হিন্দু বাড়িতে বাড়িতে পূজার প্রস্তুতি, আতিথেয়তায় মনোযোগী নারীরা

0
হিন্দু বাড়িতে বাড়িতে পূজার প্রস্তুতি, আতিথেয়তায় মনোযোগী নারীরা

প্রেসনিউজ২৪ডটকমঃ: শরৎকাল সনাতন ধর্মীদের উৎসবের ঋতুরাজ। আর ধর্মীয় বেশিভাগ উৎসব পালিত হয় ভাদ্র-আশ্বিন মাসে। প্রতি সপ্তাহের রয়েছে একটি পূজো বা উৎসব। ষষ্ঠ তিথির মহালয়ার মধ্যদিয়ে দুর্গাপূজা শুরু হয়ে দশম তিথিতে বিসর্জন হবে।হিন্দু ধর্মের পুঞ্জিকা মতে, ভাদ্র মাসে গণেশ চতুর্থী, মধু পূর্ণিমা, তীজ, কৃষ্ণজন্মাষ্টমী, আশ্বিন মাসে নবরাত্রি, দুর্গাপূজা, বিজয়া দশমী, কোজাগরী লক্ষীপূজা, শারদ পূর্ণিমা, কারবা চৌথ, কালীপূজা ও দিপাবলী।

হিন্দু ধর্মে বিশ্বাসীদের বুদ্ধি, সমৃদ্ধি আর সৌভাগ্যের দেবতা গণেশের শিব ও পাবর্তী উরশে জন্ম হয়। আর তার পৃথিবীতে আসা ভক্তরা বিশ্বাস করেন এই দিন গণেশ মনোবাঞ্ছা পূর্ণ করতে মর্ত্যে অবতীর্ণ হন।দিপাবলী বা দেওয়ালী দিয়ে কালকে শেষ বিদায় জানায়। ‘অন্ধাকারের ওপর আলোর বিজয়, মন্দের ওপর ভালোর এবং অজ্ঞতার ওপর জ্ঞানের প্রতীক’। এই দিন সব হিন্দুর বাড়িতে নানা ধরনের অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। হিন্দুশাস্ত্র মতে দুর্গাপূজা, শরতে দেবতারা ঘুমিয়ে থাকে তাহলে শরতে দুর্গাপূজা।

দুর্গার সাথে কেন অন্যান্য দেব-দেবীর প্রতিমা থাকেন? দুর্গাকে পূজার রীতি শুরু হয় রাম ও রাবণের যুদ্ধের সময় থেকে এর পরে কৃষ্ণ বৈকুন্ঠের বৃন্দাবনের মহারাসমণ্ডলে পূজা করেন এরপর মধু ও কৈটভ নামে দুইজন অসুরের ভয়ে ব্রহ্মা দুর্গাকে পূজা করে। ত্রিপুর নামে এক অসুরের সঙ্গে যুদ্ধ করতে করতে শিব বিপদে পড়ে দুর্গাপূজার আয়োজন করে। এটি ছিল অনুষ্ঠানিকতা তৃতীয় দুর্গাপূজা। চতুর্থ দুর্গাপূজাটি অনুষ্ঠিত হয় দুর্বাসা মুনির অভিশাপে লক্ষ্মীকে হারিয়ে ইন্দ্র আয়োজন করেন।এরপর থেকেই হিন্দু ধর্মের মুনিঋষিরা দুর্গাপূজার প্রচলন শুরু করে।

নানা দেশে আয়োজিত হয়ে থাকে দেবী দুর্গার পূজা।মণ্ডপে গেলেই দেখা মিলে দুর্গার সাথে স-পরিবারের মূর্তি, দুর্গার সিংহবাহিনী, মহিষ সুর-মর্দিনী, মুকুটের উপরে শিবের ছোট মুখ, দেবীর ডানপাশে ওপরে দেবী লক্ষ্মী ও নিচে গণেশ আর বামপাশে ওপরে দেবী সরস্বতী, নিচে কার্তিক। এই মূর্তি প্রচলন শুরু হয় ১৬১০ সালে কলকাতার সাবর্ণ রায় চৌধুরী পরিবার থেকে যুগ যুগ ধরে চলে আসছে দুর্গাপূজার রীতি।

মণ্ডপ সাজাতে ব্যস্ত ভক্তরাপ্রধান ধর্মীয় উৎসব দিপাবলী হলেও সবার মাঝে বড় উৎসব হিসেবে পরিচিতি হয়েছে উঠেছে দেবী দুর্গা। দেবীকে বরণ করতে মণ্ডপে মণ্ডপে চলে আয়োজনের প্রতিযোগিতা। আর উৎসবকে ফসল করতে ও ধর্মের অনুসারীরা মায়ের আশির্বাদ পেতে ভক্তরা মণ্ডপের গেটের দুপাশে ঝাড় বাতি, পূজার জন্য মাটির হাড়ি-পাতিল, প্রদীপের শিখা জ্বালাতে মাটির চটি/ডিয়ার, ধুপের জন্য ধুনো, কাদিতে ১৬ পিস যুক্ত কলা, গেটে মাটির চটিতে প্রদীপের জন্য কলা গাছ, নারিকেল ও বাহারি ফুলে সজ্জিত হয় মণ্ডপ আর মণ্ডপের চারপাশ।

পূজায় আতিথেতায় প্রস্তুত নারীরা গ্রামাঞ্চলের মানুষেরা মূলত আতিথেতায় বেশি প্রিয়, তাদের বাড়িতে অতিথির আনা গোনায় মন যেন আনন্দ ভরে যায়। আর ধর্মীয় উৎসবে তারা আর বেশি আতিথেয়তায় মনযোগী হয়ে পড়েন। তাই প্রতিটি গ্রামের মহিলারা আতিথেয়তার জন্য খই, মুড়ি, মুড়কি, দই নারিকেলের নাড়ু ও নারিকেলে সন্দেশ তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন।জেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, শরতের শিশিরভেজা সকালে কাশ আর শিউলির নৈবদ্যে, স্ব-পরিবারে কৈলাস থেকে মর্তে আসবেন দেবী দুর্গা।

সেই খুশির মুহূর্তকে আলিঙ্গন করতে কাজ প্রায়ই শেষ পর্যায়ে শহর ও গ্রামাঞ্চলের পূজা মণ্ডপগুলোতে। দুয়ারে কড়া নাড়ছে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম প্রধান ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা। তাইতো দেবী দুর্গার প্রতিমা তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন প্রতিমা তৈরির কারিগররা।ডিমলা উপজেলার শিক্ষকপাড়া গ্রামে ঘুরে দেখা যায়, বাড়ির মহিলাদের মধ্যে কেউ মুড়ি ভাজছে, কেউ মুড়কি, আর কেউ খই তৈরিতে পূজার দিন গুণছে। তৈরি শেষে অনেকে পাঠাবে বাবার বাড়ি, কেউ পাঠাবে মেয়ের বাড়ি।

পুরুষ মানুষেরা ব্যস্ত রয়েছে পূজা আয়োজনের আনন্দে। ডেঙ্গুর প্রভাব বেশি হওয়া মন্দিরের আশপাশ পরিষ্কারে লেগে পড়েছে অনেকে। যুবকরা পূজায় বিশিষ্ঠজনকে আমন্ত্রণের চিঠি বিলিতে দিশেহারা। আর মাস্টার বাড়ির উঠানে মন্দিরে মূর্তি তৈরিতে ব্যস্ত রয়েছে মালি (মৎশিল্পীরা)। মাটি, খড় আর পাটের রশিতে তৈরি শেষ মূর্তি, চলছে মূর্তিতে মালির রং তুলির বাহারি রংয়ের সাজ। প্রাণ ফিরে পাবে খড় ও কাঁদা মাটির মূর্তি। এ যেন এক জীবন্ত দেবী দুর্গা।

কথা হয় শিক্ষকপাড়া গ্রামের রতনা রানীর সাথে তিনি জানান, এক বছর পরে আমাদের মাঝে দুর্গাপূজা বিভিন্ন মণ্ডপে ঘুরবো, আনন্দ- উল্লাস করবো। পূজার আসরে বেশি ভাগ সময় পার করবো। তাই আগে থেকে সকল ধরণের কাজ গুছিয়ে নিচ্ছি। যাতে করে আনন্দ উল্লাসের কোনো ব্যত্যয় না ঘটে। ববিতা রানী নামে আরেকজনের সাথে কথা হয়, দেবীকে গ্রহণের জন্য আগে থেকেই বাড়ি-ঘর পরিষ্কার করছি। পূজার সময়ে যে অতিথি আসবে তাদের জন্য আগাম ব্যবস্থা করছি। যাতে করে কোনো ঝামেলায় পরতে না হয়।

টেপাখড়িবাড়ী ইউনিয়নের দেবমাল্লি সার্বজনীন দুর্গাপূজা কমিটির সভাপতি উত্তম চন্দ্র রায় বলেন, গত বছরের তুলনায় চলতি বছর বাজেট অনেক বাড়াতে হয়েছে। এ বছর প্রতিমা তৈরির খরচও অনেক বেশি। তাছাড়া নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস পত্রের দাম তো দ্বিগুণ। মন্দির ও দর্শনার্থীদের নিরাপত্তায় প্রশাসনের পক্ষ থেকে সিসি টিভি ক্যামেরার আওতায় রাখার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।ডিমলা উপজেলা মৃৎশিল্পী রবিন কুমার জানান, গত বছর ৬টি মণ্ডপের কাজ করেছিলাম। এবারে একটি বাদ দিয়েছি।

মণ্ডপ প্রতি চুক্তি রয়েছে ২০-২৫ হাজার টাকা। বাড়ি থেকে মণ্ডপে মূর্তি নিয়ে যায় ভক্তরা। তবে, একটি মন্দিরে গিয়ে মূর্তি তৈরি করে দেই। বিগত বছরগুলোয় জিনিসপত্রের দাম কম ছিল, এবারে বেড়েছে কিন্তু মন্দির কর্তৃপক্ষ তো সেভাবে মূল্যবৃদ্ধি করেনি। গতকাল শনিবার থেকে মূর্তি রং শুরু আর রং করলেই প্রাণ ফিরে পাবে মা দুর্গা।নীলফামারী জেলা পুলিশ সুপার গোলাম সবুর জানান, শারদীয় দুর্গাপূজাকে কেন্দ্র করে প্রতিটি মণ্ডপে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কড়া নজরদারী, গ্রাম পুলিশ ও আনসার বাহিনীর সদস্যরা সর্বদা থাকবেন।

৮৮৭টি মণ্ডপে সিসিটিভির ব্যবস্থা রয়েছে। কেউ কোনো ধরনের অপ্রতিকর ঘটনা ঘটাতে পারবে না। নীলফামারী জেলা প্রশাসক পঙ্কজ ঘোষ বলেন, শারদীয় দুর্গা উৎসব উপলক্ষে জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে পরিদর্শন, পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। এখন পর্যন্ত জেলা প্রশাসকের তহবিল হতে ৯০১ একটি মণ্ডপে ৫০০ কেজি চাল দেওয়া হয়েছে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here