চরফ্যাশনে পালিয়ে বেরাচ্ছে বিএনপির নেতা-কর্মীরা, উদ্বেগ উৎকণ্ঠায় পরিবার

0
চরফ্যাশনে পালিয়ে বেরাচ্ছে বিএনপির নেতা-কর্মীরা, উদ্বেগ উৎকণ্ঠায় পরিবার

প্রেসনিউজ২৪ডটকমঃ ভোলা প্রতিনিধি: ভোলার চরফ্যাশন উপজেলা বিএনপি ও অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের প্রায় ১০ হাজার নেতাকর্মী ঘর-বাড়ি ছাড়া। গত ২৮ অক্টোবর ঢাকার মহাসমাবেশ থেকে ফিরে পুলিশি হয়রানি ও আ’লীগের হামলা থেকে বাঁচতে, মামলা ও হামলার ভয়ে কেউ আর বাড়ি-ঘরে থাকছেন না। আর কোনো নেতাকর্মীকে দেখা যাচ্ছে না চলমান অবরোধ কর্মসূচিতে।

চরফ্যাশন উপজেলা বিএনপির একটি নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, গত ২৮ অক্টোবর ঢাকার মহাসমাবেশ যোগ দিতে চরফ্যাশন উপজেলা বিএনপি, পৌর বিএনপি, ইউনিয়ন বিএনপি ও বিভিন্ন ওয়ার্ড বিএনপির নেতাকর্মীসহ ছাত্রদল, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, শ্রমিক দল, ওলামা দল, জিয়া পরিষদ, কৃষক দল, তাঁতী দল ও মহিলা দলের কয়েক হাজার নেতাকর্মীরা ঢাকায় যান। ওই মহাসমাবেশে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও বিএনপি নেতাকর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষে পুলিশ ও বিএনপি কর্মী নিহত অনেকে আহত হওয়ার জেরে মহাসমাবেশটি পণ্ড হয়ে যায়।

এরপর নেতাকর্মীরা এলাকায় আসলে পুলিশি গ্রেপ্তার ও আ’লীগের কর্মী সমর্থকদের হামলা ও মারধরের শিকার হন। এখন তারা পুলিশি গ্রেপ্তার ও আ’লীগের কর্মী সমর্থকদের হামলা থেকে বাচঁতে যে যার মতো করে বাড়ি-ঘর ছেড়ে আত্মগোপনে রয়েছেন। অনেকে আবার ঢাকায় ও বিভিন্ন এলাকায় আত্মীয়স্বজনদের কাছে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন। ঢাকার ওই ঘটনার রেশ ধরে গত এক সপ্তাহে চরফ্যাশন উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় পুলিশ বিএনপি, যুবদল ও ছাত্রদল নেতাকর্মীদের বাসায়, বাসায় অভিযান পরিচালনা করে।

ওই অভিযানে পুলিশ বিএনপি, যুবদল ও ছাত্রদলের প্রায় ২০ জন নেতাকর্মীকে আটক করে মিথ্যা, বানোয়াট ও গায়েবী মামলায় আসামী করে আদালতে সোপর্দ করেছেন। পুলিশের অব্যাহত এমন অভিযানের ও আ’লীগ কর্মী সমর্থকদের হামলার কথা নেতাকর্মীদের মধ্যে জানাজানি হলে তারা পুলিশি হয়রানি ও আ’লীগের হামলা থেকে বাঁচতে, ঘর-বাড়ি ছাড়া হয়ে অন্যত্র নিরাপদে অবস্থান করছেন। এমনকি বিএনপির ডাকা চলমান সড়ক, নৌ ও রেলপথ অবরোধ কর্মসূচিতে কোনো নেতাকর্মীদের মাঠে দেখা যাচ্ছে না। দলীয় কার্যালয়টিও রয়েছে বদ্ধ।

উপজেলার দক্ষিণ আইচা থানার চরমানিকা ইউনিয়ন বিএনপির এক নেতা বলেন, ঢাকার মহাসমাবেশ থেকে ফিরে পুলিশি হয়রানি ও আ’লীগের হামলা থেকে বাঁচতে, মামলা ও হামলা ভয়ে এখন আর বাড়িতে থাকছি না। অন্যত্র অবস্থান করছি, কবে বাড়ি-ঘরে যেতে পারব তাও বলতে পারছি না। দক্ষিণ আইচা বাজারে একাধিক বিএনপির নেতাকর্মীদের মারধর এবং স্কুল ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা, ভাংচুর ও লুটপাটের অভিযোগ রয়েছে স্থানীয় আ’লীগের কর্মী সমর্থকরা বিরুদ্ধে। উপজেলার শশীভূশণ থানার রসুলপুর ইউনিয়র বিএনপি নেতা হাজী রফিকুল ইসলাম বেপারী বলেন, মহাসমাবেশ থেকে পুলিশ হয়রানী ও আ’লীগের হামলা ভয়ে এখনো বাড়ি-ঘরে আসিনি।

যুবদলের একাধিক নেতা বলেন, ঢাকার মহাসমাবেশ থেকে ফিরে পুলিশি হয়রানি ও আ’লীগের হামলা থেকে বাঁচতে, মামলা ও হামলা ভয়ে এখন আর বাড়ি-ঘরে থাকছি না। অন্যত্র অবস্থান করছি, কবে বাড়ি-ঘরে যেতে পারব তাও বলতে পারছি না। গত এক সপ্তাহে শশীভূষণে বিএনপির ৪ নেতাকর্মীকে পুলিশ আটক করে মিথ্যা মামলায় আদালতে পঠিয়েছে। এবং আ’লীগের হামলায় আহত হয়েছেন ৫ নেতাকর্মী। এদিকে উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠায় রয়েছেন এসব নেতাকর্মীদের পরিবারগুলো। একই কথা বলছেন উপজেলার দুলারহাট থানার বিএনপির একাধিক নেতাকর্মীরা।

চরফ্যাশন উপজেলা বিএনপির ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক ও উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক সিকদার হুমায়ুন কবির বলেন, গত ২ নভেম্বর চরফ্যাশনে একটি মটরসাইকেল পোরানোর নাটক সাজিয়ে বিএনপি জামায়াতের ১৩ নেতাকর্মীর নামে একটি মিথ্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। এবং গত ৪ নভেম্বর মধ্য রাতে চরফ্যাশন বাস টার্মিনাল সংলগ্ন ভোলা-চরফ্যাশন আঞ্চলিক সড়কের উপর দাঁড়িয়ে থাকা একটি যাত্রীবাহি বাসে আগুন দেওয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ন আহ্বায়ক সহ বিএনপির ৪ নেতাকর্র্মীকে আটক করে ওই গাড়ি পোরানো মিথ্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে সোপর্দ করেছে পুলিশ।

আমরা এসব মিথ্যা, বানোয়াট ও গায়াবী মামলা ও বিএনপির নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার এবং হামলা চালিয়ে মারধরের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। চরফ্যাশন উপজেলা যুবদলের আহ্বায়ক মো. শহিদুল ইসলাম প্রিন্স মহাজন বলেন, বাড়ি-ঘরে থাকলে পুলিশ আমাদের গ্রেপ্তার করে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করবে। ওই কারণে এখন আর আমরা বাড়ি-ঘরে থাকি না। যুবদলের সব পর্যায়ের নেতাকর্মীদের বাড়িতে না থেকে নিরাপদে অবস্থান করে দলীয় কার্যক্রমে অংশ নিতে বলেছি। চরফ্যাশন উপজেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক মো. আরিফ ফরাজী ও সদস্য সচিব কাজী অনিক জানান, আমাদের অনেক নেতাকর্মীরা ঢাকার মহাসমাবেশ থেকে চরফ্যাশন ফিরে পুলিশি গ্রেপ্তার ও আ’লীগ কর্মী সমর্থকদের হামলার কারণে বাড়িতে না থেকে অন্যত্র অবস্থান করছে।

প্রতিদিনই পুলিশ কোনো না কোনো নেতাকর্মীদের বাড়িতে হানা দিচ্ছে তাদের গ্রেপ্তার করার জন্য। জানি না পুলিশের এমন হয়রানি কতদিন চলবে। এছাড়া স্কুল, কলেজ, শহর কিংবা গ্রামের বাজারগুলোতে নেতাকর্মীরা উঠতে পারছেনা আ’লীগের কর্মী সমর্থকদের হামলার ভয়ে। গত এক সপ্তাহে চরফ্যাশন উপজেলায় বিএনপির শতাধিক নেতাকর্মীরা মারধরের শিকার হয়েছে আ’লীগের কর্মী সমর্থকদের হাতে। হামলা ,ভাংচুর ও লুটপাট করেছেন বহু ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে।

চরফ্যাশন উপজেলা বিএনপির সহ-সভাপতি মো. হেলাল উদ্দিন টিপু এ বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, ঢাকার মহাসমাবেশ থেকে ফিরে পুলিশি হয়রানি ও আ’লীগের হামলা থেকে বাঁচতে, মামলা ও হামলা ভয়ে প্রায় সব পর্যায়ের নেতাকর্মীরা এখন পর্যন্ত বাড়ি-ঘরে থাকতে পারছেন না। পুলিশ গত এক সপ্তাহে চরফ্যাশনে প্রায় ২০ জন নেতাকর্মীকে আটক করে মিথ্যা মামলা দিয়ে আদালতে পাঠিয়েছে। এবং আ’লীগের কর্মী সমর্থকরা হামলায় চালিয়ে প্রায় শতাধিক নেতাকর্মীকে আহত বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠা হালমা,ভাংচুর ও লুটপাট করেছে। সরকার আমাদের যতই হয়রানি করুক না কেন, আমরা রাজপথে ছিলাম, এখনো আছি। এই ফ্যাসিবাদী সরকারের পতন না ঘটিয়ে ঘরে ফিরে যাব না।

চলমান অবরোধে আপনাদের কোনো পর্যায়ের নেতাকর্মীকে মাঠে দেখা যাচ্ছে না এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি আরো বলেন, আমরা মাঠেই আছি। চরফ্যাশন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সাখাওয়াত হোসেন বলেন, আমরা কাউকে অহেতুক হয়রানি করছি না। যে সকল বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা ও অভিযোগ রয়েছে তাদেরকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। এ পর্যন্ত কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠিয়েছি তারা বিএনপির কর্মী কিনা তা জানা নেই।

এ বিষয়ে সহকারী পুলিশ সুপার (চরফ্যাশন সার্কেল) মো. মেহেদী হাসান বলেন, পুলিশ কোন দল বা ব্যক্তির বিরুদ্ধে নয়। ওয়ারেন্ট ও বিভিন্ন মামলার আসামী গ্রেপ্তারে পুলিশের প্রতিদিনের রুটিন কাজ। পুলিশ অভিযোগের ভিত্তিতে আটক করেছেন। আ’লীগ নেতাকর্মীদের হামলার বিষয়ে তিনি বলেন, এমন অভিযোগ কোন থানায় দায়ের করা হয়নি। অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে বলেও এই কর্মকর্তা জানান।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here