প্রেসনিউজ২৪ডটকমঃ সারাদেশে কনকনে শীতে দেশে ঠান্ডাজনিত রোগের প্রকোপ বাড়ছে। নবজাতক, শিশু ও বৃদ্ধরা ঠান্ডা-কাশি, নিউমোনিয়া, শ্বাস, জ্বর ও ভাইরাল ডায়রিয়ায় বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। তবে উত্তরাঞ্চলের মানুষই বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। রংপুর, রাজশাহী, দিনাজপুর, ফরিদপুরসহ বেশকিছু জেলায় রোগীর চাপ সামলাতে চিকিৎসকরা হিমশিম খাচ্ছে। কোনো কোনো হাসপাতালে রোগী ভর্তি হচ্ছে শয্যার চেয়ে দ্বিগুণ ও তিন গুণ। অনেক শিশু ঠান্ডার কারণে মারা যাচ্ছে।
বাংলাদেশ (ঢাকা) শিশু হাসপাতালেও কয়েক দিন ধরে ঠান্ডাজনিত রোগ নিয়ে আসা শিশুদের চাপ বেড়েছে। ওই হাসপাতালে দৈনিক জরুরি বিভাগে এক হাজার রোগী সেবা নিচ্ছে। যাদের ৮০ শতাংশই শীতজনিত রোগে আক্রান্ত। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, গত তিন সপ্তাহে সাড়ে ৩ লাখেরও বেশি মানুষ শীতজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। তার মধ্যে ঢাকা বিভাগেই ২ লাখ ৩৮ হাজার ২১৯ জন। তবে সরকারি হিসাবে ঢাকা বিভাগে কোনো মৃত্যু হয়নি।
দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রোগী চট্টগ্রাম বিভাগে প্রায় অর্ধলাখ আর সর্বোচ্চ মারা গেছে ৪৫ জন। তবে সিলেট বিভাগে সবচেয়ে কম রোগী ওই বিভাগে কারো মৃত্যু হয়নি।বর্তমানে শিশু হাসপাতালের ৫৬টি বিছানার সব রোগীতে পরিপূর্ণ। বক্ষব্যাধি, নেফ্রোলজি, গ্যাস্ট্রোলজি, হরমোনাল সমস্যাসহ বাচ্চাদের পাঁচ ধরনের রোগের সেবা দেয়া হয়। এবার শীত বাড়ায় ঠান্ডা-কাশি-নিউমোনিয়া রোগী বেশি ভর্তি হচ্ছে।অবশ্য রাজধানীর আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশের (আইসিডিডিআর,বি) কলেরা হাসপাতালে শীতজনিত রোগীর প্রভাব এখনো পড়েনি।
তবে ঢাকায় শীতর তীব্রতা বাড়ায় কয়েকদিনের মধ্যেই তার প্রভাব পড়তে পারে।সূত্র জানায়, রংপুর মেডিকেল কলেজ (রমেক) হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। বিশেষ করে শিশু ওয়ার্ডে ৩ গুণ রোগী ভর্তি হওয়ায় চিকিৎসা দিতে চিকিৎসকদের হিমশিম খেতে হচ্ছে। বাধ্য হয়ে অনেক শিশুকে হাসপাতালের মেঝে ও বারান্দায় রেখে চিকিৎসা দিতে হচ্ছে। ভর্তি হওয়া শিশুরা কোল্ড ডায়রিয়া, শ্বাসকষ্ট, সর্দি-জ্বর, কাশি, নিউমোনিয়াসহ শীতজনিত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত।এক হাজার শয্যার ওই হাসপাতালে বর্তমানে দুই হাজারের বেশি রোগীকে চিকিৎসা দিতে হচ্ছে। যাদের অধিকাংশ শীতজনিত রোগী।
তাছাড়া তীব্র শীতে রাজশাহী অঞ্চলে ঠান্ডাজনিত রোগীর সংখ্যা অন্তত ৬ থেকে ৮ গুণ বেড়েছে। রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা হু হু করে বেড়েই চলেছে। আগে ঠান্ডাজনিত ডায়রিয়া, নিউমোনিয়া, হাঁপানি, সর্দি-কাশিতে আক্রান্ত হয়ে প্রতিদিন ১০ থেকে ১২ জন রোগী ভর্তি হলেও এখন প্রতিদিন কমপক্ষে ৬০ থেকে ৮০ জন ভর্তি হচ্ছে।শুধু শিশু নয়, বিভিন্ন বয়সের মানুষই ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছে এবং বেড়েছে মৃত্যুর সংখ্যাও।
তাছাড়া দিনাজপুরেও শীতের পাশাপাশি বাড়ছে শীতজনিত রোগের প্রকোপ। তার মধ্যে অধিকাংশই শীতজনিত নিউমোনিয়া ও সর্দি-জ্বরে আক্রান্ত হচ্ছেএদিকে বিশেষজ্ঞ চিকিৎকরা শীতে ঠান্ডাজনিত রোগ থেকে বাঁচার প্রতিকার হিসেবে এ সময়ে শিশুদের ভালোভাবে যত্ন নেয়ার কথা বলেন। শিশুদের যাতে ঠান্ডা না লাগে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। শিশুদের গরম খাবার খাওয়াতে হবে। আর যদি শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা বৃদ্ধি পায় অবশ্যই হাসপাতালে নিয়ে আসতে হবে।
এ বিষয়ে ঢাকা শিশু হাসপাতালের পরিচালক ও শিশু বিশেষজ্ঞ জাহাঙ্গীর আলম জানান, শুধু নিউমোনিয়া আক্রান্ত হয়ে গত নভেম্বরে ৩০৯ ও ডিসেম্বরে ৪৩৩ জন রোগী এ হাসপাতালে ভর্তি হয়। আর জানুয়ারির ৫ দিনে ৮০ জন রোগী ভর্তি হয়েছে। ঋতু পরিবর্তনের কারণে শীতকালে ৮০ ভাগ শিশু ভাইরাসজনিত রোগের শিকার হয়। ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ রোগী ঢাকা ও আশপাশের এলাকার। তার বাইরে বিভিন্ন জেলা ও বিভাগীয় শহর থেকেও অসংখ্য শিশু ভর্তি হচ্ছে।