হিমুর প্রেমিক জিয়াউদ্দিন রাফি গ্রেফতার

0
হিমুর প্রেমিক জিয়াউদ্দিন রাফি গ্রেফতার

প্রেসনিউজ২৪ডটকমঃ রাজধানীর উত্তরায় নিজ বাসায় অভিনেত্রী হুমায়রা হিমুর আত্মহত্যার ঘটনায় তার প্রেমিক মোহাম্মদ জিয়াউদ্দিন রাফিকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব-১। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে, জুয়া নিয়ে বাক্‌বিতণ্ডার জেরে প্রেমিকের সামনেই ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেন তিনি। রাফিকে জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে র‌্যাব জানায়, অভিনেত্রী হিমু অনলাইন জুয়ায় আসক্ত ছিলেন।

গত ৪ মাসে প্রায় ২১ লাখ টাকাসহ ২-৩ বছরে অন্তত ৪০ লাখ টাকা খুইয়েছেন। এ নিয়ে বাক্‌বিতণ্ডার জেরে আগেও প্রেমিককে ৩-৪ বার আত্মহত্যার হুমকি দেন তিনি। বৃহস্পতিবারও বাক্‌বিতণ্ডার এক পর্যায়ে হিমু আত্মহত্যা করবেন বললেও রাফি পাত্তা দেননি। এরপর রাফির সামনেই ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেন হিমু।শুক্রবার (৩ নভেম্বর) সন্ধ্যায় রাজধানীর কারওয়ানবাজার র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান র‌্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।

তিনি জানান, হিমু আত্মহত্যার ঘটনায় তার খালা বাদী হয়ে জিয়াউদ্দিন রাফিকে একমাত্র আসামি করে আত্মহত্যার প্ররোচনার অভিযোগ এনে রাজধানীর উত্তরা পশ্চিম থানায় মামলা করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে শুক্রবার (৩ নভেম্বর) রাজধানীর বংশাল থেকে রাফিকে গ্রেফতার করা হয়।রাফিকে প্রাথমিক জিজ্ঞসাবাদে জানা গেছে, ২০১৪ সালে হিমুর খালাতো বোনের সঙ্গে রাফির বিয়ে হয়েছিল এবং কিছুদিনের মধ্যে তাদের বিচ্ছেদ হয়। পারিবারিক আত্মীয়ের সম্পর্কের সুবাদে রাফির সঙ্গে হিমুর পরিচয় হয়। খালাতো বোনের সঙ্গে বিচ্ছেদ হলেও হিমু আর রাফির মধ্যে নিয়মিত যোগাযোগ ছিল।

হিমুর ২০০০ সালে বিয়ে হয় ও ২০০৫ সালে বিচ্ছেদ হয়। পরে তৌফিক নামে একজনের সুসম্পর্ক হয় হিমুর। তাদের মধ্যে বেশ ভালো সম্পর্ক ছিল। তবে ২০১৭-১৮ সালে তৌফিক সুইসাইড করেন, এরপর হিমু মানসিকভাবে বেশ ভেঙে পড়েন। এরপর থেকেই রাফির সঙ্গে হিমুর সুসম্পর্ক হয়।২০২০ সালে রাফি অন্যত্র বিয়ে করলেও হিমুর সঙ্গে বিভিন্নভাবে নিয়মিত যোগাযোগ বজায় রাখে। ৪ মাস আগে থেকে তাদের মধ্যে ঘনিষ্ট সম্পর্ক তৈরি হয়।

এক পর্যায়ে রাফি ভিকটিমকে বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে নিয়মিত তার বাসায় যাতায়াত শুরু করেন।গত ২-৩ বছর ধরে হিমু বিগো লাইভ অ্যাপে অনলাইন জুয়ায় আসক্ত হয়ে বিপুল পরিমাণ অর্থ অপচয় করেছে বলে রাফি জানান। এসব বিষয় নিয়ে বিভিন্ন সময় তাদের মধ্যে বাক্‌বিতণ্ডা ও মনোমালিন্য হতো।রাফি জানান, বৃহস্পতিবার (২ নভেম্বর) বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে জিয়া হিমুর উত্তরার বাসায় যান। পরে জুয়াসহ নানা বিষয় নিয়ে তার সঙ্গে বাক্‌বিতণ্ডার এক পর্যায়ে হিমু বাসার মালামাল ভাঙচুর করে।

পরে রুমের বাইরে থেকে একটি মই এনে সিলিং ফ্যান ঝুলানোর হুকে আগে থেকেই বেঁধে রাখা প্লাস্টিকের রশিতে ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করবে বলে তাকে জানায়।জিজ্ঞাসাবাদে রাফি জানান, হিমু আগেও ৩-৪ বার আত্মহত্যা করবে বলে জানালেও সে পরবর্তীতে আত্মহত্যা করেনি। এবারও আগের মতো আত্মহত্যা করার ব্যাপারে জানালে সে বিষয়টি গুরুত্ব দেয়নি। কিন্তু কিছুক্ষণ পর সে দেখে হিমু সত্যি সত্যি ফাঁস দিয়েছে। তখন সে হিমুকে নামানোর চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়।

এ সময় রাফি পাশের রুমে থাকা হিমুর মেকআপ আর্টিস্ট মিহিরকে ডেকে আনে। পরবর্তীতে মিহির রান্নাঘর থেকে একটি বটি এনে রশি কেটে তাকে নিচে নামায়। পরবর্তীতে রাফি, বাসার দারোয়ান এবং মিহিরের সহায়তায় হিমুকে উত্তরার একটি হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। চিকিৎসক সুইসাইড কেস বলে পুলিশ ডাকার কথা যখন বলেন তখনই হিমুর দুটি মোবাইল ও হিমুর গাড়ি নিয়ে পালিয়ে যান রাফি।

খন্দকার আল মঈন জানান, মোহাম্মদ জিয়াউদ্দিন রাফি ‘ও’ লেভেল শেষ করে টেক্সটাইল কেমিক্যালের ব্যবসা করতেন। হিমুর গাড়ি নিয়ে পালিয়ে গিয়ে তার উত্তরার বাসার পার্কিংয়ে রেখে দেয়। এরপর মোবাইল ২টি বিক্রির উদ্দেশ্যে বংশাল এলাকায় যায়। সেখান থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়।তিনি আরো বলেন, মিহির মেকআপম্যান হিসেবে হিমুর বাসাতেই থাকতেন। ২০১৮ সালের ২২ মে অভিনেত্রী তাজিনকেও হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছিলেন, তাজিন পরে মারা যান।

আমরা মিহিরের বিষয়ে কাজ করছি। যেহেতু মামলায় আসামি করা হয়েছে রাফিকে, তাই তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এছাড়া মিহির এ ঘটনা সম্পর্কে কতটা জানতেন। তার সংশ্লিষ্টতা আছে কি-না সেগুলোও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।র‌্যাবের এ কর্মকর্তা বলেন, মৃত্যুর কারণ পরিপূর্ণ তদন্তের পর জানা যাবে। ঘটনার সময় রাফি হিমুর রুমেই খাটে বসা ছিলেন।

আগেও ৩-৪ বার আত্মহত্যার হুমকি দেন বলে এবার পাত্তা দেননি রাফি। এর মধ্যেই ‘আমি কি মরতে পারি না, দেখ পারি কি না’ বলে হিমু দড়িতে ঝুলে পড়েন। রাফি ও হিমুর মধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মেসেজ চালাচালির প্রমাণ মিলেছে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here