প্রেসনিউজ২৪ডটকমঃ বন্দর সংবাদদাতা: নারায়ণগঞ্জের বন্দরের চিহ্নিত দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী সিফাত ওরফে কাটা সিফাত বাহিনী দিন দিন ভয়ঙ্কর হয়ে উঠছে। রীতিমত ২১ নং ওয়ার্ডের শাহী মসজিদ জুড়ে অপরাধের রাম রাজত্ব কায়েম করে চলেছে। ডাকাতি, চাঁদাবাজি, ছিনতাইসহ নানা অপকর্মের হোতা সিফাত বাহিনী। এই বাহিনী বন্দরবাসীর কাছে এক আতংকের নাম। বাহিনীর প্রধান কাটা সিফাতের বাড়ি বন্দর থানার ২১নং ওয়ার্ডের শাহীমসজিদ এলাকায়। তার পিতা শেখ শাহীন একজন পেশাদার মাদক ব্যবসায়ী।
কতিপয় সন্ত্রাসী কর্মকান্ড থেকে শুরু করে এমন কোন অর্পকম নেই যা কাটা সিফাত ও তার সন্ত্রাসী বাহিনী করে না। সন্ত্রাসী সিফাত ও তার বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে কেউ কথা বলতে সাহস করে না। স্থানীয় প্রশাসনের রহস্যজনক নিরবতার সুযোগে সিফাত বাহিনী ভয়ংকর থেকে আরো হিংস্র হয়ে উঠছে। নিরীহ এলাকাবাসী ভয়ংকর কাটা সিফাত বাহিনীর কবল থেকে মুক্তি পেতে জেলা পুলিশ সুপার, র্যাব-১১’র অধিনায়ক ও নারায়ণগঞ্জ জেলা ডিবি পুলিশের হস্তক্ষেপ কামনা করছেন।
কাটা সিফাত বাহিনীর অপরাধের খন্ড চিত্র: সবশেষ ১৭ অক্টোবর রাত ৮টার দিকে বন্দর শাহী মসজিদ এলাকায় সিফাত বাহিনীর হামলার শিকার হয়েছে নারায়ণগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি স্বপন (৩৫)। তাকে এলোপাথারী পিটিয়ে স্বর্নের আংটি, মোবাইল ও সঙ্গে থাকা নগদ ৭৫ হাজার ২৭০ টাকা ছিনিয়ে নেয়। এ ঘটনায় ভূক্তভোগী আহত ছাত্রলীগ নেতা স্বপন বাদী হয়ে ঘটনার দিন রাতে বন্দর থানায় সন্ত্রাসী কাটা সিফাতের নাম উল্লেখ করে আরো ২০/২২ জনকে অজ্ঞাত নামা আসামী করে থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।
গত ২৭ সেপ্টেম্বর বিকালে কলাগাছিয়া ইউনিয়ন যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম জুম্মানকে অজ্ঞাতনামা একটি নাম্বার (০১৬৩৪৩৬৮৫৪৪) থেকে ডিস লাইনের কথা বলে বাড়ি থেকে ডেকে পার্শ্ববর্তী মসজিদ সংলগ্ন পশ্চিম কল্যান্দী বালুর মাঠে নেয়। জুম্মান সেখানে যাওয়ার পর পরই কাটা সিফাত, রিং শাহিন, চিকনা যুবায়েরগংরা দেশীয় অস্ত্র কুড়াল, রামদা, চাপাতি, সামুরাই, হকিষ্টিক ও কাঠের স্ট্যাম্প দিয়ে হত্যার উদ্দেশ্যে এলোপাতাড়ি পিটিয়ে এবং কুপিয়ে তাকে জখম করে।
এ ঘটনায় ১ সেপ্টেম্বর রাতে আহত যুবলীগ নেতার মেয়ে সানজিদা বেগম বাদী হয়ে ৮ জনের নাম উল্লেখ করে বন্দর থানায় মামলা দায়ের করেন। যার মামলা নং- ৪(৯)২৩।১৬ মে রাতে বন্দর থানার এসআই আহাদুজ্জামানসহ সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে নবীগঞ্জ বাসস্ট্যান্ড এলাকায় অবস্থানকালে লোক মারফতে জানতে পারে ডাকাত দল ডাকাতির করার উদ্দেশ্যে বন্দর থানার নবীগঞ্জ কদমতলীস্থ স্বাধীনতা রাজ গার্মেন্টস ফ্যাক্টরীর সামনে জনৈক শাহনেওয়াজ মিয়ার ভাড়াকৃত বাড়ির সামনে বিভিন্ন প্রকার দেশীয় অস্ত্রশস্ত্রসহ অবস্থান করছে।
প্রাপ্ত সংবাদটি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করে দ্রুত ঘটনাস্থলে রওনা হয়। ওই সময় ডাকাত দল পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে উল্লেখিত রুম থেকে পালানোর চেষ্টাকালে দেশীয় অস্ত্রশস্ত্রসহ ৮ ডাকাতকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হলেও কৌশলে পালিয়ে যায় আলোচিত সন্ত্রাসী কাটা সিফাত। পরে পলাতক কাটা সিফাতসহ ৯ ডাকাতের বিরুদ্ধে পুলিশ মামলা করেন। মামলার কারণে বেশ কিছুদিন পালিয়ে বেড়ালেও বর্তমানে আবারও তার অপতৎপরতা শুরু হয়েছে।
এলাকায় ফিরে এসেই কাটা সিফাত ও তার সাঙ্গ-পাঙ্গরা নিজ এলাকা ২১নং ওয়ার্ডের বন্দর শাহী মসজিদ জুড়ে রাম-রাজত্ব কায়েম করে চলেছে। গত কয়েকদিনের ব্যবধানে কাট সিফাত ও তার সহযোগীরা মিলে এলাকায় একের পর এক চাঁদাবাজী, ছিনতাই ও রাহাজানিসহ নানা প্রকার অপকর্ম করে বেড়াচ্ছে। দিনের পর দিন কাটা সিফাত বাহিনীর তান্ডব বেড়ে যাওয়ায় ২১নং ওয়ার্ডের বন্দর শাহী মসজিদ, খালপাড়, বউ বাজার, হাফেজীবাগ কলোনী, নূরবাগ, সালেহনগর, বাড়ইপাড়া ও তার আশ পাশের এলাকার নিরীহ জন সাধারণকে আতংকের মধ্যে দিন কাটাতে হচ্ছে।
এদের দোর্দন্ড প্রতাপের কারণে এলাকার স্কুল-কলেজের ছাত্রীরাও চরম নিরাপত্তাহীণ শংকার মধ্যে দিন কাটাচ্ছে।বন্দর থানার দায়েরকৃত একটি মামলার বাদিনী লতা বেগম জানান, কাটা সিফাত আমার ছেলে মুরগী ব্যবসায়ী রহিম ও তার কর্মচারিকে চলতি বছরের ১৩ মার্চ দিন দুপুরে হত্যার উদ্দেশ্যে কুপিয়ে জখম করে মুরগী বিক্রির নগদ ৮৭ হাজার ৬০০ টাকা ও ২টি এনড্রয়েড মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নিয়ে যায়।গত ২৪ জানুয়ারী মঙ্গলবার সকাল ১০টায় নাসির আলমের ছেলে থান কাপড় ব্যবসায়ী রতন (৩০) তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে যাওয়ার পথে শাহী মসজিদ এলাকায় অস্ত্র ঠেকিয়ে নগদ ১ লাখ টাকা ছিনিয়ে নেয় সিফাত বাহিনী।
এ ঘটনায় ব্যবসায়ী রতন বাদী হয়ে বন্দর থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। ২১ জানুয়ারী শনিবার দিবাগত রাত ১১টায় কাটা সিফাত বাহিনী অস্ত্র-সস্ত্রে সজ্জিত হয়ে বন্দর শাহী মসজিদ ও সালেহনগর এলাকায় মহড়া দেয় এবং ককটেল ফাটিয়ে আতংক সৃষ্টি করে। ১৪ জানুয়ারি সালেহনগর রোড এলাকার বাসিন্দা নূর ইসলাম মিয়ার ছেলে রাসেলকে পল্লী বিদ্যুত অফিসের প্রধান ফটকের সামনে থেকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে তুলে নিয়ে ৩০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করে। প্রাণ রক্ষার্থে রাসেল তাদেরকে ১৫ হাজার টাকা দিয়ে মুক্তি পায়। ২০২২ সালের ১৬ আগষ্ট শেখ সিফাত বাহিনী শাহী মসজিদ এলাকার রিফাত, সাজ্জাদ ও বাধনসহ বেশ কয়েকজনকে কুপিয়ে হত্যা চেষ্টা করে।
ওই ঘটনায় বন্দর থানায় লিখিত অভিযোগ দাখিল হলেও সিফাত বাহিনীর পেছনে একজন গডফাদারের শেল্টার থাকায় মামলা নেয়নি পুলিশ। ১২ সেপ্টেম্বর রাতে কাটা সিফাত বাহিনী বাড়ইপাড়া এলাকার নিরীহ ইউনুছ মিয়ার ছেলে হোসিয়ারি শ্রমিক রুহিত (২১)সহ ৪জনকে হত্যার উদ্দেশ্যে নৃশংসভাবে কোপায়। কিশোর গ্যাং এর লিডার কাটা সিফাতের নেতৃত্বে মাদকব্যবসায়ী সাখাওয়াত হোসেন পিংকী, আল আমিন, মাদক ব্যবসায়ী কালা জুম্মান, ফয়সাল, রাব্বি, ইয়াছিন শাহ, আলম, বাবু শিকদার, পাভেল খান ও আশরাফুল ওরফে কালুসহ অজ্ঞাত নামা ৫/৬ জন রুহিতকে হত্যার উদ্দেশ্যে ধারালো অস্ত্র দিয়ে বেদম ভাবে কুপিয়ে গুরুত্বর জখম করে।
ওই সময় আহতের চিৎকার শুনে তার পিতা ইউনুস, ছোটভাই রোহান, কাশেম ও জাহিদুল তাকে বাঁচাতে এগিয়ে আসলে হামলাকারিরা তাদেরকেও কুপিয়ে জখম করে। আহতদের মধ্যে রুহিতের মুখের মাড়ি কেটে ৪টি দাঁত বেড়িয়ে পড়ে এবং সেখানে ২৬৪টি সেলাই দেয়া হয়।রুহিতের পিতা ইউনূছ মিয়া বাদী হয়ে থানায় মামলা দায়ের করেন। যার নং ৪৫(০৯)২২ইং। মামলা দায়ের করলেও তা উঠিয়ে নেয়ার জন্য সন্ত্রাসীরা ইউনূছ মিয়াসহ তার পরিবারের সদস্যদেরকে হত্যার হুমকি দেয় ।
১৯ সেপ্টেম্বর আহত রুহিতের বাবা ইউনূছ মিয়া ও মা রুনা বেগম সাংবাদিকদের জানান, বন্দর শাহী মসজিদ এলাকার ইয়াবা শাহিনের ছেলে শেখ সিফাত ওরফে কাটা সিফাত বাহিনী দীর্ঘ দিন ধরেই এলাকার নিরীহ লোকজনকে জিম্মি করে জোর-জুলুম করে আসছে। তাদের এই বাহিনীটি এলাকায় সকল অপরাধের নেতৃত্বে দেয়। রুনা বেগম জানান, আমার ছেলে সামান্য একজন দিনমজুর।
একটি গার্মেন্টসে কার্টিংয়ের কাজ করে। আমার ছেলের উপর হামলা চালায় সিফাত বাহিনী। তাকে বাঁচাতে যাওয়ায় আমার স্বামী এবং ভগ্নিপতিকেও ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে জখম করে। মামলা করার পর মামলা তুলে নেয়ার জন্য উল্টো হুমকি দেয় সিফাত বাহিনী। তারা সব সময় অস্ত্র নিয়ে ঘোরাফেরা করে। কাটা সিফাত বাহিনীর প্রত্যেকটা সদস্যই ভয়ংকর। তাদের কাজই মানুষ খুন-খারাবি করা।
সিফাত বাহিনীর সদস্য যারা:ভুক্তভোগি ও এলাকাবাসীর তথ্যমতে, সিফাত বাহিনীর অন্যতম সদস্যরা হলো- সালেহনগর বাংলাদেশ পাড়ার আক্কা মিয়ারছেলে আশরাফুল ওরফে কালু, শাহ আলম মিয়ার ছেলে রাব্বী, ইয়াছিন, এনদা মিয়ার ছেলে ফয়সাল, নূর হোসেনের ছেলে পিংকি এবং সিফাত (২), রিফাত, জুম্মন, রাতুল, পাভেল, সেলিম ও শিপন। সব সময় এরা অস্ত্র-সস্ত্র নিয়ে মহড়া দেয়। তাদের মহড়ার কারণে সালেহনগর, শাহীমসজিদ, খালপাড়া, নূরবাগ, হাফেজীবাগ কলোনী, বাংলাদেশ পাড়া, বাড়ইপাড়া ও বাবুপাড়া এলাকার বাসিন্দারা প্রতিনিয়তই আতংকে দিন কাটায়।
এ ব্যাপারে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জনৈক বাসিন্দা জানান, সিফাত ওরফে কাটা সিফাত বাহিনী অত্যন্ত ভয়ংকর প্রকৃতির। তাদের বিশাল একটি বাহিনী রয়েছে। প্রতিদিন তারা এলাকার সহজ-সরল মানুষকে জিম্মি করে টাকা-পয়সা ও মালামাল হাতিয়ে নেয়। এলাকার ব্যবসায়ী ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান হতে নিয়মিত চাঁদাবাজী থেকে শুরু করে সকল অপকর্মের নেতৃত্ব দিয়ে থাকে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এলাকাবাসী গনমাধ্যমকে জানিয়েছে কথিত এক সাংবাদিকের শ্লেটারে তার ভাতিজা সরকারি দলের নেতাদের উপর একের পর এক সন্ত্রাসী হামলা চালিয়ে পার পেয়ে যাচ্ছে। বন্দরে আলোচিত সন্ত্রাসী কাটা সিফাতের বিরুদ্ধে ডাকাতি ও মারামারিসহ সন্ত্রাসী কর্মকান্ডসহ বিভিন্ন অপরাধে অর্ধ ডজন মামলা রয়েছে।
প্রসঙ্গত: ভুক্তভোগি কারো অভিযোগে ভিত্তিতে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হলে সন্ত্রাসী সিফাত বাহিনীর সদস্যরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিজেরা এবং ফেক আইডি দিয়ে প্রকাশিত সংবাদের নিচে মন্তব্য করে ভুয়া নিউজ, সিফাত ভালো ছেলে। মোটকথা ‘ভুতের মুখে রাম রাম।