ ইতিহাস স্বাক্ষ্য দেয় যে, বাংলাদেশে প্রথম বাসে আগুন দিয়ে মানুষ মারার সংস্কৃতি চালু করে জঙ্গি দল আওয়ামী লীগ।

২০০৪ সালের শুক্রবার ৪ জুন হোটেল শেরাটনের সামনে বিআরটিসির যাত্রীবাহী দ্বিতল বাসে আগুন দিয়ে হত্যা করা হয় ১২ জন যাত্রীকে। পরদিন আওয়ামী লীগের হরতাল ছিলো। শেখ হাসিনার ফুফাতো ভাই শেখ সেলিম নিজের মুখে স্বীকার করেছিলেন যে, উপরের সরাসরি নির্দেশে তৎকালীন যুবলীগের সভাপতি জাহাঙ্গীর কবির নানক ও যুবলীগের সেক্রেটারি মির্জা আজমের পরিকল্পনায় বিটিআরসির যাত্রীবাহী দ্বিতল বাসে গান পাউডার ছিটিয়ে আগুন ধরিয়ে ১২ জন নিরীহ মানুষকে পুড়িয়ে মেরেছিলো যুবলীগ। ওই ঘটনার পরপরই রমনা থানা পুলিশ একটি মামলা করে।

শফিকুল ইসলাম কালু নামে যুবলীগ অফিসের এক পিওনকে গ্রেফতার করে সেও গ্রেফতারের পর স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে নানক, আজম ও সাঈদ খোকনসহ আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতার নাম বলেন যারা এর পরিকল্পনা করেছিল।তিনি বলেন, ২০১৩ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত জনগণের ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠায় বিএনপির শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের সময় আন্দোলন নস্যাৎ করতে ও বিএনপির শান্তিপূর্ণ আন্দোলনকে ভিন্নখাতে নিতে কোটি কোটি টাকা ব্যয় করে আওয়ামী লীগ সরকার নিজেদের লোক ও গোয়েন্দা সংস্থাকে দিয়ে বাসে আগুন লাগিয়ে মানুষ পুড়িয়ে মেরে বিএনপির ওপর দোষ চাপিয়েছে।

রিজভী বলেন, ২০১৭ সালের ১৭ ডিসেম্বর কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি কাদের সিদ্দিকী বলেছিলেন,শেখ হাসিনা বলেন ‘খালেদা জিয়া মানুষ পুড়িয়ে মেরেছে’। মূলত হাসিনাই তার লোক দিয়ে মানুষ পুড়িয়ে মেরেছে।” আগুন সন্ত্রাসের সমস্ত ঘটনায় যে সরকারের লোকেরাই জড়িত সেটির অতীতে অনেক নজির রয়েছে, তাদের লোকেরা সেটি স্বীকার করেছেন।বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, বাসে পেট্রোল বোমা নিক্ষেপে চালকসহ ১১ যাত্রী নিহতের ঘটনায় বরিশাল-৪ আসনের সংসদ সদস্য ও কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক পঙ্কজ দেব নাথ জড়িত।

সংবাদ সম্মেলন করে নিজ দলের নেতার এ আগুন সন্ত্রাসের কথা তুলে ধরেন বরিশাল জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য মইদুল ইসলাম। এরকম বহু প্রমাণ আছে, আগুন সন্ত্রাস করেছে আওয়ামী লীগের লোক, কিন্তু মিথ্যা অপবাদ দিয়ে যাদের জেলে ঢুকিয়েছে, তারা বিএনপির লোক। এরকম আজগুবি ও গায়েবি মামলা কোন সভ্য দেশের সভ্য মানুষ কল্পনাও করে না। নিরপেক্ষ তদন্তের দাবিও শেখ হাসিনার অবৈধ সরকার মানছে না।

তিনি বলেন, ২০১৩, ১৪ ও ১৫ সালে বিএনপির আন্দোলন দমনের নামে আওয়ামী লীগের অগ্নি-সন্ত্রাসে ৫০০ মানুষ নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন প্রায় সাড়ে ৩ হাজার মানুষ। আগুন-সন্ত্রাসের শিকার হয় আগুনে ঝলসানো শরীর নিয়ে পঙ্গুত্ববরণ করেছে অগ্নি-সন্ত্রাসের শিকার হাজারো মানুষ। এই দলের কাছে শেখ হাসিনার কোন বিকল্প নাই। এখন বিরোধী নেতাকর্মীদের জেলে পুরে স্বস্তি পাচ্ছেন না। যারা রাজপথে আছে তাদেরকে আগুনে পুড়িয়ে মারার নির্দেশ দিচ্ছেন।

শেখ হাসিনাকে বিনাভোটে ক্ষমতায় রাখার জন্য বর্তমানে র‌্যাব-পুলিশের ইউনিফর্ম পরে যারা বিরোধী দল ও মতের হাজার হাজার মানুষকে গুম খুন অপহরণ করছেন, তাদের সবার শেখ হাসিনার প্রকৃত স্বরূপ সম্পর্কে জেনে রাখা দরকার। বিএনপির এই শীর্ষনেতা বলেন, ’৯০ এর স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনের সময় শেখ হাসিনা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে হুমকি দিয়ে যে ঘৃনাভাষণ দিয়েছিলেন সেটি আমি বর্তমান প্রজন্মের সামনে তুলে ধরতে চাই। ‘সামরিকতন্ত্র বনাম গণতন্ত্র‘ এই নামে শেখ হাসিনার নিজের লেখা একটি বই প্রকাশিত হয়েছে ১৯৯৪ সালে।

বইয়ের ৫৩ পৃষ্ঠায় দেখা যায়, ৯০ এর স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনের সময় শেখ হাসিনা প্রকাশ্যেই পুলিশ-বিডিআর-সেনাবাহিনীকে হত্যার হুমকি দিয়েছেন। এমনকি হত্যার জন্য তার দলের নেতাকর্মীদেরকে নির্দেশ দিয়ে বলেছেন, লাশের বদলে লাশ চাই।শেখ হাসিনা বলেছেন সেনা ছাউনিতে বসে বন্দুকের নল চেপে পুলিশ, বিডিআর, সেনাবাহিনীকে ব্যবহার করে জনগণের ভোট কেড়ে নেবে আমরা তা মেনে নেবোনা। আমরা তা হতে দেবোনা। পুলিশ, বিডিআর, সেনাবাহিনীকে বলতে চাই, আপনারা জনগণের বিরুদ্ধে দাঁড়াবেন না।

জনগণের বিরুদ্ধে বন্দুক তুলে ধরবেন না। বাংলার জনগণ তাহলে আপনাদের রেহাই দেবে না। সঙ্গে সঙ্গে বলতে চাই, পাকিস্তানি সেনাবাহিনী তাদের পরিবার পরিজন পাকিস্তানে রেখে এসেছিল। কিন্তু আজকের পুলিশ, বিডিআর, সেনাবাহিনীর আত্মীয়স্বজনরা বাংলার গ্রামে-গঞ্জে বাস করে। এদের আত্মীয়স্বজনদের ঠিকানা খুঁজে বের করুন, সতর্ক করে দিন। হুঁশিয়ার করে দিন। আর যদি এদেশের মানুষের বুকের উপর গুলি চালানো হয়, আর যদি এদেশের মানুষের ভোটের অধিকার কেড়ে নেওয়া হয়, আপনাদের প্রতি আমার আহ্বান প্রতিশোধ নেবেন।

লাশের পরিবর্তে লাশ চাই। আমি এই নির্দেশ দিচ্ছি’।তিনি আরও বলেন, শেখ হাসিনা যে অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে সেনাবাহিনী, বিডিআর আর পুলিশকে হত্যার জন্য দলের নেতাকর্মীদের লাশের বদলে লাশ ফেলার নির্দেশ দিয়েছেলেন বর্তমানে তার চেয়েও ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি বিরাজমান। তবুও বিএনপি কখনোই শেখ হাসিনার মতো প্রতিহিংসা এবং জিঘাংসার রাজনীতি কিংবা আইন নিজ হাতে তুলে নেয়ার জন্য কর্মীদের নির্দেশ দেয়নি। অথচ, আওয়ামী লীগ নিজেদের এবং নিজেদের নেত্রীর সন্ত্রাসী চরিত্র ভুলে গিয়ে দেশে একটি অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টির পায়তারায় লিপ্ত হয়েছে।

কারণ তাদের মূল লক্ষ্য হচ্ছে আরেকটি ভুয়া ভোট করে ক্ষমতা দীর্ঘস্থায়ী করার পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা।আওয়ামী লীগ-ছাত্রলীগ অবাধ সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচন করার তাগিদ দেয়ায় মার্কিন রাষ্ট্রদূতকে হত্যার হুমকি দিচ্ছে মন্তব্য করে রিজভী বলেন, এমনকি এই হুমকির বিরুদ্ধে মামলা করতে গেলে খারিজ করে দিচ্ছে আওয়ামী আদালত। চট্টগ্রামের বাঁশখালীর আওয়ামী লীগ নেতা মুজিবুল হক চৌধুরী পিটার হাসকে পেটানোর হুমকি দেন। ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী হাসান ইনানও তাকে জবাই করার হুমকি দেন।

কক্সবাজারের মহেশখালী উপজেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি ও হোয়ানক ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ফরিদুল আলম পিটার হাসকে খুন করার হুমকি দিচ্ছেন। অথচ হুমকিদাতাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না। বিদেশিরাও আছেন চরম আতঙ্কে। এর আগেও আমেরিকান রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকাটের উপরে হামলা হয়েছিল, সেটার কোনো বিচার আজও হয় নাই। বাংলাদেশে শুধু বাংলাদেশিরা নয় বিদেশিরাও ঘৃণাদূষিত বার্তাবরণের মধ্যে বসবাস করছে।’

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here