কোরবানির ঈদকে ঘিরে টুং-টাং শব্দে মুখরিত মতলব উত্তরের কামার পাড়া

0
কোরবানির ঈদকে ঘিরে টুং-টাং শব্দে মুখরিত মতলব উত্তরের কামার পাড়া

প্রেসনিউজ২৪ডটকমঃ  খান মোহাম্মদ কামাল ঃ আগামীকাল বুধবার বাদ তার পরের দিন ২৯ জুন বৃহস্পতিবার কোরবানির ঈদ। ঈদ উপলক্ষে শেষ মুহুর্তে সবাই ছুটছেন কামারপাড়ায়। কিনছেন দা-ছুরি-বটিসহ আনুসাঙ্গিক জিসিনপত্র। কামারদের ফুসরত নেই দম ফেলার। কৃত্রিম বাতাসে জ্বলে উঠছে আগুন। সেই আগুনে তৈরি হচ্ছে চাপাতি। শান দেওয়া দা,বটি, ছুরি, চাকু সাজিয়ে রাখা হয়েছে দোকানে।

চারদিকে টুং-টাং-টিং-টাং শব্দে চলছে কোরবানি ঈদের পশু জবাইয়ের সরঞ্জাম তৈরি। আর পবিত্র ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার কামার পল্লিতে ব্যস্ততা বেড়েছে। উপজেলার সারা কামারপাড়ায় এখন এমনই ব্যস্ততা। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত চলছে নতুন-পুরাতন দা-বটি ছুরি, চাপাতি তৈরি বা শাণ দেয়ার কাজ। কুরবানির ঈদ উপলক্ষে মতলব উত্তরে কয়েক দিন ধরে তাদের এ ব্যস্ততা বেড়ে গেছে। প্রস্তÍুত করা হয়েছে কুরবানির হাতিয়ার সমূহ।

যারা পশু কুরবানি দেন তাদের মাংস প্রস্তুত করতে এসব দা-বটি ছুরি, চাপাতি প্রয়োজন । তাই অনেকে এ উপলক্ষে নতুন করে দা-বটি ছুরি, চাপাতি কিনছেন আবার কেউ কেউ পুরাতনগুলোতে শাণ দিয়ে নিচ্ছেন। ঈদ যতই ঘনিয়ে আসছে ততই বাড়ছে কামারদের ব্যস্ততা। বাড়তি কিছু রোজগারের জন্য বছরের এ সময়গুলোর প্রতীক্ষায় থাকেন কামারেরা দোকানগুলোতে এখন প্রতিক্ষণই চলছে ওই সব সামগ্রী আগুনের শিখায় তাপ দেওয়া, হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে তৈরি করে শান দেয়ার কাজ।

পুরাতন দা-বটি ছুরি, চাপাতি শান দেওয়ার পাশাপাশি বিক্রির জন্য এসব সামগ্রী তৈরি করে দোকানে সাজিয়ে রেখেছেন। এ প্রশ্নের জাবাবে তিনি বলেন, বটি আকার ভেদে শান দিতে নেন ৫০ টাকা থেকে ১০০ টাকা, আর বিক্রি করেন ৩৫০ টাকা। একইভাবে চাপাতি (কোপা) শান দিতে নেন ১০০ টাকা, বিক্রি করেন ৬০০ টাকা থেকে ৭০০ টাকা, ছোট ছুরি শানে ৪০ টাকা বিক্রি ১০০ টাকা, বড় ছুরি শানে ৭০ থেকে ১২০ টাকা ও বিক্রি ৭০০ থেকে ১২০০ টাকা পর্যন্ত। মতলব উত্তর উপজেলার ছেংগারচর বাজারের কামার বিপ্লব জানান, এ শিল্পের মূল উপাদান হলো কয়লা, কিন্তু কয়লা সংকট এ শিল্পের জন্য বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতায় নতুন করে কেউ এই পেশার সাথে জড়িত হতে চাচ্ছে না। তবে বছরের অন্যান্য সময় আমাদের কাজ না থাকলেও ঈদুল আজহায় বিক্রি ভালো হয়। গত কয়েকদিন যাবত কাজের চাপ কিছুটা বেড়েছে। অন্যান্য কোরবানির ঈদের চেয়ে এখনো কাজ কম জানিয়ে তিনি হতাশা ব্যক্ত করেন। প্রকাশ করে বলেন, দেখি সামনে দু’দিন দিন বাকি ি কাজ আরও বাড়বে। বেড়েছে কয়লা-লোহার দাম। সাথে বিক্রিতেও মন্দাভাব। তবুও, শেষ মুহূর্তে চেষ্টার কমতি নেই। আশা করছি দা-বটি-ছুড়ি বেঁচে কিছু পয়সা আসবে।

বাজারের আরেক কর্মকার সুমন বলেন,বছরের অন্যান্য সময় দিনে ৪শত-৫শত টাকা আয় হলেও এখন তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩-৪ হাজার টাকায়। তার মতে, বর্তমান সময়ে বাজারে বিভিন্ন কোম্পানির স্টিল জাতীয় জিনিষের ভিড়ে আমাদের লোহার তৈরি জিনিষের কদর কমে যাচ্ছে। ফলে বাধ্য হয়ে অনেকেই এ পেশা ছেড়ে অন্যত্র চলে যাচ্ছে। বালুরচর গ্রাম থেকে আসা ক্রেতা মোজাম্মেল হক প্রধান বলেন, কুরবানির ঈদে নিজেরাই পশু জবাই ও মাংস প্রস্তুত করি। যার কারণে দা-ছুরি-বটিসহ আনুসাঙ্গিক জিসিনপত্র প্রয়োজন হয়।

তাই পুরনো দা-ছুরি শান দেওয়ার জন্য আসা। আমি একটি বটি ৫০০ টাকায় কিনেছি,আমার মনে হয়েছে দামটা ১০০ টাকা বেশি হয়েছে। এদিকে ঈদ উপলক্ষে কামারের দোকানে বেশ ভিড় রয়েছে। শান দেওয়ার দামও তুলনামূলক বেশি। টানা ক্ষতির কারণে অনেকেই ছাড়ছেন পেশা। কেউ পৈত্রিক পেশা ধরে রাখার লড়াই করছেন। কামার শিল্প টিকিয়ে রাখতে সরকারি প্রণোদনা চেয়েছেন কামার শিল্পের সাথে জড়িতরা।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here