প্রেসনিউজ২৪ডটকমঃ নিজস্ব সংবদদাতা: বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটি। ১৯ সদস্য বিশিষ্ট এই কমিটির বেশ কয়েকটি পদ শূন্য। স্থায়ী কমিটি সক্রিয় করতে রয়েছে নেতাদের চাপ। কমিটিতে স্থান পেতে দৌড়ঝাঁপ করছেন এক ডজনের বেশি নেতা। তবে দলের দায়িত্বশীল নেতারা বিষয়টি নিয়ে মুখ খুলছেন না। জানা যায়, সবশেষ ২০১৬ সালের ১৯ মার্চ বিএনপির জাতীয় কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়। পরবর্তীসময়ে ঘোষণা করা হয় স্থায়ী কমিটির সদস্যদের তালিকা।
পদাধিকার বলে কমিটির সদস্য দলটির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তখন মোট ১৯টি পদের মধ্যে দুটি পদ শূন্য রাখা হয়। পরে এম তরিকুল ইসলাম, আ স ম হান্নান শাহ ও এম কে আনোয়ার মারা যান। তিনজন মারা গেলে পদ শূন্য হয় পাঁচটি। এরপর ১৯ জুন ২০১৯ বেগম সেলিমা রহমান ও ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকুকে স্থায়ী কমিটির সদস্য করা হয়। নতুন দুজন যুক্ত হওয়ায় দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য সংখ্যা দাঁড়ায় ১৪ জন।বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা ও আইনি জটিলতার কারণে রাজনীতিতে ফেরাটা অনিশ্চিত।
ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ও স্থায়ী কমিটির সদস্য তারেক রহমান লন্ডনে অবস্থান করছেন। সেখানে থেকেই ভার্চুয়ালি স্থায়ী কমিটির বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন। মুক্তি পেলেও সালাহউদ্দিন আহমেদ ভারতে। তবে তিনিও ভার্চুয়ালি বৈঠকে যোগ দিচ্ছেন বলে জানা যায়। ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া অসুস্থ। এছাড়া রাজনীতি থেকে অবসর নিয়েছেন লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান। যদিও তার পদত্যাগপত্র বিএনপির পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে গ্রহণ বা প্রত্যাখ্যান কোনোটিই করা হয়নি।সূত্র জানায়, স্থায়ী কমিটির এক বৈঠকে দলের জাতীয় কাউন্সিল নিয়ে আলোচনা হয়।
কমিটির একজন সিনিয়র সদস্য বিষয়টি বৈঠকে তোলেন। তবে অন্য সদস্যদের এ ব্যাপারে আগ্রহ না থাকায় এ নিয়ে বেশি আলোচনা হয়নি।বিএনপির স্থায়ী কমিটির সক্রিয় সদস্য হিসেবে যাদের দেখা যায় তাদের মধ্যে রয়েছেন ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, মির্জা আব্বাস, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু ও ড. আব্দুল মঈন খান। ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকারকে স্থায়ী কমিটির বৈঠক ছাড়া সেভাবে দেখতে পান না নেতাকর্মীরা।দলটির নেতারা চাইছেন, দূরদর্শী ও মাঠে থাকার মতো নেতারা স্থায়ী কমিটিতে আসুক।
সম্প্রতি বিএনপির কর্মসূচিতে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে দেখা যাচ্ছে বিএনপির উপদেষ্টা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান এবং যুগ্ম মহাসচিব পর্যায়ের কয়েকজন নেতাকে। এদের মধ্যে থেকেই স্থায়ী কমিটির শূন্যপদ পূরণ হবে বলে দলের মধ্যে আলোচনা রয়েছে।স্থায়ী কমিটিতে জিয়া পরিবারের সদস্য ও তারেক রহমানের সহধর্মিণী ডা. জোবায়দা রহমানের অন্তর্ভুক্তির দাবি রয়েছে বিভিন্ন পর্যায় থেকে। খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হওয়ায় ক্লিন ইমেজের ডা. জোবায়দা দলকে গোছাতে পারবেন বলে ধারণা অনেকের। তবে এটা সম্পূর্ণ তারেক রহমানের সিগন্যালের ওপর নির্ভর করবে।
সূত্রমতে, সম্প্রতি দলের কেন্দ্রীয় কর্মসূচিতে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালনে দেখা যাচ্ছে ভাইস চেয়ারম্যান মো. শাহজাহান, বরকতউল্লাহ বুলু, আব্দুল আউয়াল মিন্টু, শামসুজ্জামান দুদু, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আমানউল্লাহ আমান, মিজানুর রহমান মিনু, যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলালকে। সংস্কারপন্থি নেতাদের মধ্যে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকতউল্লাহ বুলু, বিএনপির মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক জহির উদ্দিন স্বপন। পেশাজীবীদের মধ্য থেকে অ্যাডভোকেট আহমেদ আজম খান, অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন, অধ্যাপক ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন ও অ্যাডভোকেট নিতাই রায় চৌধুরী।
আছেন মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ এবং ব্যারিস্টার মেজর (অব.) শাহজাহান ওমর।এছাড়া স্থায়ী কমিটির আলোচনায় রয়েছেন ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল নোমান, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী ও যুগ্ম মহাসচিব লায়ন আসলাম চৌধুরী। এর মধ্যে বেশ কয়েকজন নেতা স্থায়ী কমিটিতে জায়গা পেতে কৌশলী লবিং শুরু করছেন।দলে প্রচারণা রয়েছে এসব নেতার মধ্যে বরকতউল্লাহ বুলুর পক্ষে মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের সমর্থন রয়েছে। মো. শাহজাহানের পক্ষে রয়েছে চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া, মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সমর্থন।
সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলালের পক্ষে স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস এবং গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। নিতাই রায় চৌধুরীর পক্ষে রয়েছে গয়েশ্বর চন্দ্র রায় ও মির্জা আব্বাসের সমর্থন।আহমেদ আজম খান ও মো. শাহজাহানের পক্ষে চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া এবং ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সমর্থন রয়েছে। জহির উদ্দিন স্বপনের পক্ষে আছেন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। এ জেড এম জাহিদ হোসেনের পক্ষে মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।রুহুল কবির রিজভীর পক্ষে স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, মির্জা আব্বাস, নজরুল ইসলাম খান এবং ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সমর্থন রয়েছে।
আব্দুল আউয়াল মিন্টুর পক্ষে দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া এবং ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।সূত্র আরও জানায়, বিএনপিতে স্থায়ী কমিটি বরাবরই একটি আকর্ষণীয় ও মর্যাদাসম্পন্ন পদ। আজীবন বিএনপির রাজনীতি করা পোড় খাওয়া নেতাদের টার্গেট থাকে শেষ জীবনে হলেও স্থায়ী কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত হওয়া। দু-একটি ব্যতিক্রম বাদে এ ফোরামে সাংগঠনিকভাবে যোগ্য, পরীক্ষিত, ত্যাগী ও দলে তুলনামূলক গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিদেরই স্থান হয়। তাই প্রায় সব জ্যেষ্ঠ নেতার আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু স্থায়ী কমিটির সদস্য হওয়া।
বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট রফিক সিকদার বলেন, যাদের সততা প্রশ্নবিদ্ধ নয়, যাদের রাজনীতির ব্যাকগ্রাউন্ড রয়েছে, মাঠের সঙ্গে সম্পর্ক রয়েছে, ছাত্র রাজনীতি থেকে উঠে এসেছেন, মাঠের নেতাদের দরদ বুঝবেন, কদর করবেন এমন নেতারাই দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরামে জায়গা পাবেন বলে আমার বিশ্বাস।সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুস সালাম আজাদ বলেন, যারা তারেক রহমানের নেতৃত্বের প্রতি আস্থা রাখেন, যাদের সততা প্রশ্নবিদ্ধ নয়, মাঠের নেতাকর্মীদের সঙ্গে সম্পর্ক রাখেন, তৃণমূল নেতাকর্মীরা এমন নেতৃত্বকে দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরামে দেখতে চান।
যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, স্থায়ী কমিটির শূন্যপদ পূরণে আমি কোনো আলোচনা শুনিনি। তবে সামাজিকভাবে ও রাজনীতিতে যাদের গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে, সেসব ব্যক্তিত্ব স্থায়ী কমিটিতে ঠাঁই পাবেন বলে নেতাকর্মীরা আশা করেন।ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বলেন, যেহেতু সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম, তাই আন্দোলন-সংগ্রামসহ সার্বিকভাবে সবকিছু বিবেচনা করে যোগ্যরাই এখানে জায়গা পাবেন।
বিষয়টি নিয়ে কোনো মন্তব্য করতে চাননি স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। তবে স্থায়ী কমিটির সদস্য বেগম সেলিমা রহমান বলেন দেখুন যখন পূরণ হওয়ার তখন হবে, এই মুহূর্তে আলোচনা করছি না।